তালেবানবিরোধী ফ্রন্টের পক্ষে কি লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব?
তালেবানবিরোধী ফ্রন্টের পক্ষে কি লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব? - ছবি সংগৃহীত
প্রায় পুরো আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও পাঞ্জশিরে প্রতিরোধের ডাক দেয়া হয়েছে। তালেবান আশা করছে, এই প্রতিরোধ তারা শান্তিপূর্ণভাবেই অবসান ঘটাতে পারবে। দেশটির অন্যান্য অংশের মতো পাঞ্জশির উপত্যকাও তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ইতোমধ্যেই পরলোকগত মুজাহিদ কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদ তালেবানের হাতে উপত্যকাটি তুলে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তবে 'আফগান জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট' নামে পরিচিত এ গোষ্ঠীটি তালেবানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় এসেছে।
ফরেন পলিসির মতে কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, আফগানদের একটি প্রজন্ম পুরোপুরি বেড়ে উঠেছে স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাঝে, যা তাদের পূর্বপুরুষদেরও প্রয়োজন ছিল।
আর এই নতুন প্রজন্ম হয়তো তালেবান এই নতুন শাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে।
ক্ষমতাবন্টন
তবে তালেবানের বিরুদ্ধে শক্ত চ্যালেঞ্জ গড়া কঠিনই হবে। তালেবান যদি অন্য প্রভাবশালী আফগান নেতৃত্ববৃন্দ যেমন সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও নির্বাসিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির মিত্র আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সাথে ক্ষমতাবন্টন বিষয়ে একটি গ্রহনযোগ্য চুক্তিতে পৌঁছতে পারে তাহলে তালেবানবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বড় ধরনের বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, যদি তালেবান ক্ষমতা পোক্ত করে ফেলে এবং পূর্ববর্তী সরকারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ না নেয় তাহলে তারা পশ্চিমা সাহায্য লাভ করবে।
ফরেন পলিসির মতে যেকোনো সহিংসতা মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে এবং আফগান নিরীহ জনগণকেই দুই পক্ষের লড়াইয়ের বলি হতে হবে।
এতদসত্ত্বেও পত্রিকাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকার অস্ত্র ও লজিস্টিক সাপোর্ট ছাড়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নতুন রিক্রুট সংগ্রহ করে তালেবানবিরোধী লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
তাদের সাহায্য প্রয়োজন
ওয়াশিংটন পোস্টে আহমদ মাসুদের ফরেন পলিসিতে প্রকাশিত লেখা থেকে একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, 'আমরা বুঝতে পারছি যে আমাদের সামরিক ও লজিস্টিক (পরিবহন, চিকিৎসা) সক্ষমতা যথেষ্ট নয় এবং অচিরেই তা ফুরিয়ে যাবে যদি পশ্চিমা বন্ধুরা আমাদের কাছে যথাযথভাবে সাহায্য পৌঁছাতে না পারে।'
তালেবানের কাবুল অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পালিয়ে যাওয়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ নিজেকে সাংবিধানিকভাবে বৈধ প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষণা করেছেন। আর তার বন্ধুরা আশা করছে যে অজ্ঞাত স্থানে থাকা সালেহ পাঞ্জশিরে পাল্টা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবেন।
পাঞ্জশির ও বদখশান
ওয়াশিংটনভিত্তিক গণতন্ত্র রক্ষা সংস্থার সিনিয়র ফেলো বিল রোজিওকে উদ্ধৃতি করে পত্রিকাটি লিখেছে, পাঞ্জশির ও বদখশান প্রদেশ দুটি ঐতিহাসিকভাবেই তালেবানবিরোধী শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আর যদি আমরুল্লাহ সালেহ পাঞ্জশিরে তার কর্তৃত্ব মজবুত করে বহির্বিশ্বের সাপ্লাই লাইন তৈরির জন্য বদখশান প্রদেশ পুরোটা বা কিয়দংশও দখল করতে পারে তাহলে সেক্ষেত্রে তাদের পক্ষে দীর্ঘদিন লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে কে তাদের সাহায্য করবে সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।
আমেরিকান কংগ্রেসের একাধিক সদস্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে আহমদ মাসুদকে সাহায্য দেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে।
অবশ্য ফরেন পলিসি মনে করছে, তালেবানের হামলার মুখে কয়েক সপ্তাহের মাঝেই পরাভূত হওয়া আফগান সেনাবাহিনীকে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেয়ার পর নতুন করে আবার সহায়তা দিবে কিনা সেটা স্পষ্ট নয়।
দক্ষিণাঞ্চলে তালিবানের রয়েছে মজবুত অবস্থান
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, আকস্মিক হামলার পর তালেবান বিপুল পরিমাণ আমেরিকান অস্ত্র-শস্ত্রের ভাণ্ডার হস্তগত করেছে।এতে ৪০টি বিমানের পাশাপাশি দুই হাজারের বেশি হামভি যানও রয়েছে।
মোট কথা আহমাদ মাসুদের ঘাঁটিতে তালেবান আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত বাহিনীকে প্রেরণ করছে।পত্রিকাটির মতে আমেরিকার এই অস্ত্রভাণ্ডার তালেবানকে যেকোনো বিদ্রোহ দমনে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক ইব্রাহিম বায়েস মনে করেন, উত্তরাঞ্চলে তালেবানের মজবুত অবস্থান রয়েছে। যদিও নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা কাবুল সর্বশেষ দখল করেছে।তাই তালেবানের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করার মতো সক্ষমতা বিদ্রোহীদের নেই।
আলজাজিরা থেকে অনুদিত