তুমি আসবে বলে... পৃথিবীর আজ যত আয়োজন
তুমি আসবে বলে... পৃথিবীর আজ যত আয়োজন - ছবি সংগৃহীত
কবিতার লাইন দুটি মনে পড়ে? প্রবাল বড়ুয়ার এই কবিতার দ্বিতীয় লাইনের পৃথিবী কেটে যদি বাংলাদেশ বসিয়ে দেয়া হয়, তবে হয়তো তাতে গত তিন সপ্তাহ সময়ের খানিকটা মূল্যায়ন হবে, অবস্থার প্রতিচ্ছবি কবিতার লাইনে ভেসে উঠবে। পাঁচ বছর পর বাংলার মাটিতে, বলা যায় বাঘের ডেরাতে ক্যাঙ্গারুরা পা রেখেছিল সদলবলে। সূচিতে লেখা সাত দিনে পাঁচ ম্যাচ, অথচ তারও দুই সপ্তাহ আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবার দ্বি-পক্ষীয় টি-২০ সিরিজ বলে নয় এই প্রস্তুতি, বরং করোনার ক্রান্তিতে অস্ট্রেলিয়ার চাওয়াতেই এমন পরিণতি!
শর্তের বোঝা চাপিয়ে, অবশ্যই তা সময়ের প্রয়োজনে তারা এসেছিল বাংলার ভবে। একটা সিরিজকে কেন্দ্র করে বিসিবি’র এমন কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ হয়নি কখনো আগে। তবে তাতে ক্ষতি হয়নি, দর্শকহীন মাঠেও বরং তাতে উত্তেজনার রঙটাই প্রখর হয়েছে। দেখিয়ে দেবার একটা প্রত্যয় এসেছে বুকে। সমগ্র বাংলাদেশে ক্রিকেট উৎসব লেগেছে। ঘরে ঘরে যার আমেজ ছুঁয়েছে। প্রতিপক্ষ যখন শক্তিমত্তায় ঢের এগিয়ে, মনে ভয় নিয়েও বাঙালি জমজমাট এক সিরিজের অপেক্ষা করেছে। এমনটাই তো হবার কথা। ক্রিকেট পাগল জাতি আমরা। ক্রিকেটেই খাই, ক্রিকেটেই ঘুমাই, ক্রিকেটেই খুঁজি প্রেম ভালোবাসা। লাল-সবুজের একটা জয়ে এত সুখ পাই মনে, বাকি সব ভুলে ভেসে যাই আনন্দ-উন্মাদনার স্রোতে। ব্যর্থ হলে ব্যথিত হই, কিন্তু তবুও স্বপ্ন দেখি বুক ভরে।
যাহোক, শর্তের বোঝা বিমানে চাপিয়ে যে পাঁচবারের বিশ্বজয়ী পরাক্রমশালী হলুদ দলটা এসেছিল লাল সবুজের এই দেশে, তারা গত রাতে ফিরে গেছে; ফিরে গেছে ব্যর্থতার বিষে নীল হয়ে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজটা ৪-১ ব্যবধানে বাঘেরা জিতে নিয়েছে বাঘেরই মতো করে। ওদের দর্প অহামিকা চূর্ণ করে চোখে চোখ রেখে তীব্র দাপটের সাথে। এই জয়গুলো শুধুই কোনো জয় নয়, এগুলো একেকটা ইতিহাস। এগুলো একেকটা আমাদের আগামীর অনুপ্রেরণা। জানি না আবার কত বছর পর অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে আসে, যদিও বছর পাঁচেকের ব্যবধানে টেস্ট আর টি-২০ খেলে ফেলেছে। কিন্তু কেন জানি কোনো এক অজানা কারণে বাংলাদেশের মাটিতে ওয়ানডে খেলার স্বপ্নও দেখতে চায় না ওরা। কারণটা কী হতে পারে?
সিরিজ শেষে কিছু প্রশ্নও আসছে ভেসে। তার বেশির ভাগই মাঠ তথা পিচ নিয়ে। লো স্কোরিং পিচে খেলে বাংলাদেশ দলে কি উন্নতির দেখা কি আদৌ মিলবে? পক্ষে বিপক্ষে নানাজনের নানা ধরনের যুক্তি আছে। কেউ বলছে, অস্ট্রেলিয়া কি সহজে বাংলাদেশে আসে? এবার যখন এসেছ, যেভাবেই হোক তাদের ফেরাব ব্যর্থতার গ্লানি বুকে। কেউ বলছে র্যাংকিংয়ে উন্নতির পথে হাঁটতে হলে ঘরের মাঠের পুরো সুবিধাই নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আবার বিপক্ষে যারা বলছে তাদের দাবি বলতে গেলে এক কথায়, বিদেশে বা বৈশ্বিক আসরগুলোতে ভালো করতে হলে এমন পিচে খেলা বাদ দিতে হবে। হয়তো হ্যাঁ, নয়তো না; আপনার মত কোনটা?
আবার কখনো কেউ বলছে, অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সারির দলের সাথে জিতে লাভ কি হবে? তাদের তরে আমার একটা ছোট্ট প্রশ্ন- ওয়ার্নার, স্মিথ, ফিঞ্চ আর ম্যাক্সওয়েল বাদেই যদি অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় সারির হয়, তামিম, মুশফিক, লিটন, মিরাজহীন বাংলাদেশ দল কী তবে? তাছাড়া, আমার বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা বছরে কয়টা টি-২০ ম্যাচ, সিরিজ বা টুর্নামেন্ট খেলে? অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য দল বাদেও তো ওরা বিগ ব্যাশের মতো বিশাল আসরে খেলে। তাছাড়া, উপমহাদেশের মাটিতেও তো ওরা নিয়মিত আইপিএল খেলে থাকে। আর বাংলাদেশে আসা দলটায় ১৩ জন আইপিএল খেলা ক্রিকেটার আছে!
লাভ যদি নাও হয়, অন্তত ক্ষতি হয়নি নিঃসন্দেহে। জয়গুলো যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাস সমৃদ্ধ করেছে। সেই সাথে অস্ট্রেলিয়াকে দিয়েছে একটু বেশিই লজ্জার ছোঁয়া। বিশেষ করে শেষ ম্যাচে ৬২ রানে অলআউট করে অস্ট্রেলিয়ার টি-২০ ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোরের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এমনকি সেই ম্যাচে কোনো চার মারতে না পারায়ও রেকর্ডের বই উলট পালট হয়েছে। তবে সর্বোপরি বলা চলে, বিসিবি'র এই বৃহৎ আয়োজন বৃথা যেতে দেয়নি ওরা; বাংলার বাঘেরা।