সৌদি-আমিরাত স্নায়ুযুদ্ধ শুরু!
সৌদি-আমিরাত স্নায়ুযুদ্ধ শুরু! - ছবি : সংগৃহীত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত সৌদি আরবের রাজধানীকে একটি বড় ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করার যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমানের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সৌদি সংবাদ চ্যানেলগুলোকে দুবাই থেকে রিয়াদে তাদের কার্যক্রম স্থানান্তর শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার একই গণমাধ্যম সংস্থার অধীনে পরিচালিত সৌদি আরবের দু’টি প্রধান সংবাদ মাধ্যম আল আরাবিয়া ও আল হাদাথের কর্মীদের তাদের প্রধান কার্যালয় বিভিন্ন বৈশ্বিক ও স্থানীয় গণমাধ্যম সংস্থার কার্যস্থল দুবাই মিডিয়া সিটি থেকে সরিয়ে রিয়াদে স্থানান্তর করতে বলা হয়। পর্যায়ক্রমে ছয় মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বৃহত্তম সম্প্রচারকারী সংস্থা সৌদি মালিকানাধীন এমবিসিও বলেছে, গত বছর রিয়াদে নতুন সদর দফতর স্থাপনের যে পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছিল, তা ঠিকঠাক মত এগুচ্ছে। কিন্তু সংস্থাটি 'শক্তিশালী আঞ্চলিক উপস্থিতি' বজায় রাখবে, এমনটাও যোগ করা হয়েছে।
অন্যান্য সংবাদ চ্যানেলগুলোও একই পথ অনুসরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের শুরু থেকে, যখন সৌদি সরকার এবং রাষ্ট্র-সমর্থিত প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যপ্রাচ্যে যে সব বিদেশী কোম্পানির প্রধান কার্যালয়গুলো এই অঞ্চলের অন্য কোনো দেশে অবস্থিত তাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করা বন্ধ করার পর থেকে।
সোমবারের এই নির্দেশনা ইউএইর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রিয়াদকে একটি প্রধান ব্যবসায়িক কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য বিন সালমানের বৃহত্তর কর্মকাণ্ডের অংশবিশেষ । বিদেশী কোম্পানিগুলোকে এ দেশে ব্যবসা করতে হলে রিয়াদে তাদের আঞ্চলিক সদর দফতর প্রতিষ্ঠার করতে হবে, এমন চরম শর্ত দেয়ার পাশাপাশি আবু ধাবির স্বার্থ ক্ষুন্ন করে বাণিজ্য বিধি সংশোধন করেছে সৌদি আরব।
দুবাই মিডিয়া সিটির জন্য গণমাধ্যম সংস্থাগুলো দেশত্যাগ এক বড় ধাক্কা হবে। $ ৭০০,০০০ খরচে শহরের সবচেয়ে বড় স্টুডিও ভাড়া নেওয়ার কথা আল আরাবিয়ার । এছাড়াও সৌদি চ্যানেলগুলোতে কর্মরত কর্মীরা দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সঙ্ঘের প্রতিনিধিত্ব করে, যার অর্থ আবাসন খাতের মতো অন্যান্য খাতও এই পদক্ষেপ দ্বারা প্রভাবিত হবে।
রিয়াদ ও আবু ধাবির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া কী হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিছু দিন আগে পর্যন্ত দুই দেশই বেশির ভাগ আঞ্চলিক বিষয়ে একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছিল। তবে ২০১৯ সালে শুরু ইরান-সমর্থিত হাউছিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সৌদি আরবকে একা রেখে ইউএই ইয়েমেন থেকে তার বেশিরভাগ সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিলে সম্পর্কে ফাটল দেখা দিতে শুরু করে। একই সাথে আমিরাত ইয়েমেনে সৌদি-সমর্থিত সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারকে সমর্থন করতে দেখা গেছে।
কাতারের ওপর বাণিজ্যিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টার গতিতে আবু ধাবি সন্তুষ্ট নয় এবং এটি দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনার অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে ইসরাইলের সাথে ইউএইর সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের গতিতে রিয়াদও সমানভাবে হতাশ।
গত সপ্তাহে সৌদি আরব ও কাতার উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার প্রয়াসে একটি সমন্বয় পরিষদ প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা এই অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের একটি লক্ষণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর