আবার রিমান্ডে পরিমণি?
পরিমণি - ছবি : সংগৃহীত
চিত্রনায়িকা পরীমণিকে আবারো রিমান্ডে নেয়া হতে পারে। দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ড গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়। আজ শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডি সূত্র জানায়, পরীমণি দ্বিতীয় দফা রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া বেশ কিছু তথ্যে গরমিল রয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এজন্য আবারো তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে হাজির করা হবে।
সূত্র জানায় পরীমণির আর্থিক বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ করে জোর দেয়া হচ্ছে। তার আয়ের উৎস অভিনয় ছাড়া আর কী কী সেগুলো জানার চেষ্টা চলছে। কোটি কোটি টাকা দামের গাড়ির উৎস সম্পর্কে জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরো জানতে তাকে রিমান্ডে নেয়া দরকার। সূত্র জানায়, দুই দফা রিমান্ডে পরীমণি বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। মদ খাওয়া, বাসায় মদের আসর বসানো এবং বাসায় মদের মিনি বার দেয়ার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন পরীমণি। তার বাসায় কারা কারা যেতেন, সেসব বিষয়ও বলেছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে যাতায়াতকারীদের নাম প্রকাশ করবে না বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা।
গ্রেফতারের পর বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় পরীমণিকে প্রথমে চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। প্রথমে ডিবি এই মামলায় পরীমণিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেও পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। চার দিনের রিমান্ড শেষে ১০ আগস্ট সিআইডি পরীমণিকে আদালতে হাজির করে আবারো পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। এতে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই মামলায় তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুরও দুই দিন রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
গত ৪ আগস্ট বনানীর বাসা থেকে গ্রেফতার হন পরীমণি। র্যাবের দাবি, বিকেল থেকে রাত অবধি অভিযানকালে পরীমণির বনানীর বাসার শয়নকক্ষ থেকে ১৯টি বিদেশী মদের বোতল, বিভিন্ন ধরনের বিদেশী মদসহ দেড় শতাধিক বিদেশী মদের বোতল, ইয়াবা ও সিসা, এলএসডি ও আইস জব্দ করা হয়েছে।
একই রাতে প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বনানীর অফিস থেকে ৯৭০টি ইয়াবা জব্দ করা হয়। র্যাবের দাবি, কথিত ব্যবসায়ী শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসানের বসুন্ধরা এলাকার একটি ফ্ল্যাটের ওয়াড্রোব থেকে সাত হাজার ২০০টি ইয়াবা জব্দ হয়।
মামলায় বলা হয়, পরীমণি এসব মদ কবির নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংগ্রহ করে বাসায় রাখতেন। একই মামলায় র্যাব দাবি করেছে, পরীমণিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তিনি প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের কাছ থেকে মদ সংগ্রহ করতেন।
