কাস্পিয়ান সাগরে ইরান ও রাশিয়া : সত্যিকারের বন্ধু?
কাস্পিয়ান সাগরে ইরান ও রাশিয়া : সত্যিকারের বন্ধু? - ছবি : সংগৃহীত
কাস্পিয়ান সাগরে রাশিয়া ও ইরান বহু ধরনের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কার্যকলাপে লিপ্ত। এটি দুই দেশের আঞ্চলিক স্বার্থ ও টানাপোড়েনের জটিলতার বিষয়টি প্রমাণ করে। ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে কাস্পিয়ান সাগর দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় সমুদ্রসীমার তুলনায় কখনো অগ্রাধিকার পায়নি। তা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০১৮ সালের ‘আকতাউ চুক্তি’ (কাজাখস্তানের আকতাউ শহরে স্বাক্ষরিত) কাস্পিয়ান অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণের ব্যাপারে ইরানের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায়। এরপর থেকে দেশটি কাস্পিয়ান তীরবর্তী দেশগুলো, বিশেষ করে শক্তিশালী রাশিয়া ও উচ্চাভিলাষী আজারবাইজানের প্রতি নীতি নির্ধারণের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়। ১৯২০-এর দশক থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত কাস্পিয়ান সাগর রুশ-ইরানের যৌথ শরিকে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কাজাখস্তান, আজারবাইজান ও তুর্কমেনিস্তান সমুদ্রের ন্যূনতম ২০ শতাংশের মালিকানা লাভে জোরাজুরি শুরু করে। অন্য দিকে সোভিয়েত-ইরান বন্দোবস্ত সোভিয়েত-পরবর্তী যুগেও যে বলবৎ রয়েছে সে নীতিতে মস্কো এবং তেহরান অটল রয়েছে।
আক্তাউ চুক্তি কাস্পিয়ান-উপকূলবর্তী রাজ্যের মধ্যে সীমানা নির্ধারণজনিত সমস্যার সমাধান করেছে। চুক্তিতে পৌঁছতে ২২ বছর, ৫২টি ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং পাঁচটি ‘কাস্পিয়ান সম্মেলন’-এর প্রয়োজন হয়েছে। এটি প্রতিটি দেশকে তার উপকূল থেকে সাগরের অভ্যন্তরে ১৫ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত পানিতে সার্বভৌমত্ব এবং অতিরিক্ত ১০ নটিক্যাল মাইল স্বতন্ত্র বাণিজ্যিক মৎসারোহণ অঞ্চল হিসেবে দেয়া হয়, এর বাইরে সমুদ্র বাকি অংশ পাঁচটি দেশের সাধারণ ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত। স্বাক্ষরকারী দেশগুলো অবশ্য কাস্পিয়ান সমুদ্রতলের ব্যাপক খনিজ সম্পদের বিষয়ে কোনো ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি। আরো আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য কাস্পিয়ান-তীরবর্তী দেশগুলো এমন একটি বিশেষ আইন তৈরি করেছে এই জলাধারকে হ্রদ বা সমুদ্র কোনো কিছু হিসেবেই সংজ্ঞায়িত করে না। ইরান ও রাশিয়া জোর দিয়ে যে সাগরের তলদেশ দিয়ে যেকোনো ধরনের জ্বালানি পাইপলাইন নির্মাণের জন্য পাঁচটি দেশেরই সম্মতি প্রয়োজন হবে, এমনকি যদি কেবল মাত্র দু’টি দেশ পাইপলাইন তৈরিতে সম্মত হয় তবুও।
আক্তাউ চুক্তির এই বিধান রাশিয়া ও ইরানকে আজারবাইজান, কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তানকে ইউরোপে তেল ও গ্যাস পরিবহনে বাধা দেয়ার ক্ষমতা দেয়। অর্থাৎ রাশিয়া ও ইরানের হাতে ইউরোপীয় জ্বালানি বাজারের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে। অন্য দিকে ইরান বিতর্কিত আরজ-আলোভ-শার্গ হাইড্রোকার্বন জ্বালানিক্ষেত্রের জন্য আজারবাইজানের গৃহীত পরিকল্পনায় বাধা দেয়ার সুযোগ পাবে।
