লেবানন ভেঙে পড়লে কে লাভবান হবে : হিজবুল্লাহ না ইসরাইল?

মাসুম খলিলী | Aug 30, 2021 08:01 am
লেবানন ভেঙে পড়লে কে লাভবান হবে

লেবানন ভেঙে পড়লে কে লাভবান হবে - ছবি : সংগৃহীত

 

লেবানন রাষ্ট্রের পতন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি সার্বিক বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। এ ক্ষেত্রে চারটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা দিতে পারে যার মধ্যে রয়েছে- প্রথমত, যখন কোনো দেশ ভেঙে যায়, তখন উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তাশূন্যতা দেখা দেয়। লেবানন ভেঙে গেলে সেখানে চরমপন্থার পুনরুত্থান ঘটতে পারে। বিশেষ করে দরিদ্র, অনুন্নত এবং চরমপন্থা প্রবণ উত্তর লেবাননে, ত্রিপোলি এবং আক্কার মতো এলাকায় এটি ঘটতে পারে। এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া হিজবুল্লাহ সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় পতনের আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে করা হয়। গোষ্ঠীর ক্ষমতার আধিপত্য রয়েছে এবং নিজস্ব নিরাপত্তা অবকাঠামো ও সামাজিক কল্যাণ নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করার ক্ষমতা রয়েছে। হিজবুল্লাহ ইতোমধ্যেই নিজের সম্প্রদায়কে পুরোপুরি ভেঙে পড়ার খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষায় সম্ভাব্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে। গত এপ্রিলে হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত দোকানগুলোতে নিজস্ব সমর্থকদের ব্যবহারের জন্য রেশন কার্ড তৈরি করে দেয়। কিন্তু এর ফলে অন্যরা সঙ্কটে পড়ে যাবে। এতে অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য ভেঙে পড়বে।

তৃতীয়ত, রাষ্ট্রের পতন একটি বড় বাস্তচ্যুতির সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে। আনুমানিক ১৭ লাখ সিরীয় শরণার্থীসহ সব মিলিয়ে লেবানন বিশ্বে মাথাপিছু সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। সিরিয়ার শরণার্থীরা ইতোমধ্যেই লেবাননে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। লেবাননে সঙ্কট যত গভীর হচ্ছে, লেবাননের হোস্ট এবং সিরীয় শরণার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। সিরিয়ার শরণার্থীরা ক্রমবর্ধমান ‘বলির পাঁঠা’ এবং লেবাননে থাকতে অনিরাপদ বোধ করতে পারে। উপরন্তু, লেবাননের একটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যা মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং আরো বেশি সংখ্যক লেবাননী সাইপ্রাসে বিপজ্জনক নৌকা ভ্রমণের চেষ্টা করছে। এটি সার্বিকভাবে ইউরোপমুখী প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে।

চতুর্থত, লেবাননে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা এই অঞ্চলে ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। ইসরাইলি কর্মকর্তারা সম্প্রতি লেবাননের ইসরাইলে বিশৃঙ্খলার সম্ভাব্য ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যদিও এ সঙ্কটের জন্য অনেকে দেশটিকে দায়ী করে। লেবাননের সঙ্কট সিরিয়ার অর্থনৈতিক মন্দার একটি প্রধান চালিকাশক্তি, যা ইতোমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক অবস্থাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। লেবাননে রাষ্ট্রীয় পতন উগ্রপন্থী নেটওয়ার্ককে সহজতর করতে পারে।

উদ্যোগ নিতে হবে ওআইসিকে
লেবাননে স্থিতি ও শান্তি ফেরাতে ওআইসিকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। লেবানন ভেঙে পড়লে তা থেকে লাভ তুলবে ইসরাইল। ইসরাইল নিজের চারপাশে কোনো শক্তিশালী দেশ রাখতে চায় না। আশির দশকে ইনোন পরিকল্পনা নেয়ার পর থেকে একে একে শক্তিশালী রাষ্ট্র- ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনকে ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। সুদানকে ভাঙার পেছনে ভূমিকা রেখেছে দেশটি। এখন লেবাননকে ব্যর্থরাষ্ট্র হতে দিলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে তার নিরাপত্তা আশ্রয়ে টেনে নেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বহুদূর এগিয়ে যাবে। ফলে লেবাননকে ব্যর্থরাষ্ট্র হওয়া থেকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিতে হবে ওআইসিকে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us