পারেন কেবল সাকিবই
সাকিব আল হাসান - ছবি : সংগৃহীত
এক
আকাশ কখনো কালো মেঘে আঁধার হতেই পারে, কিন্তু আকাশের রঙ সবসময়ই নীল। সমুদ্রে কখনো কখনো ভাটা আসতেই পারে, কিন্তু সমুদ্র সবসময়ই ভয়ঙ্কর। তেমনি কখনো একটা খারাপ দিন যেতেই পারে, কিন্তু সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা। কেন তিনি বিশ্বসেরা, তা প্রমাণ করতে সময় নিলেন মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। এখানেই তার ভিন্নতা, এখানেই তিনি সবার থেকে আলাদা। তিনি জয় পছন্দ করেন, তিনি জয়ে অবদান রাখতে ভালোবাসেন, কিন্তু কখনো দায়ী হতে চান না। কিন্তু তিনি তো মানুষ, সব দিন তো আর সমান যায় না, তিনি তো ভাগ্য বিধাতার ইচ্ছের বাইরে না : ৪-০-৫০-০।
কথায় আছে, ভাগ্য সদা সাহসীদের পাশে থাকে, আর বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিবের চেয়ে সাহসী আর কে আছে? সেদিন নিরাশ করেছিলেন, কিন্তু আজ তার বিনিময় দিয়েছেন। আঁধারের পরেই তো আলো আসে, রাতের শেষেই তো প্রভাত হাসে। সাকিবের বেলায় হয়তো তাই। সেদিন সমর্থকের মুখে আঁধার নামিয়েছিলেন। অন্য কেউ হলে ভেঙে পড়ত নিঃসন্দেহে, কিন্তু তিনি সাকিব বলে সেই আঁধারেই নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। এ যেন বড় লাফ দেবার আগে খানিকটা পিছিয়ে দৌড়ে আসা বা শিকারীর তীর নিক্ষেপের আগে ধনুকের সুতাটা পিছিয়ে আনা। অন্তত এই ম্যাচের পারফর্ম তো তাই বলে : ৩.৪-১-৯-৪!
▪️দুই
প্রত্যাবর্তন রাঙাতে তার থেকে ভালো আর কে পারে? অতীত ইতিহাস আর পরিসংখ্যান, সবই তার পক্ষে কথা বলে। যদিও এই ম্যাচটা প্রত্যাবর্তনের ছিল না, নিজেকে প্রমাণেরও ছিল না, তবে ছিল চ্যালেঞ্জ জয় করার সুযোগ। আর চ্যালেঞ্জ জয় করতে সাকিব থেকে পাগলপ্রায় আর কে আছে? চ্যালেঞ্জ পেলেই তো তিনি বদলে যান, ফিরেন ভয়ংকর রূপে। ২০১৪ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে কলার খোসা ছুড়ে ঝুড়িতে ফেলা নিয়ে তার চ্যালেঞ্জ নেয়ার গল্পটা আজও ভেসে বেড়ায় মানুষের মুখে মুখে।
আগের ম্যাচে ৫০ রান দেয়ায়, তার উপর চ্যালেঞ্জ ছিল এই ম্যাচে। প্রশ্ন উঠেছিল তিনি কি পারবেন আজ নিজেকে স্বরূপে ফেরাতে? উত্তরটা স্কোরবোর্ডেই পেয়ে যাবেন, যখন দেখবেন ৩.৪-১-৯-৪! তিনি চ্যালেঞ্জ জিতেছেন, কিন্তু এরই মাঝে অনন্য এক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন। লিখে ফেলেছেন এক অম্লান ইতিহাস। ছুঁয়ে ফেলেছেন একটি অনবদ্য শতক; বল হাতে উইকেটের শতক। টি-২০ ক্রিকেটে দ্বিতীয় তিনি, স্পিনার হিসেবে অবশ্য সবার আগে। শহীদ আফ্রিদি, রাশিদ খান, সুনিল নারিনের মতো বোলারেরাও তার থেকে পিছিয়ে। হয়তো খুব দ্রুত সবাইকে ছাপিয়ে টি-২০ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেটের মাইলফলকটা করে নিবেন নিজের নামে!
▪ তিন
ব্যাটে বলে সমতালে লড়ে যাওয়া অলরাউন্ডার ক্রিকেট বিশ্ব অনেক দেখেছে। তাদের মাঝে গ্যারি সোবার্স, জ্যাক ক্যালিস, ইয়ান বোথাম, ইমরান খান এই নামগুলোই বেশি জ্বলজ্বল করে। কিন্তু এর মধ্যে আধুনিক টি-২০ ক্রিকেটে জ্যাক ক্যালিস ছাড়া খেলেছেন কয়জনে? জ্যাক ক্যালিস খেললেও, এই ফরম্যাটে তাকে সাধারণ একজন ব্যাটসম্যান ছাড়া আর কিইবা বলে চলে? একটা সময় ক্রিকেটে শাসন করা কিংবদন্তী অলরাউন্ডারদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আধুনিক ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান নামটাই আছে কেবল দীর্ঘ সময় ধরে।
ব্যাটে বলে সমতালে ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করে চলেছেন তিনি সেই ২০০৯ সাল থেকে। নিজেকে ইতমধ্যে গড়ে তুলেছেন কিংবদন্তীতুল্য। অসংখ্য সব কীর্তিতে আর ধারাবাহিক নৈপুণ্যে অঅলরাউন্ডার হিসেবে অবস্থান নিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের স্থানে। যদিও বাংলাদেশী হওয়ায় তিনি হতভাগা বলা চলে, দুদিন দারুণ কিছু করে স্টোকস যতটা সম্মান পান, এক যুগেও যা আসেনি সাকিবের ললাটে। তবে সাকিব থেমে নেই, থেমে নেই তার পথচলা। তিনি ছুটে চলেছেন অবিরাম। এই পথচলাতেই গড়ছেন এমন সব কীর্তি, যা নেই আর কারও। এই যেমন কাল গড়েছেন প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-২০ ক্রিকেটে ১০০০ রান আর ১০০ উইকেটের রেকর্ড। যদিও খুব অল্পদিনে হয়তো তা ২ হাজার রান আর শতাধিক উইকেটও হয়ে যাবে, মাত্র ২৭৯ রান কম আছে। তবে চোখ বন্ধ করেই বলা যায়, টি-২০ ক্রিকেটে একমাত্র সাকিবই সেরা, সর্বকালের সেরা!
প্রিয় সাকিব, আপনাকে লেখায় ফুটিঁয়ে তোলার সাধ্য আমার নেই, তবে এইটুকু বলতে পারি ‘সাকিব আল হাসান এমন এক ফুলের নাম, যেই ফুলের সুবাসে গোটা বিশ্ব মাতাল'।