এ সপ্তাহে তালেবান আরো অনেকটা নিজেদের খুলে ধরেছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ
তালেবান - ছবি সংগৃহীত
এ সপ্তাহে তালেবান আরো অনেকটা নিজেদের খুলে ধরেছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রয়টারসের এক্সক্লুসিভ নিউজে দেখা যাচ্ছে তাদেরই একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়াহিদুল্লাহ হাসেমি- ‘ক্ষমতাকাঠামো’ নিয়ে কথা তুলেছেন। সুপ্রিম নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নাম প্রকাশ্যে এনেছেন। তিনি অপ্রকাশ্যে থেকেই ডেপুটি তিনজনের কেউ একজন দিয়ে শাসন করতে পারেন এমন ধারণা দিয়েছেন। দোহা পলিটিক্যাল অফিসের কথা বলেছেন। বলেছেন, তালেবানরা কিভাবে দেশ চালাবে তা নিয়ে অনেক কিছুই আমরা এখনো ফাইনাল করিনি। কিন্তু আফগানিস্তানে গণতন্ত্র হবে না (উড নট বি অ্যা ডেমোক্র্যাসি)। এ ছাড়া ঠিক এমনকি আরেকটা বাক্য আছে তার কথায়। আর বলছেন, ‘আফগানিস্তানে কী ধরনের পলিটিক্যাল ব্যবস্থা চালু হবে- সেটা পরিষ্কার। আর তা হলো শরিয়া ল’।
কিন্তু এই দুটি বাক্যই তালেবানদের একেবারেই বিরুদ্ধে যাবে। সেটা এ জন্য নয় যে, তালেবানরা যা বোঝাতে চায় আর পশ্চিম বা গ্লোবাল পলিটিক্যাল সিস্টেমে বোঝাবুঝি চলে যেভাবে, এটা সেখানে ঠিকঠাক মতো হয়েছে তাই। না, এটা তা নয় বরং উল্টোটা। এটা বরং যারা তালেবানদের উপড়ে ছুড়ে ফেলতে উদগ্রীব তারা যেভাবে শুনতে পছন্দ করবে, সে মোতাবেক বলা হয়েছে। বরং কিভাবে বললে তালেবানদের প্রতি প্রশ্নের ঠিক জবাব দেয়া হবে, আবার পশ্চিমের কৌত‚হলও মিটবে তা এখানে ঘটেইনি।
এর একটা সহজ উপায় হতে পারে তালেবানদের আগে উল্টা জেনে নেয়া যে, তারা ঠিক যা বলতে চায় তা পশ্চিমের ভাষায় কী করে বলতে হয়। তা না জেনে আগাম পশ্চিমের ভাষা নকল করে সেই শব্দ ব্যবহার করে বলতে গেলে ফল জাস্ট এর উল্টো হবে।
যেমন ‘গণতন্ত্র’ তালেবানের ধারণা বা পরিভাষা নয়। তাহলে তালেবানরা ‘গণতন্ত্র’ মানবে বা মানে না- এ কথা তালেবানদের বলার তো দরকার নেই। এ ছাড়া এভাবে বললে কথাটা তালেবানদের একেবারেই বিরুদ্ধে যাবে।
দ্বিতীয়ত, কথাটা সেকালের সোভিয়েতদের অযোগ্য বা আনফিট দেখানোর জন্য আমেরিকান ভাষ্যের ট্রাপ ছিল। রাষ্ট্র বিষয়ে ক্লাসিক্যালি যা বলা হয়েছিল এটা সেই শব্দ নয় যে বিষয়টা একালের পশ্চিমও ভুলেই গেছে।
তালেবান-১-এর আমলে আফগানিস্তান রাষ্ট্রের নাম তারা দিয়েছিল ‘ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান’। গত ২০২০ সালে এই নামের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব আছে। বলেছিল যে, তারা এই নাম সমর্থন করবে না। আর ওই প্রস্তাবটাই পরে ত্রয়কার মিটিংয়ে উঠিয়ে এনে তাদেরও একই আপত্তি রুজু করেছিল তারা তালেবানদের কাছে।
কোনো দেশ যদি নিজের নামের মধ্যে ‘আমিরাত’ বলে শব্দ রাখে তবে জাতিসঙ্ঘ বা মডার্ন দুনিয়া এর অর্থ করবে যে, ওটা একটা রাজতন্ত্র। যেমন দুবাই (ইউএই)। এখন একটা লক্ষ করার বিষয়, ১৯৪৫ সালের পরে দুনিয়াতে কোনো নতুন রাজতান্ত্রিক দেশ জন্ম নেয়নি। কেন? কারণ জাতিসঙ্ঘ ম্যান্ডেট তা সমর্থন করে না। তবে আপাতত সৌদি, দুবাই, কাতার এরা জাতিসঙ্ঘের সদস্য অবশ্যই। এটা ছাড় দেয়া আছে। কিন্তু সেই ছাড় শেষ হয়ে যাবে যদি এমন কোনো দেশের বাসিন্দারা মিছিল আন্দোলন আপত্তি শুরু করে যে, তারা রাজতন্ত্র চায় না। আর সে ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘ ওই আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বাদশাহকে চিঠি দেবে গণভোট ডেকে ফায়সালার জন্য।
এখন আমাদের প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, তালেবানরা কি আফগানিস্তানকে দুবাইয়ের মতো এক আমিরাত বানাতে চাচ্ছে? তাদের মধ্যে কেউ কি অলরেডি আমির (রাজা, বাদশাহ, সুলতান) আছেন বা হয়ে আছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর যথেষ্ট ভেবেচিন্তে, দায়িত্ব নিয়ে দিতে হবে। ঠিক যাই তারা বোঝাতে চায় তাই যেন বলে। তা না করে আগেই যদি বলে দেয়া হয়, আফগানিস্তানে গণতন্ত্র হবে না এটা নিজেকেই অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। নিজের বিরুদ্ধে কাজ করা হবে। মূল কথা বুঝে কথা বলতে হবে। নইলে কথা নিজের বিরুদ্ধে যাবে!