মেসি-রোনালদোর দলবদল : শক্তিবৃদ্ধি না স্রেফ বিজ্ঞাপন?
মেসি-রোনালদো - ছবি : সংগৃহীত
সাম্প্রতিক কালের তো বটেই সম্ভবত ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর এক ট্রান্সফার উইন্ডোর সাক্ষী থাকছেন ফুটবল সমর্থকরা। একই মরশুমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির দলবদল, তাও আবার চূড়ান্ত নাটকীয় প্রেক্ষাপটে। আদপে কোনো ফুটবলপ্রেমী স্বপ্নেও কি এমনটা ভাবতে পেরেছিলেন?
তবে খেলার জগতে অসম্ভবকে সম্ভব করার লক্ষ্যেই তো সকলে সর্বদা তৎপর। মাত্র মাসখানেক আগে যা কল্পনাতীত ছিল, আজ তাই বাস্তব। মেসি-রোনালদো, বর্তমান ফুটবল চলচ্চিত্রের দুই সেরা শিল্পীই মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে বদলে ফেলেছেন নিজেদের ঠিকানা। একজন যখন অচেনা পরিসরে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় যোগ দিয়েছেন প্যারিস সাঁ-জাঁতে, তখন আরেকজন নিজের পুরনো আধিপত্য পুনঃস্থাপন করার লক্ষ্যে ফিরেছেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে।
অনুরাগীদের চরমতম উৎসাহ, উদ্দীপনার পাশপাশি বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার দুই মেগাস্টারের দলে থাকার ফলে মাঠে বাইরের সুবিধা তো রয়েছেই। তবে খেলার মাঠে আদপে কতটা কার্যকরী ও তাৎপর্যপূর্ণ এই দুই তারকাকে দলে নেয়া? তিরিশোর্ধ্ব দুই ফুটবলারকে, তারা যত বড় মাপের ফুটবলারই হন না কেন, দলের কত দিন এবং কতটা দিতে পারবেন, সেই বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাহলে কি মেসি-রোনালদোকে শুধুই দলের ‘মার্কেট ভ্যালু’ বাড়ানোর জন্য নেয়া? সহজ উত্তর, না।
গত মরশুমে দলগতভাবে ক্লাব পর্যায়ে দুই মহারথীর তেমন সাফল্য না এলেও ব্যক্তিগতভাবে কিন্তু দারুণ সফল দুজনেই। ৩৬ বছর বয়সী রোনালদো গত মরশুমে ক্লাব ও ইউরোতে দেশের হয়ে মোট ৪৮টি ম্যাচে ৪১টি গোল করেছেন। এই বয়সে এসেও তার ক্ষিপ্রতা যেকোনো তরুণ ফুটবলারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। রেড ডেভিলসদের হয়ে বাঁ-দিকের উইংয়ে মার্কাস রাশফোর্ড চোট পাওয়ায় নিয়মিত খেলার কোনো ফুটবলার নেই।
নিজের পুরনো ইউনাইটেড দিনগুলোর মতো সেখানে আরামসে খেলতে পারেন রোনালদো। এডিনসন কাভানি প্রধান স্ট্রাইকার হিসেবে মাঠে নামলেও সমস্যা নেই। এছাড়াও ম্যানেজার ওলে গানার সোল্কজায়েরকে যুগ্ম স্ট্রাইকারে খেলার সুযোগ বাড়তি বিকল্পও প্রদান করেন রোনালদো। এছাড়া রোনালদোর জয়ের মানসিকতা বিগত বেশ কয়েক বছরে খেতাবহীন ইউনাইটেডকে সাহায্যই করবে। সুতরাং, পর্তুগিজ মহাতারকার দলে যোগ দেয়ায় রেড ডেভিলসের শক্তি নিঃসন্দেহে বেড়েছে।
অপরদিক, নিজেদের ঘরোয়া লিগে দাপট দেখালেও পিএসজির পাখির চোখ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাব। মেসি-নেইমারের যুগলবন্দি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তার আন্দাজ সকলেরই আছে। গত মরশুমে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল ম্যাচের উদাহরণ দিয়েই মেসি আসায় পিএসজি দলের কি সুবিধা হবে বিষয়টা বোঝা যাক।
কিলিয়ান এমবাপেহীন পিএসজিকে সিটির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় লেগে এক সময় ছন্নছাড়াই দেখায়। নেইমারকে বল বাড়ানোর জন্য কেউ না থাকায় বারংবার তাকে মাঝমাঠেরও নিচে নেমে এসে বল জেতার চেষ্টা করতে দেখা যায়। মরশুম শেষে এমবাপে না থাকলেও তাদের দলে একটা মেসি থাকায় বল বাড়ানোর লোকের কোনো অভাব খাতায় কলমে অন্তত হওয়ার কথা নয়।
উপরন্তু, ফুটবলীয় ভাষায় মেজালা বা ফ্রি-ফুটবলারের ভূমিকায় খেলার পাশপাশি মেসি ফলস নাইন হিসাবে বাড়তি বিকল্প প্রদান করেন। জমাট রক্ষণ ভাঙতে মেসির জুড়ি মেলা ভার। গত মরশুমে বার্সেলোনার পাশপাশি কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার হয়ে খেলে মোট ৫৪ ম্যাচে ৪২টি গোল করেন তিনি। অফ ফর্মের মাউরো ইকার্দি ও কিলিয়ান এমবাপের সম্ভাব্য দল ছাড়ার পরেও তাই গোল করার সম্পূর্ণ দায়ভার একা নেইমারের কাঁধে এসে পড়বে না।
সুতরাং, নিঃসংকোচে বলাই যায় দুই মেগাতারকা মাঠের বাইরের পাশপাশি মাঠেও নিজেদের দলকে বাড়তি শক্তি প্রদান। কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসেও তাই মেসি-রোনালদো, দু'জনে এখনো যেকোনো দলের কাছে অমূল্য সম্পদ।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস