চীন কেন তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে দেরি করছে?
তালেবান ও চীন - ছবি সংগৃহীত
তালেবান সরকার গঠনের পর একমাত্র যে দেশটি খোলাখুলি অভিনন্দন জানিয়েছে, সেটি চীন। গত সপ্তাহে চীন আফগানিস্তানের জন্য তিন কোটি মার্কিন ডলারের জরুরি খাদ্য এবং ওষুধ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আফগানিস্তানে বিনিয়োগ নিয়ে দোহায় তালেবান প্রতিনিধিদের সাথে গত সপ্তাহে চীনাদের কথা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ তাই বলছেন যে তালেবান সরকারের প্রতি পাকিস্তান, চীন বা কাতারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি অনেকটাই এখন অপ্রাসঙ্গিক, কারণ সম্পর্ক শুরু হয়ে গেছে।
তবে কুয়ালালামপুরে চীনা রাজনীতির বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন যে তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রশ্নে চীন ধৈর্য ধরবে এবং জাতিসঙ্ঘের আওতায় একটি ঐক্যমত্যের সৃষ্টির চেষ্টা তারা হয়তো করতে পারে।
‘আমেরিকার পরাজয়ে চীন হয়তো খুশি, কিন্তু আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ভিন্ন একটি বিষয়,’ বলেন ড. আলী।
‘একটি যুদ্ধের মাধ্যমে তালেবান ক্ষমতা হয়তো নিয়েছে, কিন্তু তাদের সরকার কি পুরো আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে? তাদের জনসমর্থনের মাত্রা তো এখনো নিশ্চিত নয়। আফগানিস্তানের ইতিহাস চীনের জানা এবং চীনারা ইতিহাসকে গুরুত্ব দেয়। তারা তাড়াহুড়ো করবে না।’
স্বীকৃতি পেতে অধৈর্য তালেবান
তবে বৈধতা এবং আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য তালেবান উন্মুখ হয়ে পড়েছে। তারা মনে করছে, সরকার পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেশের, বিশেষ করে প্রতিবেশী কিছু দেশের স্বীকৃতি জরুরি।
‘রোববারও টেলিফোনে তালেবানের সিনিয়র মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদের সাথে আমার কথা হয়েছে। বৈধতা এবং স্বীকৃতির জন্য তালেবান উন্মুখ,’ বলেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইয়েদ নিজামী।
তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভী আমির খান মুত্ত্বাকি দু'দিন আগে আফগান কূটনীতিকদের বিদেশী মিশনগুলোতে কাজে যোগ দিতে বলেছেন, কিন্তু আফগান দূতাবাসগুলো এখন কার্যত অচল।
‘এমনকি লন্ডন এবং ওয়াশিংটনেও আফগান দূতাবাসে কোনো কূটনৈতিক তৎপরতা নেই। বলতে গেলে বন্ধ। ইসলামাবাদে দূতাবাস সচল। আবার তাজিকিস্তান এবং ইতালিতে আফগান রাষ্ট্রদূতরা তাদের ইচ্ছামতো তালেবান বিরোধীদের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। অরাজকতা চলছে,’ বলেন নিজামী।
তিনি আরো বলেন, মানবিক সাহায্যের আশ্বাস থাকলেও কাবুলের সরকারের হাতে নগদ টাকা নেই। বিদেশের সাথে ব্যাংকিং কাজ করছে না। অনেক সরকারি কর্মচারী কাজে ফিরলেও বেতন পাচ্ছেন না। কবে পাবেন, তা নিয়েও চরম অনিশ্চয়তা রয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের হিসাবে আফগানিস্তানের অর্ধেক মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের হুমকির মুখে রয়েছে। কারণ, আফগানিস্তান গত ২০ বছর ধরে আমেরিকা এবং পশ্চিমা যে সাহায্যের ওপর ভর করে ছিল, তা রাতারাতি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক মানুষের কাছে খাবার কেনার টাকাও নেই।
জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন সংস্থা বলছে, দ্রুত ত্রাণ এবং সাহায্য না গেলে ৯৭ শতাংশ আফগান দারিদ্র সীমার নিচে চলে যেতে পারে, যে হার এখন ৭২ শতাংশ।
সূত্র : বিবিসি