যুদ্ধ-পরবর্তী অবরোধ শিথিল করে গাজায় নির্মাণপণ্য প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরাইল
নির্মাণপণ্য প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরাইল - ছবি আরব নিউজ
গাজা উপত্যকায় মঙ্গলবার কয়েক ডজন ট্রাকভর্তি নির্মাণ সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরাইল। ফলে গত মে মাসে ১১ দিনের সংঘর্ষের পর থেকে হামাসশাসিত ভূখণ্ডে যে কঠোর অবরোধ আরোপ করা ছিল তা শিথিল হলো।
এক উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে এই পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়া হলো। এ মুহূর্তে হামাসের কর্মীরা ইসরায়েলে আগুনের বেলুন ছুড়েছে, সীমান্ত জুড়ে বেশ কয়েক জায়গায় দাবানল ছড়িয়ে দিয়েছে এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিচ্ছিন্নকারী বেষ্টনিতে বিক্ষোভ করেছে, যা মাঝে মাঝে সহিংস আকার ধারণ করছে।
২১ আগস্টে এক বিক্ষোভকারীর হাতে গুলিবিদ্ধ এক ইসরাইলি সৈনিক সোমবার গুলির ক্ষতের কারণে মারা যায়। ইসরাইলিদের গুলিতে ১২ বছর বয়সী এক বালক এবং হামাস সদস্যসহ দুই ফিলিস্তিনিও নিহত হয়েছে।
এত সব উত্তেজনা সত্ত্বেও এই সপ্তাহে ইসরাইলি কর্মকর্তারা নির্মাণ সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে যা গাজার বেসরকারি খাতে খুবই প্রয়োজনীয়। এই উদ্যোগ পরিস্থিতি শান্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
‘কেরেম শালোম’ পণ্য পারাপারের ফিলিস্তিনি অংশের পরিচালক বাসাম গাবিন জানান, মঙ্গলবার গাজায় ৩০০ ট্রাক সিমেন্ট, ১২০ ট্রাক নুড়ি এবং ১৫ ট্রাক ইস্পাত প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, নির্মাণসামগ্রীগুলো সোমবার থেকে প্রবেশ শুরু করে এবং পারাপার কেন্দ্রটি সহিংসতার আগের মত প্রায় একই ভাবে কাজ করা শুরু করেছে।
নির্মাণসামগ্রী গাজায় প্রবেশ করেছে, নীতিমালা নির্দেশনা অনুযায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা এ কথা নিশ্চিত করেছেন। কোনো সুনির্দিষ্ট বিবরণ না দিতে পারলেও তিনি বলেন, পূর্বে ঘোষিত সরকারি সিদ্ধান্তের অধীনে এই আমদানি এসেছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ফিলিস্তিনের বেসামরিক বিষয়গুলো জন্য দায়ী ইসরাইলি প্রতিরক্ষা সংস্থা কোগাট বলেছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে তারা গাজায় আরো পণ্য প্রবেশের অনুমতি দেয়ার পরিকল্পনা করছে। গত সপ্তাহে সংস্থাটি বলেছে তারা 'গাজা উপত্যকায় আন্তর্জাতিক বেসামরিক প্রকল্পগুলির জন্য পণ্য ও সরঞ্জাম প্রবেশ প্রসারিত করবে।'
২০০৭ সালে ফিলিস্তিনের নির্বাচনে জয়ের এক বছর পর হামাস এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ দখল করার পর থেকে মিসরের সহায়তায় ইসরাইল গাজার উপর কঠোর অবরোধ বজায় রেখেছে। ইসরাইল বলে, ইসরাইলের ধ্বংসের শপথ নেওয়া ইসলামি গোষ্ঠী হামাসকে অস্ত্রশস্ত্রে পুনর্সজ্জিত করা থেকে বিরত রাখার জন্য এই অবরোধ প্রয়োজন। অন্য দিকে সমালোচকেরা বলেন, এই অবরোধ সমষ্টিগত শাস্তির শামিল। অবরোধ গাজার ভেতরে এবং বাইরে পণ্য ও মানুষের চলাফেরাকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে এবং গাজার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
২০০৮ সাল থেকে ইসরাইল এবং হামাস চারবার যুদ্ধ করেছে। মে মাসে সর্বশেষ সংঘর্ষের পর থেকে ইসরাইল অবরোধ আরও কঠোর করেছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, ফলে গৃহনির্মাণ সামগ্রী খুবই প্রয়োজন।
মঙ্গলবার দিনশেষে হামাসকর্মীরা অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানাতে ইসরাইলি সীমান্তে আরেকটি নৈশ-বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, ইসরাইলের গুলিতে তিনজন ফিলিস্তিনি সামান্য আহত হয়েছে।
মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু ইসরাইল দুই মৃত ইসরাইলি সৈন্যের দেহাবশেষ ফেরত এবং হামাসের হাতে বন্দী দুই ইসরাইলি নাগরিকের মুক্তির দাবি করে আসছে।
অবরোধ অবসান চেষ্টায় ব্যস্ত ইসরাইলি মানবাধিকার গোষ্ঠী গিশা মঙ্গলবারের পদক্ষেপকে 'গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অপর্যাপ্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছে, ‘বিশেষ করে গাজায় ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা, এবং উপত্যাকার বাসিন্দাদের প্রতি ইসরাইলের আইনি এবং নৈতিক বাধ্যবাধকতার কথা বিবেচনা করলে।'
'গাজায় উদ্ভূত পরিস্থিতি কেবলমাত্র সামান্য মানবিক সংকট নয় যে ক্ষুদ্র মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে তার সমাধান করা যায়, গিশা বলেছে। 'এই শোচনীয় পরিস্থিতির সমাধানের জন্য যেকোনো অর্থপূর্ণ প্রচেষ্টার জন্য একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পরিচালনার মাধ্যমে উপত্যাকাকে আরো বিস্তৃতভাবে অবমুক্ত করা প্রয়োজন।'
সূত্র : আরব নিউজ