রোমাঞ্চকর? নাটকীয়? অবিশ্বাস্য?
ভারতীয় বোলার মোহাম্মদ সিরাজ - ছবি : সংগৃহীত
রহস্যময় আবহাওয়া। কখন কী হয়ে যায় বলা কি যায়? এই রোদ তো এই বৃষ্টি, কখনো রোদের বুক চিড়েই তার সৃষ্টি। গ্রাম বাংলার প্রবাদে ‘খেঁক শিয়ালের বিয়ে’ বলে যাকে। লিখতে যখন বসলাম তখনো আকাশে খানিকটা কড়া রোদের দৌড়ঝাঁপ, আর এখন যখন লেখার শেষ প্রান্তে তখন কালো মেঘের ঘনত্বে সূর্য হয়েছে আড়াল। এরই মাঝে মেঘ ভেঙে ফোঁটা ফোঁটা বারিধারা ঝরে চলেছে আনমনে, অবিরামভাবে। আবার হয়তো খানিকটা পড়েই ৩৬০° বদলে গিয়ে সূর্যি মামা ফিরবেন আপন রূপে।
শুধুই যে সৃষ্টিকর্তার মাঠে মেঘ-বৃষ্টির রহস্যময় লুকোচুরি চলছে তা নয়, রহস্যময় লুকোচুরি চলছে ক্রিকেটের মাঠেও। পর পর দুইদিন দুই রহস্যময় রোমাঞ্চকর মুহূর্তের দৃশ্যায়ন হয়েছে; যাতে ভারত-পাকিস্তান দুই এশিয়ান পরাশক্তি ছিলো মুখ্য চরিত্রে। যার ফলাফল পাকিস্তানের সাথে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ শব্দটার পুনঃমিলন হয়েছে, আর ভারতের হয়েছে পুনঃজন্ম। এই জন্যই তো সদা ক্রিকেটকে বলা হয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা।
উত্তেজনার স্রোতে ভাসমান ম্যাচ দুটি কতটা রহস্যময় ছিল, যারা দেখেছেন তারা কি শেষ মুহূর্তগুলো আদৌ ভুলতে পারবেন? নবাবি ক্রিকেটের (টেস্ট ক্রিকেট) প্রকৃত স্বাদ শেষ মুহূর্ত ছাড়া খুব একটা বুঝে আসে না৷ আর একবার স্বাদ পেয়ে গেলে তা কভুও ভুলা যায়না। তেমনি ভুলা যাবেনা সদ্য সমাপনী ম্যাচ দুটোও। যার পরতে পরতে উত্তেজনা ছড়ানো, মুহূর্তে মুহূর্তে রঙ বদলানো। যাতে বিস্ময়ের বিস্ফোরণ ঘটে, ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকে পলকহীন দৃষ্টিতে! এ যেন ভিন্ন স্বাদ, ভিন্ন ঘোর।
ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে অহরহ এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। হরহামেশাই উত্তেজনা ছড়ায় বলা চলে। কিন্তু আভিজাত্যের সাদা পোষাকের ক্রিকেটে এমন ঘটনা ঘটে কালে-ভদ্রে, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে। অনেকটা বউ পাগল বরের রাগী বউয়ের মতো। যে সদা মলিন মুখে থাকলেও, যখন হাসে তাতেই স্বামীর হৃদে আনন্দের দোলা লাগে। অল্প সময়ের সেই হাসিতেও তার তৃপ্তি আসে, যা চোখের কোনে সর্বদা ভাসতে থাকে।
জয়ের জন্য লক্ষ্য ছিল ১৬৮। আপাতদৃষ্টিতে খুব বড় নয়। কিন্তু পাকিস্তানের বোলিং–আক্রমণও ফেলনা নয়। সেই অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তান লড়াইটাও করেছে ওরা দারুণ। চা বিরতির আগেই ৩ উইকেট তুলে নেয় পাক বোলাররা। এরপর ৬৪ রানের একটা জুটি দেখা গেলেও ১১৪ রানেই ক্যারাবীয়রা হারিয়ে ফেলে ৭ উইকেট। জয়ের পাল্লাটা তখন বলতে গেলে পাকিস্তানের দিকেই হেলে আছে। কিন্তু কে জানতো দিনটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের, নইলে কি আর ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেন কেমার রোচ, ১৫১ রানে ৯ উইকেট হারালেও, রোচের ৩০ রানের সৌজন্যে বলা চলে দৃঢ়তায় রূদ্ধশ্বাসে এক জয় তুলে নেয় ক্যারাবীয়রা।
এদিকে গতরাতে যা ঘটেছে তাতে ইংল্যান্ডবাসী হয়তো ভাবছে তারা কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে। বলতে গেলে অনেকটা তাই। ৪র্থ দিন শেষেও মনে হচ্ছিল, কেউ জিতলে ইংল্যান্ডই জিতবে, অন্যথায় ড্র। সেখানে সব চিত্র যেন পাল্টে দিলেন ভারতীয় দুই পেসার, বল হাতে নয় ব্যাট হাতে নবম উইকেটে ৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে। ২৭২ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড দল কিনা ১ রানেই হারিয়ে ফেলে ২ উইকেট। ৪৩/৩ থেকে ৬৭/৫! অতঃপর ৯০/৭। সেখান থেকে ১২০, এর মাঝে ২৯ রানই এসেছে অতিরিক্ত থেকে। ১২০/৮, ১২০/৯, ১২০/১০। বিপরীতে সিরাজের ৪ উইকেট। আর ভারতের জয়!
রোমাঞ্চকর? নাটকীয়? অবিশ্বাস্য? যাই বলুন না কেন, এটাই টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য। আর যদি তা হয় ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে, তবে?