গল্পগুলো কাল্পনিক, তবে...

আফফান উসামা | Aug 23, 2021 03:40 pm
গল্পগুলো কাল্পনিক, তবে...

গল্পগুলো কাল্পনিক, তবে... - ছবি সংগৃহীত

 

ক্রিকেট- মাত্র তিন অক্ষরের একটা ছোট্ট শব্দ। কিন্তু চোখ মেলে উপমহাদেশের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এর সত্যিকার মর্মার্থ। পাক-ভারত দূরে রাখলাম, বড় কোনো সাফল্য না পাওয়া শুধুই বাঙালির কথা ধরলাম। ক্রিকেট এই দেশের মানুষের কতটা ভালোবাসার তাই বলে-কয়ে বোঝানোর সাধ্যি কার? বলা চলে ক্রিকেট বাঙালির নেশা, ক্রিকেট বাঙালির দিশা। ক্রিকেটেই খাওয়া, ক্রিকেটেই ঘুম। ক্রিকেটেই তৃপ্তি, ক্রিকেটেই সুখ, ক্রিকেটেই দুরূহ সব স্বপ্ন! এই যেমন—

▪️রোড এক্সিডেন্ট করে বাবা ঘরে পড়ে আছেন বছরখানেক হলো। এক স্কুলে পিয়নের চাকরি ছিল তার। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় করে হলেও কোনো রকমে স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে চলে যেত সময় আর সংসার। তবে সময়ের বিবর্তনে ছেলের হাতেই সংসারের হাল। বাবার ওষুধ, ছোট বোনের লেখাপড়ার খরচ আর পরিবারের দুমুঠো অন্ন যোগাতে গায়ের রক্ত ঘামের জলে মিশিয়ে সদ্য কৈশোর পেরোনো আসাদ রাস্তায় রাস্তায় কাপড় ঘুরে কাপড় ফেরি করে ফেরে। তবুও সবার মুখে হাসি দেখে নিজের ব্যথা ভুলে থাকে দিনের পর দিনে।

কিন্তু আজ আসাদের মন খারাপ। একটু বেশিই খারাপ। আসলে বন্ধুরা তার মন খারাপ করে দিয়েছে। না... না... ঝগড়া হয়নি, মন খারাপ অন্য একটা কারণে। ওর বন্ধুরা আজ সবাই মিলে ঢাকা যাচ্ছে, কিন্তু সে আটকে গেছে জীবনের নির্মম বাস্তবতার কাছে। বন্ধুরা শুধুই ঘুরে বেড়াবে জন্য ঢাকার ট্রেনে উঠেনি, উঠেছে আগামীকাল বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ম্যাচটা দেখবে বলে। তারও খুব ইচ্ছে করছে বন্ধুদের সাথে গ্যালারিতে বসে উচ্চস্বরে বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্লোগান গর্জে উঠতে। কিন্তু হায়, বন্ধুরা যখন কাল মিরপুরে গলা ফাটাবে, তখন তাকে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ‘...এই কাপড় রাখবেন,কাপড়' বলে চেঁচাতে হবে। এদিকে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িও কিছু টাকা পাঠাতে হবে!

▪️নাসির সাহেব : হ্যালো... রফিক (রিকশাচালক)। কাল সকাল সকাল আমারে একটু স্টেশনে দিয়ে আসতে পারবা?
রফিক : মাফ করবেন স্যার। আমি তো আইতে পারতাম না, অহন এলাকাত নাই। আমি সেলিমরে কইয়া দেই, হেতে নিয়ে লইয়া যাবনে।

গতকাল রাতে নাসির সাহেব আর রিকশাচালক রফিকের মাঝে এভাবেই কথা হচ্ছিল৷ নাসির সাহেব ভেবেছিলেন রফিক হয়তো কোনো কাজে এলাকার বাইরে গেছে। কিন্তু একটু আগে যখন সাকিব আল হাসান ছক্কা হাঁকানোর ফলে গ্যালারিতে চিৎকার শুরু হলো, তখন কি ভেবে পাশে তাকাতেই দেখতে পেলেন তার থেকে একটুখানি দূরে দাঁড়িয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে সাকিব আল হাসানের ছক্কা উদযাপন করছে রফিক। দূর রফিকের এমন পাগলামি দেখে নিজের অজান্তেই আনমনে মৃদু হাসি খেলে গেল নাসির সাহেবের ঠোঁটে।

▪️বাসের হেলপার যাত্রীদের থেকে ভাড়া তুলতে শুরু করেছে। তা দেখেই সাব্বির ভয়ে ভয়ে আনমনে চুপসে গেছে। দাঁড়িয়ে ভাবছে আর প্রার্থনা করছে, আল্লাহ আর যাই হোক বাস থেকে যেন নামিয়ে না দেয়। তবে যে সব আশাই মাটিচাপা পড়ে যাবে। এদিকে খুব একটা সময়ও নেই। এমনেতেই জ্যামের শহর, তারপরও যেতে হবে অনেকটা পথ।

নগরীর এক বস্তিতে থাকে সাব্বির। দুই ক্লাস পড়েছে, তারপর মা মারা যাওয়ায় আর পড়া হয়নি। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে তার দিকে আর নজর দেয় না বললেই চলে। ফুটপাতে ঘুরে ঘুরে ফুটফরমাশ খেটে অল্প কিছু টাকা যোগাড় করেছে সে। একজনের কাছে শুনেছে আজ বাংলাদেশের খেলা আছে, স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখতে হলে ১৮০ টাকা লাগবে জেনেছে। এর আগে সে কখনো স্টেডিয়ামে খেলা দেখেনি, সুবাদে আজ খুব ইচ্ছে হয়েছে৷ পকেটে থাকা টাকাগুলো গুণে গুণে দেখে টিকেটের খরচ থেকে ১৫ টাকা কম আছে। এক পরিচিত ভাইয়ের কাছ থেকে ২০ টাকা ধার নিয়ে স্টেডিয়ামগামী এই বাসে উঠে বসেছে সে। যদিও তার কাছে ভাড়ার টাকা নেই, তবুও সাব্বিরের ভাবনা চেষ্টা করে দেখি।

ভাড়ার টাকা না থাকায় ভয়ে ভয়ে যখন কাঁপছে সে, তখনই হেলপারের কন্ঠ, এই ছোকড়া ভাড়া দে। পাঁচ টাকার কয়েনটা যখন হেলপারের হাতে দিলো, সাথে সাথেই তার চিৎকার ভেসে এলো। ২০ টাকার ভাড়া মাত্র ৫ টাকা? যা নাম বাস থেকে। চেচামেচি শুনে সামনে থেকে ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে, ঘটনা শুনে ড্রাইভার সাব্বিরকে জিজ্ঞেস করলো কত দূর যাবে? উত্তরে যখন বলা হলো মিরপুর স্টেডিয়াম। মুচকি হেসে হেলপারকে ড্রাইবারের আদেশ, ওর পাঁচ টাকা ফেরত দে, ওর ভাড়া লাগবে না।

যদিও গল্পগুলো কাল্পনিক, কিন্তু আমাদের ক্রিকেট হয়তো কখনো না কখনো এমন ঘটনার জন্ম দিতেই পারে৷ কারণ আমাদের রক্তে ক্রিকেট, আমাদের আবেগে ক্রিকেট, আমাদের ভালোবাসায় ক্রিকেট।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us