১৫০০ ডলারে আফগানিস্তান থেকে তুরস্কে পাচার!
১৫০০ ডলারে আফগানিস্তান থেকে তুরস্কে পাচার! - ছবি সংগৃহীত
সীমান্ত যত দিন থাকবে, তত দিন সীমান্ত দিয়ে মানুষপাচারের ব্যবসা চলবে। বেশ জোরের সাথেই বললেন ৩২ বছরের বাভের। দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের কাজে যুক্ত তিনি। নিজের কাজ নিয়ে গর্বও আছে তার। মনে করেন, বেআইনি এই কাজের মাধ্যমেই শরণার্থীদের উপকার করছেন তিনি। নিরাপদ ভবিষ্যতের রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছেন।
ডিডাব্লিউকে প্রাথমিকভাবে বাভের জানিয়েছিলেন, দেখা করে পাচারের কাহিনী বলবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি জানান, দেখা করা সম্ভব নয়, যা কথা হবে ফোনে। তা-ও হোয়াটসঅ্যাপ কলে। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পরে সীমান্তে নিরাপত্তা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। কল ট্র্যাক করে পুলিশ যেকোনো সময় তার কাছে পৌঁছে যেতে পারেও আশঙ্কা রয়েছে। ফলে বেশিক্ষণ কথা বলতেও রাজি হননি বাভের। তবে অল্প সময়েই যা বলছেন, সে কাহিনী সাংঘাতিক।
কিভাবে পাচার হয়
প্রাথমিকভাবে মানবপাচারের রাস্তা বলতে রাজি হননি বাভের। কেবল জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান, ইরান হয়ে তুরস্কে পৌঁছে দেওয়া হয়। রাস্তা দুর্গম। বহু পাচারকারী এই পুরো রাস্তায় অংশ নেয়। আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত একজনের দায়িত্ব থাকে। প্রত্যেক সীমান্তে এরপর পাচারকারী বদলাতে থাকে। হাত বদল হতে হতে শরণার্থীরা তুরস্কে পৌঁছান। বহু জায়গায় সীমান্ত পুলিশের সাথে পাচারকারীরা সমঝোতা করে রেখেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান ও তুরস্ক দুই সীমান্তেই কড়াকড়ি অনেক গুণ বেড়ে গেছে।
পাচারের রাস্তা
প্রথমে না বললেও পরে আফগানিস্তান থেকে তুরস্ক পর্যন্ত একটি সম্ভাব্য রাস্তা জানিয়েছেন বাভের। যদিও তার ভয়, পুলিশ ওই রাস্তার সন্ধান পেলে তাদের কাজ আরো কঠিন হয়ে যাবে।
প্রথম পর্যায় : অন্তত ৩০-৪০ জন না হলে বাভেররা পাচারের কাজ শুরু করেন না। প্রথমে তারা কাবুল থেকে পাকিস্তানের বালুচিস্তান সীমান্তে চলে যান। বাভের জানিয়েছেন, কাবুল থেকে সরাসরি ইরান সীমান্তে পৌঁছানোও সম্ভব। কিন্তু ওই অঞ্চলে কড়াকড়ি খুব বেশি। সে জন্যই তারা বালুচিস্তানের রাস্তা ধরেন। বালুচিস্তানে পৌঁছানোর পর পাচারকারীর হাত বদল হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়: বালুচিস্তানে দুই তিনজন পাচারকারী অংশ নেন। কারণ দীর্ঘ পথ যেতে হয় ইরান সীমান্ত পর্যন্ত। প্রায় তিন-চার দিনের রাস্তা। ইরান সীমান্তে জিরো পয়েন্টে পৌঁছে দেওয়া হয় শরণার্থীদের। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে শরণার্থীরা সীমান্ত পার করেন। অন্যদিকে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন পাচারকারীরা। শরণার্থীদের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় তুরস্কের সীমান্ত। এরপরই সবচেয়ে কঠিন সীমান্তটি পার হতে হয়। তুরস্কের পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ঢুকতে হয় ওই দেশে।
পাচারের খরচ
বাভের জানিয়েছেন, কাবুল থেকে একজন আফগান শরণার্থীকে তুরস্ক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৫০০ ডলার খরচ হয়। কিন্তু তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর ওই খরচ এখন অনেকটাই বেড়ে গেছে। পুরো টাকা ভাগ করে দেয়া হয় সমস্ত পাচারকারীর মধ্যে। মূলত হাওয়ালার মাধ্যমেই টাকার লেনদেন হয়।
সূত্র : ডয়চে ভেলে