পরীমণিকে ব্যবহারকারীদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি ১৭ বিশিষ্ট নাগরিকের : দেশের শোবিজ অঙ্গন তথা চিত্রনায়িকা পরীমণি ইস্যু নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ১৭ বিশিষ্টজন। তারা বিবৃতিতে বলেছেন, চিত্রনায়িকা পরীমণি ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের নব্য-ধনিক সমাজের চেহারা ফুটে উঠেছে। আলোচিত এই অভিনেত্রীকে ব্যবহারকারী ওই ধনিকশ্রেণীর মুখোশ উন্মোচন চান তারা।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্যাডে পাঠানো এই বিবৃতিতে রয়েছে- আবদুল গাফ্থফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ হাসান ইমাম, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদার, সেলিনা হোসেন, আবেদ খান, ফেরদৌসী মজুমদার, সারোয়ার আলী, মফিদুল হক, মামুনুর রশীদ, আবদুস সেলিম, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, শাহরিয়ার কবীর, মুনতাসীর মামুন, গোলাম কুদ্দুছ ও হাসান আরিফের নাম।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলচ্চিত্র জগতের এক অভিনেত্রীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নব্য-ধনিক সমাজের যে চেহারা ফুটে উঠেছে তা আমাদের গভীরভাবে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে। নারীকে বাণিজ্য ও ভোগের পণ্য হিসেবে ব্যবহারের ধারা নানাভাবে পরিপুষ্টি পেয়ে সামাজিক অনাচারের ভোগবাদী সংস্কৃতি প্রবল করে তুলেছে। অর্থ-বিত্ত, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অশুভ আঁতাতের প্রতিফল যখন ন্যক্কারজনকভাবে প্রকাশ পেতে শুরু করল তখন নারীর ওপরই এর দায়ভার অর্পণের বিশাল আয়োজন আমরা প্রত্যক্ষ করছি। পুরুষতান্ত্রিক কূপমণ্ডূক চিন্তার এই দাপট সামগ্রিকভাবে সমাজকে এবং বিশেষভাবে নারীকে নানাভাবে নিগৃহের শিকারে পরিণত করেছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা নারীর সাংস্কৃতিক অধঃপতনের শিকার হয়ে ওঠার জন্য যারা দায়ী, যারা এর ইন্ধনদাতা তাদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি করছি এবং এই ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সাংস্কৃতিক সামাজিক আন্দোলন বেগবান করার প্রয়োজনীয়তা সবার সামনে মেলে ধরছি। সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি বিষয়ও তুলে ধরা হয় ১৭ নাগরিকের বিবৃতিতে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে সামাজিক অবক্ষয়, সাম্প্রদায়িকতা এবং নারীবিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিকতার বিস্তার যেভাবে ফুটে উঠেছে তা আমাদের গভীরভাবে ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন করেছে। সুনামগঞ্জের শাল্লায় গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটতরাজের ঘটনা অতীব দুঃখজনক।
শঙ্কিত তসলিমা নাসরিন : এদিকে পরীমণিকে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি প্রশ্ন করেছেন, রিমান্ডে পরীমণির শারীরিক নির্যাতন হচ্ছে না তো? ধর্ষণ করা হচ্ছে না তো?
কেন তার এই আতঙ্ক, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন লেখিকা। তিনি লিখেছেন, এই যে পরীমণিকে রিমান্ডে নিচ্ছে দিনের পর দিন, রিমান্ডে তো শুনেছি মানুষকে প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয়। তিনি এ বিষয়েও নিশ্চিত যে, রিমান্ডে নিয়ে পরীমণির মানসিক নির্যাতন হচ্ছেই। পাশাপাশি তার আরো দাবি, পরীমণি একে তো মেয়ে, তার ওপর সুন্দরী। তাকে যে পুরুষেরা কতভাবে এক্সপ্লয়েট করে!
তসলিমা আরো লিখেছেন, পরীমণি সমাজের বেশির ভাগ মেয়ের মতোই ভুল মানুষের প্রেমে পড়ে। এক সাংবাদিকের প্রেমে পড়েছিল। তাকেই বিয়ে করবে ঘোষণা করেছিল। শেষ মুহূর্তে সে বিয়েটা ভেঙে দিতে বাধ্য হলো। কারণ সেই সাংবাদিক পরীমণির সিনেমার নিন্দা করেছিল। তাকে সিনেমা করতে বাধা দিচ্ছিল। এমন লোককে বিয়ে না করার সিদ্ধান্তটি পরীমণি ঠিক নিয়েছিল।
তসলিমা আরো জানান, এক পরিচালক পরীমণিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ায় সে হুট করে এক রাতের নোটিশে বিয়ে করে ফেলেছিল। পরদিন টনক নড়ে, এ লোক তো সুবিধের নয়! শেষ পর্যন্ত তাকেও সে ছাড়তে বাধ্য হলো। সুদর্শন এক পুলিশ অফিসারের প্রেমে সাড়া দিয়েছিল। অফিসারটি বলেছিল, সে অবিবাহিত। পরে যখন জানতে পারে সে বিবাহিত, পরীমণি সরে আসে।