আফগানিস্তানের ইসলামিক স্টেট কতটা বিপজ্জনক?

অন্য এক দিগন্ত | Aug 28, 2021 08:21 am
আফগানিস্তানের ইসলামিক স্টেট

আফগানিস্তানের ইসলামিক স্টেট - ছবি : সংগৃহীত

 

কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে বৃহস্পতিবারের মারাত্মক আত্মঘাতী হামলার জন্য আমেরিকানরা ইসলামিক স্টেটকে দায়ী করছে। ছয় বছর আগে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ইসলামিক স্টেট একত্রিত হয় এবং দ্রুত বিশ্বব্যাপী আরো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসের হুমকিতে পরিণত হয়েছে।

বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক বাহিনীর লক্ষ্যবস্তু হওয়া সত্ত্বেও, ইসলামিক স্টেট খোরাসান নামে পরিচিত গোষ্ঠীটি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য ন্যাটো অংশীদারদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার এবং তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার কারণে আরো হামলা চালাচ্ছে।

ইসলামিক স্টেট গ্রুপের হামলার হুমকির কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের জন্য মঙ্গলবারের সময়সীমাতে অটল রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক ম্যাককেঞ্জি পেন্টাগনের এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যে কর্মকর্তারা মনে করেন বৃহস্পতিবারের হামলাটি চালিয়েছে আইএস যোদ্ধারা। একজন বোমাবাজ যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদস্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিমানবন্দরের গেটের বাইরে আফগান জনতার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। এ দলটি প্রাণঘাতী আক্রমণের রেকর্ড তৈরি করেছে।

ইসলামিক স্টেট খোরাসান কি?

ইসলামিক স্টেটের মূল যোদ্ধারা সিরিয়া ও ইরাকজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর কয়েক মাসের মধ্যে তাদের মধ্য এশিয়ার সহযোগীদের আবির্ভাব ঘটে।২০১৪ সালের গ্রীষ্মে একটি স্ব-রচিত খিলাফত বা ইসলামী সাম্রাজ্য তৈরি করে। সিরিযা ও ইরাকে এই কথিত খিলাফতের অবসানের লক্ষ্যে জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাহিনী পরবর্তী পাঁচ বছর ধরে লড়াই করে।

আফগানিস্তানের এই সহযোগী তাদের নাম খোরাসান প্রদেশ থেকে নেয়। এটি এমন একটি অঞ্চল যা মধ্যযুগে আফগানিস্তান, ইরান এবং মধ্য এশিয়ার অনেক অংশ জুড়ে ছিল। দলটি আইএসকে (ISK) বা আইসিস-কে (ISIS-K) নামেও পরিচিত।

ইসলামিক স্টেট খোরাসানের যোদ্ধারা কারা ?

সামরিক অভিযানের পর তাদের নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার ফলে আফগানিস্তানের সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েক শ পাকিস্তানি তালেবান যোদ্ধা। এই পাকিস্তানি তালেবান যোদ্ধারা এ গোষ্ঠীটি শুরু করে। অন্যান্য সমমনা উগ্রপন্থীরা সেখানে তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল, যার মধ্যে অসন্তুষ্ট আফগান তালেবান যোদ্ধারাও ছিল। তারা অসন্তুষ্ট ছিল- তালেবানের অতিমাত্রায় মধ্যপন্থী এবং শান্তিপূর্ণ পন্থার বিষয়টি নিয়ে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তালেবান যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শান্তি আলোচনা চালিয়েছে, তখন এই অসন্তুষ্ট তালেবান গোষ্ঠী ক্রমশ চরমপন্থী আইএস-এর দলে ভিড়েছে, যার সংখ্যা এখন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের বেশির ভাগই হতাশ হয়েছিল যে তালেবান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার চেষ্টা করছে এমন সময়ে যখন তারা মনে করেছিল যে আন্দোলনটি সামরিক জয়ের পথে রয়েছে।

দলটি প্রতিবেশী দেশ উজবেকিস্তানের ইসলামী আন্দোলনের বেশ কিছু ক্যাডারও আকৃষ্ট করে; ইরানের একমাত্র সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশের যোদ্ধারা এবং চীনের উত্তর -পূর্ব থেকে উইঘুরদের নিয়ে গঠিত তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির সদস্যরাও এই দলে ভিড়ে যায়।অনেকেই খেলাফতের মাধ্যমে ইসলামি বিশ্বকে একত্রিত করার ইসলামিক স্টেটের সহিংস এবং উগ্রবাদী আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয় , যেটি কখনই তালিবানের লক্ষ্য ছিল না।

কী কারণে তারা একটি প্রধান হুমকি?

তালেবান তাদের লড়াই আফগানিস্তানে সীমাবদ্ধ রাখলেও, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের আইএস দলটি অমুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জিহাদের জন্য আইএস-এর আহ্বানে সাড়া দেয়।

সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গণনা মতে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে আইএস যোদ্ধারা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সংখ্যালঘু শিয়া মুসলমানসহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে বহুবার হামলা চালিয়েছে, সেইসাথে আফগান, পাকিস্তানি ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর সঙ্গে কয়েক শ’ বার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যদিও গোষ্ঠীটি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিতে হামলা চালায়নি, তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মনে করে যে এই দলটি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্রদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী হুমকি।

তালেবানের সাথে তাদের ভূমিকা কী?

তারা শত্রু। যদিও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে আল-কায়েদার যোদ্ধারা তালেবানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রয়েছে, তবে তালেবান আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বড় ধরণের সমন্বিত আক্রমণ চালিয়েছে। আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ থেকে আইএসকে উত্খাত করার জন্য তালেবান বিদ্রোহীরা কখনো কখনো যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আফগান সরকারী বাহিনীর সাথে যোগ দিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন তালেবানের সাথে ২০২০ সালের প্রত্যাহার চুক্তি করেছিল অংশত এই আশায় যে তারা আইএস সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগ দিবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ঐ গোষ্ঠীকে আমেরিকার জন্য প্রকৃত হুমকি হিসেবে দেখেছিল।

এখন ঝুঁকি কিসের?

ওয়েস্ট পয়েন্টের সন্ত্রাসবিরোধী কেন্দ্রে আমিরা জাদুন ও অ্যান্ড্রু মাইনস-এর প্রতিবেদনে জানানো হয় যে ইসলামিক স্টেটের দিকে নজর রাখা ও তাদের উপর আঘাত হানার জন্য আফগানিস্তানের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদল, বিমান এবং সশস্ত্র ড্রোন মোতায়েন থাকার পরেও, আইএস উগ্রবাদীদের হাজার হাজার প্রাণহানি সত্ত্বেও, তারা আক্রমণ চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তানে স্থলভিত্তিক আক্রমণের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করছে। সেইসাথে ইসলামিক স্টেট গ্রুপ এবং তাদের আক্রমণের পরিকল্পনা চিহ্নিত করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। বাইডেন কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী যেসব সন্ত্রাসী হুমকির মোকাবেলা করছে আইএস তার মধ্যে একটি মাত্র। তারা জোর দিয়ে বলছেন যে তারা উপসাগরীয় রাজ্যগুলিতে অবস্থিত, বিমান বাহক, বা আরো দূরবর্তী স্থানে তথাকথিত ওভার-দি-হরাইজন সামরিক ও গোয়েন্দা সম্পদ দিয়ে এটি পরিচালনা করতে পারেন।

সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us