হৃদয়বিদারক বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী হাফেজ আমিন
মেজর সিনহা - ছবি : সংগৃহীত
চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা হত্যা মামলার চলমান সাক্ষ্য গ্রহণের তৃতীয় দিনে গতকাল জবানবন্দী দিয়েছেন ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী হাফেজ মোহাম্মদ আমিন। তার বাড়ি শামলাপুর চেকপোস্ট এলাকায় এবং তিনি স্থানীয় লামারবাজার জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন। জবানবন্দীতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে পড়ে গিয়ে যখন সিনহা ছটফট করছিলেন তখন ওসি প্রদীপ তাকে গালাগাল করে পা দিয়ে চেপে ধরেন এবং অপরাপর আসামিও এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন। এ সময় সিনহা পানি চাইলেও তাকে পানি দেননি কেউ।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনা তিনি কাছ থেকে দেখেছেন।’ কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেন হাফেজ মোহাম্মদ আমিন। তিনি এই মামলার ৮ নম্বর সাক্ষী। হাফেজ মোহাম্মদ আমিনের বাড়ি শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টের কাছে। তার পিতার নাম মৃত লাল মোহাম্মদ। রাষ্ট্রপক্ষে তার জবানবন্দী নেন পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলমসহ অন্য আইনজীবীরা।
হাফেজ আমিনের জবানবন্দী শেষে তাকে একে একে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী যথাক্রমের অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, অ্যাডভোকেট দিলীপ দাশ, অ্যাডভোকেট শামশুল আলম, অ্যাডভোকেট মমতাজ আহমদ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ, অ্যাডভোকেট এম এ বারী, অ্যাডভোকেট ওসমান সরওয়ার শাহীন প্রমুখ। দীর্ঘ জেরায় দিন পার হয়ে যায়। ফলে অপেক্ষমাণ সাক্ষী শওকত হোসেন ও সাইফুলের জবানবন্দী নেয়া হয়নি। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ জন আসামিকে যথারীতি আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এর আগে গত ২৫ আগস্ট থেকে পর পর তিন দিন মামলার বাদি শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্য গ্রহণ ও আসামিদের পক্ষে জেরা শেষ হয়। গত রোববার মোহাম্মদ আলীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা হয়। এ নিয়ে মোট পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন করা হলো।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যার পাঁচ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদি হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন র্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।