তালেবান এবং ‘কাউন্টার হিরো’ ব্রহ্ম চেলানি

গৌতম দাস | Aug 22, 2021 06:10 pm
তালেবান

তালেবান - ছবি সংগৃহীত

 

ভারতীয় ব্রহ্ম চেলানি তিনি অনেক বাংলাদেশীর মতোই আমেরিকান থিংকট্যাংক ফেলো। তিনি দিল্লিতে বসে আমেরিকান ফান্ডে এক এনজিও বা থিংকট্যাংক চালান, নাম সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ। তিনি প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে কলাম লেখেন আর সে লেখা বাংলাদেশের ‘প্রো-আমেরিকান’ পত্রিকাগুলো ছাপে। কিন্তু তিনি বাইডেনের তালেবানদের সাথে ডিল করা এবং পরে নিজ মুরোদে তালেবানরা ক্ষমতা দখল করলে এরপর একেবারে ক্ষেপে আগুন হয়ে যান। এমনই হতাশ আর ক্ষুব্ধ হয়ে গেছেন, যাকে বলে ‘রাগে অন্ধ’। তার এবারের লেখার শিরোনাম- ‘কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বনেতৃত্বের অবসান হলো’। এটাই এর প্রমাণ। এই লেখার শুরুতে তার কথা মনে করেই লিখছিলাম।

তার লেখা পড়ে মনে হবে, তিনি ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে বাইডেনকে বকাবকি বা চরম গালাগালি করছেন। আবার অনেক সময় মনে হবে, তিনি বোধহয় এক পাঁড় কমিউনিস্ট যারা সাধারণভাবে আমেরিকাকে এমন খারাপ বলে অভিযুক্ত করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তিনি এখনো তার আয়, ডিগ্রি, চাকরি, ওঠাবসা, ভাব-বিনিময় সবই ডিপ আমেরিকান সম্পর্কিত হয়েই করে চলেছেন।

মূলত আফগানিস্তানে তালেবানদের বিজয় ও ক্ষমতার উত্থান দেখে চেলানি একেবারে ভেঙে পড়েছেন। পরে সিরিয়াসলি কিছু কঠিন কথা লিখেছেন। যে কথাগুলো গত ২০১৪ সাল থেকে লিখে আসছি। সে কথাগুলোই একজন প্রো-আমেরিকান একাডেমিক বলে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে, তার আনুষ্ঠানিক মরণ-মুহূর্ত হিসেবে তালেবানের এ ক্ষমতারোহণকে ভবিষ্যতে স্মরণ করা হবে। এর মধ্য দিয়েই পশ্চিমাদের সুদীর্ঘকালের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের যবনিকাপাত হলো।’ ... ‘আফগান জনগণকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের চলে যাওয়া তার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থার ওপর বড় আঘাত হানল। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের কাছে এ বার্তা গেল, যুক্তরাষ্ট্র শুধু তার নিজের বিপদের সময়ই মিত্রদের গণনার মধ্যে ধরে। বিপদ কেটে গেলে সে মিত্রদের বিপদের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যায়।’ এ ধরনের ভাষ্য এতদিন আমরা কমিউনিস্ট প্রপাগান্ডা বলেই শুনেছি। চেলানি আমেরিকাকে সরাসরি ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলছেন। বলেছেন, ‘আফগান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং তার পরপরই সরকারের পতনের ঘটনার সাথে নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসঘাতকতার যোগসাজশ রয়েছে।’ এর পরের বক্তব্যগুলো একেবারেই কমিউনিস্ট অভিযোগ ধরনের। বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আফগান সেনাদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে, যাতে তারা স্বনির্ভর হতে না পারে এবং সব সময় যাতে তাদের মার্কিন বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়।’... ‘সুবিধাবাদী চীন এখন খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ আফগানিস্তানে আধিপত্য বিস্তার করবে এবং ধীরে ধীরে পাকিস্তান, ইরান ও মধ্য এশিয়ায় নিজের কর্তৃত্ব পাকাপোক্ত করবে। চীন ক‚টনৈতিক স্বীকৃতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা দেয়ার বিনিময়ে তালেবানকে বলা যায়, কিনে নিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে মধ্যযুগীয় উগ্র জিহাদী সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন করে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অবিশ্বস্ততার স্মারক প্রতিমূর্তি স্থাপন করা হবে। কাবুলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে চিনুক ও ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারে করে ভীতসন্ত্রস্ত আমেরিকানদের সরিয়ে নেয়ার ছবি ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামের সায়গনের মার্কিন দূতাবাস থেকে তাদের নাগরিকদের হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। এসব ছবি আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হওয়ার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।’

এটুকু অন্তত বলা যায়, চেলানি আমেরিকার ওপর সব ধরনের আস্থা হারিয়েছেন যা থেকে ভারতের সরকারি অবস্থান বা দিশেহারা অবস্থার কিছু আন্দাজ করা যায় বোধহয়। ভারতের দুরবস্থা এতই নিচে যে, সেই আমেরিকার ওপরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ভরসা করা ছাড়া বিকল্প নেই। তাই আমেরিকার মুখ চেয়ে থাকতে সপ্তাহজুড়ে তিনি আমেরিকায়। এ দিকে কাবুলে ভারতের বছরে দেড় বিলিয়নের রফতানির বাজারটাও হাতছাড়া হয়ে গেছে, তালেবান আপত্তিতে। ওদিকে, তালেবানের সাথে কথা বলবে না মানে স্বীকৃতি দেবে না-নেবে না বলে গোঁ ধরে বসে আছে ভারত। কিন্তু কতক্ষণ টিকতে পারবে?

কাবুলের অনেক পরিবর্তনের মাঝে তারা অন্তত একটা জিনিস সারা দুনিয়ার মানুষকে দেখিয়েছে, শিখিয়েছে। কিন্তু এটা যারা শিখতে চায় কেবল তারাই এটা দেখতে পারে। তা হলো, এটা একটা গ্লোবাল বাণিজ্যের দুনিয়া মানে গ্লোবাল আন্তঃনির্ভরশীলতার দুনিয়া হয়ে উঠেছে। আপনি কাউকে পছন্দ করুন আর নাই করুন আপনার বেলাতেও একই নিয়ম- এটা আন্তনির্ভরশীলতার দুনিয়া। এখন কেবল আরেকটা সম্ভাবনা আছে। যারা গ্লোবাল নেতা মানে যিনি বা যারা মিলে গ্লোবাল রাজনৈতিক সিস্টেম (তাতে এত ত্রুটি, যতই থাক) বলে একটা কাঠামো নিয়ে তারা হাঁটে তাদের ভ‚মিকা বিষয়ক। এই ভ‚মিকাটা হলো, এরা চাইলে ওই কাঠামোতে ফিট হচ্ছেন না বলে শাসক হিসেবে আপনার ধরনটাকে উপড়ে ছুড়ে ফেলে দিতে পারার ক্ষমতা রাখে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us