আকাশ ছুঁয়েছে ভারতের ঋণ
আকাশ ছুঁয়েছে ভারতের ঋণ - ছবি : সংগৃহীত
দু’কোটি কর্মসংস্থান, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ এবং কালো টাকা ফেরত— কোনো প্রতিশ্রুতিই পূরণ হয়নি। তবে নরেন্দ্র মোদির হাতে পড়ে একটি দিকে আকাশ ছুঁয়েছে ভারত। সেটি হলো ঋণের বোঝা! সেই ২০১৪ সাল থেকেই তা ঊর্ধ্বমুখী। তবে, সব কিছুর সীমা ছাড়িয়েছে গত অর্থবর্ষ। নির্বাচনী প্রচারে বিদেশ থেকে কালো টাকা এনে প্রত্যেক ভারতবাসীর পকেটে ১৫ লক্ষ টাকা দেয়ার ‘বেলুন’ ফোলানো হলেও, আদতে সরকারের ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ হওয়ার জোগাড়!
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন গোটা ভারতের মাথায় ঝুলছে ১৯৭ লক্ষ কোটি রুপিরও বেশি ঋণের খাঁড়া। বুধবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্নের চাপে সংসদে মোদি সরকার সামনে আনল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। কীভাবে কমবে এই বিপুল পরিমাণ ঋণ? সেই প্রশ্নের সরকারি জবাবও চমকে যাওয়ার মতো। কেন্দ্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এবং সরকারি জমি বিক্রি করেই এই ঋণভার কমানো হবে।
ড. মনমোহন সিংয়ের দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলের শেষদিকে, ২০১৪-১৫ আর্থিক বর্ষে ভারতের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৮ লক্ষ ৬৭ হাজার ৮৯২ কোটি রুপি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিপার্টমেন্ট অব ইকনমিক অ্যাফেয়ার্সের ‘স্ট্যাটাস পেপার অন গভর্নমেন্ট ডেট’-এই রয়েছে এই পরিসংখ্যান। সেই সরকারি নথিতেই স্পষ্ট, তারপর থেকে অঙ্কটা ক্রমশ বেড়েছে। কেন্দ্রে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কত হয়েছে ঋণের বোঝা? সংসদে এই প্রশ্ন তুলে সরকারকে চেপে ধরে তৃণমূল। দলের দুই এমপি, লোকসভার সাজদা আহমেদ এবং রাজ্যসভার নাদিমুল হক লিখিতভাবে সে কথা জানতে চান।
উত্তরে কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০২০-২১ সালের মার্চ মাস মোতাবেক সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ১৯৭ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, মাত্র এক বছরে ঋণ বোঝার হার ৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২.৬ শতাংশ। বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মতো সংস্থার দ্বারস্থ হতে হয়েছে সরকারকে।
মোদি জমানার শুরু থেকে ঋণের বোঝা বাড়ার ছবিটা সামনে এসেছে সরকারি স্ট্যাটাস পেপারের ‘ডেট পজিশন অব সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট’-এর তথ্যেই। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬-১৭ আর্থিক বর্ষে কেন্দ্রের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭০ লক্ষ ৭ হাজার ২৫৯ কোটি ভারতীয় টাকা। তার পরের অর্থবর্ষে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৭৪ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩৫ কোটি টাকায়। পরের দু’বছরে তা বেড়ে ১৯৭ লক্ষ কোটিতে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে কেন কোটি কোটি টাকা ব নয়া সংসদ ভবন, ঝাঁ চকচকে সেন্ট্রাল ভিস্তার মতো প্রকল্পে মেতেছে মোদি সরকার? সেই প্রশ্ন তুলে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু, সে সব উপেক্ষা করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খরচের বহর ক্রমশ বাড়িয়েই চলেছেন বলে অভিযোগ।
তৃণমূলের দুই এমপির প্রশ্নের উত্তরে ঋণ মেটানোর প্রক্রিয়া নিয়েও জবাব দিয়েছে মোদি সরকার। কেন্দ্রের দাবি, ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে ২৩ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা ঋণ মেটানো হয়েছে। ২০১৯-’২০-তে সেই অঙ্কটা বেড়ে হয় ৩৩ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। ঋণ ভার কমাতে ধাপে ধাপে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, সরকারি জমি বিক্রি করবে কেন্দ্র। বাড়ানো হবে কর আদায়ের পরিমাণ।
সূত্র : বর্তমান