ভিয়েতনাম কিভাবে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলল?

তৈরী পোশাক কারখানা - ছবি : সংগৃহীত
পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভিয়েতনাম। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের কাছাকাছি অবস্থান করছিল এশীয় দেশটির রফতানি আয়। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানেই উঠে গেছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ এখন পোশাক রফতানিতে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। আর চীনের অবস্থান সবার উপরে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২০ সালে ভিয়েতনাম দুই হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। আর বাংলাদেশ রফতানি করেছে দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পোশাক। অথচ তার আগের বছর বাংলাদেশের রফতানি ছিল তিন হাজার ৪০০ কোটি ডলার। তখন ভিয়েতনামের রফতানি ছিল তিন হাজার ১০০ কোটি ডলার।
ভিয়েতনামের বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাওয়া হয়তো শেষ চিত্র নয়। কারণ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের কোভিড পরিস্থিতি বেশি নাজুক। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঢাকায় ৯৮ শতাংশ ভাইরাস পাওয়া গেছে অতিসংক্রমণ ঘটানোর জন্য খ্যাত ‘ডেল্টা ভাইরাস’। সারা দেশের অবস্থাও এর চেয়ে ভিন্ন হওয়ার কথা নয়। অন্য দিকে ভিয়েতনামের মতো দেশে সংক্রমণের হার কম হওয়ার পাশাপাশি রেজিমেন্টেড শাসনের ফলে স্বার্থের টানাপড়েন এবং শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষের প্রকাশ কম।
ভিয়েতনামের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা প্রসঙ্গে একজন শীর্ষস্থানীয় পোশাক মালিকের বক্তব্য হলো, ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যেতেই পারে। কারণ ওদের বিনিয়োগকারী চীন ও জাপান। আমাদের দেশের মতো ওদের নিয়ে বিশ্বে কোথাও নেতিবাচক কথাবার্তা নেই। ফ্যাক্টরি খুলে দেয়া হয়েছে এজন্য সরকার ও আমাদের সমালোচনার শেষ নেই। আর ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা আমাদের তুলনায় নানা সুবিধায় রয়েছে। সেখানে বছরে দু’বার বিদ্যুৎ গ্যাস ও পানির দাম বাড়ে না। এসব কারণেই তারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে গেছে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ পোশাক খাত?
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরী পোশাক (আরএমজি) শিল্পের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। কর্মসংস্থান, বৈদেশিক রিজার্ভ এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি তৈরী পোশাক শিল্পের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে ১১.২ শতাংশ অবদান এ খাত থেকে আসে। চার হাজার ৬০০টিরও বেশি কারখানা নিয়ে এটি দেশের শিল্প খাতের বৃহত্তম উপখাত। আর উৎপাদন কর্মসংস্থানের ৩৬ শতাংশ তথা ৪১ লাখ শ্রমিক কর্মরত এই খাতে। সাশ্রয়ী মজুরির সুশৃঙ্খল নারীশ্রমিক এই শিল্পের মেরুদণ্ড। দেশের ৬১ শতাংশ নারীর কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে আরএমজি শিল্প নারীর ক্ষমতায়ন এবং জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্বব্যাপী আরএমজি ট্রেডিংয়ে বাংলাদেশের বাজারের অংশ প্রায় ৬.৫ শতাংশ আর কোভিডের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বাদ দেয়া হলে বাংলাদেশ চীনের পর ধারাবাহিকভাবে ‘দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ’ হিসেবে রয়েছে। বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৬২ শতাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ২১ শতাংশ করে পোশাক রফতানি করে। গত তিন দশক ধরে, আরএমজি রফতানিগুলো বছরে ১৪.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে যা সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৮.৮ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়ায়। তা ২০১৮-১৯ প্রাক-কোভিড অর্থবছরে ৪০.৫৩ বিলিয়ন ডলার ছিল। ১৯৯০ সাল থেকে আরএমজি শিল্পের প্রবৃদ্ধি সব আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সঙ্কট এড়িয়ে ইতিবাচক ধারায় ছিল যদিও কোভিড-১৯ এর কারণে এই শিল্প এখন ‘ক্রসরোডে’ রয়েছে।