কাস্পিয়ানের ২৫ নটিক্যাল মাইল আঞ্চলিক এবং মৎসারোহনের সীমানার বাইরের পানিসীমা শরিকানার ক্ষেত্রে অনুপকূলবর্তী সামরিক উপস্থিতির উপর আক্তাউ চুক্তির নিষেধাজ্ঞা থেকেও ইরান ও রাশিয়া উপকৃত হয়েছিল। কাস্পিয়ান অঞ্চলে পশ্চিমা শক্তিকে অনুপ্রবেশ করা থেকে বিরত রাখা দীর্ঘদিন ধরে রুশ ও ইরানি উদ্বেগের বিষয় এবং সম্ভবত কাস্পিয়ান অঞ্চলে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যৌথ স্বার্থ। তার বহরের আকার সীমাবদ্ধ না করে আক্তাউ চুক্তি এই ঞ্চলে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাশিয়া এবং কাস্পিয়ান সাগরের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌবহরধারী ইরানকে আধিপত্যের সুযোগ দিয়েছে। রাশিয়া ও ইরান কাস্পিয়ান তাদের নৌবহর ব্যবহার এর আগেও ব্যবহার করেছে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে রাশিয়ার কাস্পিয়ান নৌবহর প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরবর্তী সিরিয়ায় একটি নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল। কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের উচ্চাভিলাষকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ২০২১ সালে মস্কো নিজের কাস্পিয়ান ফ্লোটিলার একটি অংশ ভলগা-দোন নৌপথ দিয়ে পশ্চিমে পাঠিয়েছিল। অন্য দিকে আজারবাইজানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ইরান তার নৌবাহিনীকে ব্যবহার করেছে। ২০০১ সালে জুলাইয়ে ইরানের নৌবাহিনী একটি আজারবাইজানি চুক্তিধীনে একটি বিপি জরিপ জাহাজের মুখোমুখি হয়েছিল। এই বছরের ৩০ জুন আজারবাইজানি রণকৌশলের প্রতিক্রিয়ায় দেশটি সম্প্রতি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা শুরু করেছে। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, আজারবাইজান নৌবাহিনী কাস্পিয়ান সাগরে কাল্পনিক শত্রুকে (সম্ভবত ইরান) আক্রমণের জন্য মহড়া দেয়। ইরান দ্রুত পাল্টা জবাব দেয় এবং আজারবাইজানের মহড়ার মাত্র কয়েক দিন পরেই আক্তাউ চুক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। দেশটি নিজস্ব দাবিকৃত সমুদ্রের ২০ ভাগ এলাকায় মহড়া শুরু করে।
বিশেষত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাস্পিয়ান সাগরে রাশিয়া ও ইরানের একটি গতিশীল সামরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ২০১৫ সালে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ইরানের সাথে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। দুই দেশ যৌথ মহড়া ও সামরিক প্রশিক্ষণ, সন্ত্রাস-বিরোধী ও সংঘাতবিরোধী অভিযান এবং তথ্য আদান-প্রদানে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। ২০০২ সালের পর শোইগু ইরান সফরকারী রাশিয়ার সর্বোচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। চুক্তিটি ইরানিরা 'মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিক্রিয়া' বলে প্রশংসা করে। ২০১৯ সালে ইরান ও রাশিয়া কাস্পিয়ান সাগরে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়। ২০২০ সালে ইরান কাস্পিয়ানে রাশিয়ান কাভকাজ -২০২০ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আন্তর্জাতিক সেনা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে রাশিয়া, আজারবাইজান ও কাজাখস্তান থেকে দলগুলো সি-কাপ প্রতিযোগিতার ষষ্ঠ সংস্করণে অংশ নিতে ইরানের কাস্পিয়ান বন্দর বান্দার-এ-আনজালিতে গমন করে।
