সেক্যুলার 'ক্রুসেডে'র বিরুদ্ধে তালেবানের বিজয়

তারেকুল ইসলাম | Aug 15, 2021 08:35 am
সেক্যুলার 'ক্রুসেডে'র বিরুদ্ধে তালেবানের বিজয়

সেক্যুলার 'ক্রুসেডে'র বিরুদ্ধে তালেবানের বিজয় - ছবি : সংগৃহীত

 

কান্দাহার দখলের পর তারা সেখানকার রেডিও স্টেশনের নতুন নাম দিয়েছে : ভয়েস অব শরিয়া। তালেবানের অধীনে নতুনভাবে রেডিও স্টেশনটির সম্প্রচার চলছে এখন।

তো যারা কিনা ভাবছেন, তালেবান গণতান্ত্রিকভাবে নতুন আফগানিস্তান গড়ে তুলুক, শরিয়া শাসন কায়েম না করুক; তাহলে তালেবান সভ্য হিসেবে ইউরোপ-আমেরিকার কাছে সাদরে গৃহীত হবে। তাদের প্রতি করুণার হাসি দিলাম।

তাদের এটা ভাবা উচিত যে আফগানিস্তানকে দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করে আবারো শরিয়া শাসন তথা ইসলামিক আমিরাত ফিরিয়ে আনবে বলেই তো গত দুই দশক দখলদার পাশ্চাত্য শক্তির সেক্যুলার 'ক্রুসেডে'র বিরুদ্ধে সামরিক যুদ্ধ করে আসছিল তালেবান বাহিনী৷ অবশেষে আমেরিকা ফরহাদ মজহারের ভাষায় 'কুকুরের মতো লেজ গুটিয়ে' আফগানিস্তান থেকে পালিয়েছে৷

বিজয়ী শক্তি হিসেবে তালেবান এখন পরাজিত শক্তির গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রমডেল প্রতিষ্ঠা করবে- এমন আশা নিশ্চয়ই বাতুলতা। আর তাছাড়া আফগানিস্তান ছাড়ার ক্ষেত্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো শর্তে তালেবানের সাথে আমেরিকার চুক্তি হয়নি। তাই সর্বেসর্বা বিজয়ী শক্তি হিসেবে তালেবান এখন স্বরূপেই উদ্ভাসিত হবে, এটাই স্বাভাবিক।

আমেরিকা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তথা ওয়ার অন টেররিজম-এর নামে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছিল। আমেরিকার প্রতিপক্ষ বলেই অতীতে তালেবানদের 'সন্ত্রাসী' বলে প্রপাগান্ডা চালানো হতো।

অবশেষে সেই আমেরিকার হোয়াইটহাউজই স্বীকার করে বলেছে, 'তালেবান সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নয়' (এবিসি নিউজ, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৫)।

তালেবান তো স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধা। নিজের দেশ আফগানিস্তানকে আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার জন্যই তাদের এই সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী লড়াই।

'ওয়ার অন টেররিজম'কে ক্রুসেড বলে অভিহিত করেছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ : "This crusade, this war on terrorism, is going to take a while" (21 Sep. 2001, The Wall Street Journal)।

বস্তুতপক্ষে, ওয়ার অন টেররিজম কার্যত ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়েছিল।

আর তালেবান এই ওয়ার অন টেররিজম নামক 'ক্রুসেডে'র বিরুদ্ধেই সশস্ত্র জিহাদ বা লড়াই করে এসেছে। এই নব্য আধুনিক সেক্যুলার ক্রুসেডের বিরুদ্ধে তাদের অভাবনীয় বিজয় তো আমরা এখন চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। তারা পুনরায় The-Islamic Emirate of Afghanistan-কে পুনরুজ্জীবিত করতে চলেছে। তারা তো সেখানে শরিয়া সরকারই প্রতিষ্ঠা করবে- এতে এত আতঙ্কিত হওয়ার কী আছে? তাদের বিরুদ্ধে আগেও নানামাত্রিক প্রপাগান্ডা চলত, এখনো চলছে, সম্ভবত ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে।

আর এটা তো ইতোমধ্যে সবার জানা যে, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব মুখিয়ে আছে তালেবান সরকারের সাথে কাজ করার জন্য৷

প্রপাগান্ডা চালিয়ে তালেবানকে ক্রমাগতভাবে বর্বররূপে উপস্থাপন করা হলেও এটা লক্ষণীয় যে একের পর এক প্রদেশ দখলের পরেও প্রতিপক্ষ স্বদেশীদের প্রতি তালেবানের অভূতপূর্ব ক্ষমা প্রদর্শন তাদের মাহাত্ম্যকে প্রকাশ করে। গত ৮ আগস্ট তারা একটি অফিশিয়াল বিবৃতিতে বলেছে : "ইসলামিক আমিরাত তাদের মুজাহিদিনদের নির্দেশ দিয়েছে এবং আবারও নির্দেশ দিচ্ছে যে, কেউ অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে প্রবেশ করবে না, কারো জীবনের ক্ষতি করবে না, কারো সম্পদ ও সম্মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং সবাইকে রক্ষা করবে। এছাড়া আমরা আমাদের সকল প্রতিবেশীকে আশ্বস্ত করি যে আমরা তাদের কোনো সমস্যা করবো না। আমরা কূটনীতিক, দূতাবাস, কনস্যুলেট ও দাতব্য কর্মীদের আশ্বস্ত করতে চাই তাদের নিরাপত্তা পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা হবে। ইসলামিক আমিরাত আল্লাহর ইচ্ছায় সবার নিরাপত্তা ও কাজের নিরাপদ পরিবেশ প্রদান করবে।"

তালেবান তাদের এখনকার দূরদর্শিতা ও কৌশল ব্যবহার করে দেশটির অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর সাথে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সর্বজনগ্রাহ্য সরকার গঠনের মধ্যদিয়ে সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ থেকে আফগানদের রক্ষা করতে সক্ষম হবে- এই আশা করি।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
tareqislampt@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us