আফগান বিমানঘাঁটির দিকে দৃষ্টি চীনের, উদ্বেগ ভারতের
আফগান বিমানঘাঁটির দিকে দৃষ্টি চীনের, উদ্বেগ ভারতের - ছবি সংগৃহীত
তালেবান যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নেয়ার পর বাগরাম বিমানবাহিনী ঘাঁটিসহ দেশটির বিভিন্ন বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দিকে নজর দিয়েছে চীন। তবে ভারত মনে করছে, এটা তাদের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলছেন, এই উদ্যোগ ভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে দূরে রেখে এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ ধরে রাখতে চীনের প্রচেষ্টার অংশ হতে পারে।
আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুণায়ত বলেন, সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারের অধীনে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হবে চীন।
তিনি বলেন, "চীন মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করার পর সৃষ্ট শূন্যতা অর্থনৈতিকভাবে পূরণের চেষ্টা করছে এবং দেশটিকে নিজের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ (বিআরআই) প্রকল্পের অংশ করতে চাচ্ছে । বাগরাম বিমান ঘাঁটি পরিচালনার জন্য তালেবানের কাউকে প্রয়োজন হওয়ায় শিগগিরই এ ঘটনা ঘটবে।"
বাগরাম বিমানবন্দরটি দেশটির সবচেয়ে বড় এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বিমানবন্দর। মার্কিনিরা কাবুল বিমানবন্দরের পরিবর্তে শেষ দিন পর্যন্ত এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে আসছিল।
নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্বের অধীনে চীন ও তালেবান দুই দেশই সম্ভবত যৌথভাবে বাগরাম বিমানঘাঁটি পরিচালনা করবে। আফগানিস্তানে নিজের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কার্যকর করতে চীনের একটি নিরাপদ বিমান ঘাঁটি প্রয়োজন।
ভারতের বিরুদ্ধে চীনের পাকিস্তানকে সমর্থন করার ব্যাপারে ত্রিগুণায়ত বলেন, এই বাস্তবতা দীর্ঘদিনের, যা এখনো চলছে। বিতর্কিত জাইশ-এ-মোহাম্মেদ সন্ত্রাসী মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করতে ভারত চেষ্টা করলে চীন সবসময়ই ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে তাকে রক্ষা করে ।
তিনি বলেন, 'আমাদের চিন্তার কারণ চীন, চীনের হাতিয়ার পাকিস্তান নয়। তারা ভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে দূরে রাখতে ব্যবহার করছে পাকিস্তানকে।'
পশ্চিম এশিয়া বিশেষজ্ঞ কামার আগাও এ ব্যাপারে একমত হয়ে বলেন, চীন নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে আফগানিস্তানে বৃহত্তর ভূমিকা গ্রহণের চিন্তাভাবনা করছে এবং বিপুল বিনিয়োগের পকিল্পনার পাশাপাশি তারা আফগান সরকারকে দলীয়করণ মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
আগা বলেন, চীন বরাবরই পাকিস্তানকে অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। বর্তমানে আশঙ্কা হচ্ছে, দেশটি পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিনিধি যুদ্ধে লিপ্ত করতে বাধ্য করবে, যাতে তারা চীন সাগরের কাছাকাছি এবং আশেপাশের এলাকায় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি না হয়।
জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিক নিকি হ্যালি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের উপর নজর রাখতে হবে। কারণ তালেবান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি দখল করার পর চীন আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটি কব্জা করার চেষ্টা করতে পারে এবং ভারতের বিপক্ষে যাওয়ার জন্য শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে পাকিস্তানকে ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের চীনের উপর লক্ষ্য রাখা দরকার, কারণ আমি মনে করি চীন বাগরাম বিমান ঘাঁটির দিকে হাত বাড়াতে চলেছে। আমি মনে করি, তারা আফগানিস্তানের দিকেও হাত বাড়াচ্ছে এবং ভারতের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আঘাতর হানা জন্য পাকিস্তানকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। সুতরাং আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
হ্যালি আরো বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের জন্য ভারত, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো আঞ্চলিক মিত্রদের কাছে পৌঁছে তাদের রক্ষা করার আশ্বাস দেয়ার সময় এসেছে।
সূত্র : সিয়াসত