সমালোচকরা মনে করেন, কাস্পিয়ানে রাশিয়ার স্বার্থ সবসময় ইরানের স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরবর্তী কয়েক বছর আজারবাইজান, কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তান যে ১৯৯১ আলমা-আতা ঘোষণায় সাক্ষরকারী, দেশ দুটি সে কথা পুনরাবৃত্তি করেছিল। ওই ঘোষণায় 'সাবেক ইউএসএসআর কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা এবং চুক্তি থেকে উদ্ভূত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাগুলো সম্পন্ন করার' নিশ্চয়তা দেয়া হয়। তা সত্ত্বেও মস্কো পরে এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করে অন্যান্য দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে। প্রকৃতপক্ষে আক্তাউ চুক্তির কয়েক বছর আগেই রাশিয়া কাস্পিয়ান বিভাজন করার প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০০৩ সালে রাশিয়া, আজারবাইজান ও কাজাখস্তানের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে কাজাখস্তানকে সমুদ্রতলের ২৭ ভাগ, রাশিয়া ১৯ ভাগ ও আজারবাইজানকে ১৮ ভাগ হিস্যা দেয়ার পাশাপাশি সমুদ্রজল যৌথ ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়। বলা বাহুল্য, ইরানের নীতি ছিল ভিন্ন। দেশটি সাগরজল সমান বিভাজনের উপর জোর দিয়েছিল। নিজ দেশের অভ্যন্তরে মারাত্মক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়ে আঞ্চলিকভাবে বিচ্ছিন্ন ইরানই পাঁচটি দেশের মধ্যে একমাত্র রাষ্ট্র যে রাশিয়ার আহ্বান সত্ত্বেও এখনো আক্তাউ চুক্তি অনুমোদন করেনি।
আক্তাউ একবার কার্যকর হলে চুক্তিটি ইরানকে অন্যদের চেয়ে কম সুবিধা দেবে। কাস্পিয়ানে দেশটির সংক্ষিপ্ত উপকূলরেখা এবং সেখানে যাচাইকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেল সম্পদের পরিমাণ নগণ্য হওয়ায় কারণে ইরানের অবস্থান বোধগম্য। দেশটির সংসদ সদস্যসহ ইরানি নাগরিকরা রুহানি সরকারকে চাপে পড়ে রাশিয়াকে বাড়তি ছাড় দেয়ার অভিযোগ এনে তীব্র সমালোচনা করেছিল। অনেকে আক্তাউ চুক্তিকে ১৮২৮ তুর্কমেনচায় চুক্তির সাথে তুলনা করেন। রুশ-পারস্য যুদ্ধে অপমানজনক পরাজয়ের পর এই চুক্তি অনুসারে ইরানকে বিবাদমান দক্ষিণ ককেশাসের একটি বড় অংশ রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। আক্তাউ চুক্তির সময়কালের কারণে মূলত ইরান সরকার দেশের ভেতরে জনরোষের আগুনে পুড়েছিল । অনেকে বিশ্বাস করে, ইরানকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সৃষ্ট ব্যাপক চাপের মুখে দেশটির দুর্বল অবস্থানকে কাজে লাগিয়েছে রাশিয়া। কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আটকা পড়ে ইরান নিজস্ব কাস্পিয়ান সীমার অভ্যন্তরে সমুদ্র তলদেশের হাইড্রোকার্বন খনিজ সম্পদ উত্তলনের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল এবং প্রযুক্তির অভাবে ভুগছে। কাস্পিয়ান তীরবর্তী দেশগুলো, বিশেষ করে রাশিয়ার সাথে বিভেদ ইরানকে আরও বিচ্ছিন্ন করতে পারে। যদিও ওপেকের মাধ্যমে ইরান এবং রাশিয়ার মধ্যে কিছু সহযোগিতার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু পণ্য ও সেবার বিনিময়ে রাশিয়ার সঙ্গে তেল বিনিময় করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর ইরানের যে আরো উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ছিল তা ইতিমধ্যেই নিরর্থক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তেহরান ও মস্কোর মধ্যে পশ্চিমা শক্তিকে কাস্পিয়ান সাগরের বাইরে রাখার লক্ষ্য ঐক্যমত থাকলেও, একজোট হওয়ার কোনো চিন্তা তাদের মাথায় নেই। কারণ কাস্পিয়ান নিয়ে দুই দেশেরই নিজস্ব নীতি রয়েছে। রাশিয়া একমাত্র কাস্পিয়ান দেশ যেখানে ফ্রিগেট-শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ ও উচ্চতর বিমানশক্তি রয়েছে। সোভিয়েত-পরবর্তী কাস্পিয়ান পানিসীমায় ইরান দ্বিতীয় শক্তিশালী দেশ। কিন্তু দেশটির পুরনো এবং ক্রমশ অচলায়তন নৌবহরের কারণে ইরান এখন কাস্পিয়ান তীরবর্তী অন্যান্য দেশের বিশেষ করে আজারবাইজানের কাছে দ্রুত নিজের অবস্থান হারাচ্ছে। রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে ইরান কাস্পিয়ান অঞ্চলে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে দক্ষিণ সাগর থেকে ভলগা-দোন নৌপথ দিয়ে কোনো অঞ্চলে কোনো জাহাজ পাঠাতে পারছে না। এদিকে আজারবাইজান তুর্কি ও ইসরাইলি জাহাজ এবং যন্ত্রপাতি দিয়ে নিজের নৌবহরকে শক্তিশালী করেছে। ২০২১ সালের হিসাবে কাস্পিয়ান সাগরে আজারবাইজানের ৪৪টি জাহাজ রয়েছে, যার অধিকাংশই ক্ষুদ্রায়তনের কিন্তু ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত।
কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, কাস্পিয়ানে ইরানের প্রতি রাশিয়ার বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি কোনো ব্যতিক্রম নয়, বরং তা ইরানের প্রতি রাশিয়ার সামগ্রিক পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে দেখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ সহযোগিতা এবং যৌথ স্বার্থ সত্ত্বেও রাশিয়া ইরানে, বিশেষ করে হাইড্রোকার্বন খাতে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পশ্চিমা বিনিয়োগ দেখতে চায় না, কারণ তার ফলে রাশিয়ার সাথে ইরানের প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে। ২০২১ সালের এপ্রিলে ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফের ফাঁস হওয়া একটি অডিও টেপ রাশিয়া-ইরান সম্পর্কের নেপথ্য পরিস্থিতি একনজরে দেখা যায়। জারিফের মতে, ইরান ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে বাধা সৃষ্টির জন্য রাশিয়া 'তার সমস্ত শক্তি প্রয়োগ' করেছে, ইরানের পরমাণু চুক্তিকে 'বানচাল’ করার চেষ্টা করছে। জারিফের টেপ থেকেও জানা যায়, ভ্লাদিমির পুতিন মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি (এবং একইসাথে ইরান)-কে সিরিয়ার যুদ্ধে আরো বেশি জড়িত হতে রাজি করান, যদিও সিরিয়ায় ইরানের অভিযান ইরানের চেয়ে রাশিয়ার স্বার্থই বেশি করে উপকৃত হয়েছে। সিরিয়ার যুদ্ধের দীর্ঘায়িত হলে রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ দেখা যায়, যার ফলে ২০১৫ সালে সিরিয়ায় রাশিয়ার সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের পর ইরান আসাদের মিত্রদের মধ্যে তার দৃঢ় অবস্থান রাশিয়ার কাছে হারিয়ে ফেলেছিল। ইরান-রাশিয়া সম্পর্কের ক্ষয়িষ্ণুতা অন্যতম সাম্প্রতিক উদাহরণ দেখা যায় সোচিতে। সিরীয় যুদ্ধের শান্তি আলোচনায় শুরু থেকে ত্রিপক্ষীয় কাঠামো থাকা সত্ত্বেও ইদলিবের পরিস্থিতি নিয়ে সোচিতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় আঙ্কারা ও মস্কো ইরানকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। রাশিয়ার জন্য আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে ইরানকে না জড়ানোর প্রচেষ্টা এটাই প্রথম নয়।
২০২০ সালের নাগোরনো-কারাবাখ যুদ্ধে যদিও যুদ্ধের উভয় পক্ষই ইরানের প্রতিবেশী, তবু শান্তি প্রচেষ্টার সময় রাশিয়া ইরানকে পিছনে ঠেলে দিয়ে তার পরিবর্তে আঙ্কারার সঙ্গে সহযোগিতার সুযোগ বেছে নেয়। বাইরে থেকে মনে হচ্ছে ইরান তার 'পূর্ব মুখী নজর নীতি'র (প্রধানত রাশিয়া এবং চীনকে বিবেচনা করে) প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার এবং ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর, যা বাইডেন প্রশাসন এখন পর্যন্ত বজায় রেখেছে। যাই হোক, সিরিয়ায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি, ইরানের পরমাণু বিতর্ক এবং কাস্পিয়ান সাগরের পর কেউ কেউ বিশ্বাস করা শুরু করেছেন, মস্কো ইরানকে কৌশলগত অংশীদার নয়, বরং 'খরচযোগ্য সহায়ক' হিসেবে বিবেচনা করে।
সূত্র : ইয়েনি সাফাক