সেদিন ভুলে যেও সব অভিমান, সব দলছুট বেদনা
মেসি - ছবি : সংগৃহীত
টিক টিক স্বরে সেই যে ছুটে চলেছে, কখনো কি থামার নামগন্ধ আছে? কখনো ক্লান্ত হয়ে একটুখানি থমকে দাঁড়াবে? সবাই তো চলার পথে খানিকটা হলেও থমকে যায়, কিন্তু ‘সময়' নামক জিনিসটা কেন একাকী অবিরাম দৌড়ায়? তার সাথে তাল মেলাতে ছুটে ছুটে যে সবাই ক্লান্ত, সে কি পারে না থমকে যেতে সুখের মাঝে খানিকটা সময়জুড়ে ? জানি, ক্লান্ত হয়ে হয়তো আমিই ঘুমিয়ে যাবো কোনো এক পথের বাঁকে, কিন্তু থামবে না সে কোনো দিন, ছুটে চলবে তার গতিতে। শত সুখ-দুঃখে গাথা তার পথচলা, তবুও নেই থমকে যাওয়া। কোনো একদিন তীব্র সুখ নিয়ে কোনো এক জীবনে তার আগমন হবে, আবার কোনো একদিন হঠাৎ তাকে ক্লান্ত করে ফেলে যাবে স্বার্থপরের মতো করে।
নইলে কি আর দীর্ঘ ২১ বছরের সুখটা হঠাৎই অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে? মাত্র ১৩ বছর বয়সে গড়ে উঠা সম্পর্কটা ভেঙে যায় একত্রে থাকার তীব্র ইচ্ছে উপেক্ষা করে! নইলে কি আর ঘরের ছেলে ঘর ছাড়ে বেদনাবিধুর হৃদে, সেদিনের বাচ্চা ছেলেটা তিন সন্তানের বাবা হয়ে ফিরে যায় অন্য ঠিকানাতে? নইলে কি আর তিলে তিলে গড়ে তোলা রাজত্ব ছেড়ে, রাজা ছুটে যায় নতুন রাজ্যের খুঁজে? সময়, তুমি বড্ড বেইমান বটে!
সেদিন স্বর্ণ চিনতে ভুল হয়নি কার্লস রেসজ্যাগের। দেরি করতে মন সায় দিলো না তার, হাতের কাছে কিছু না পেয়ে এক টুকরো সাদা ন্যাপকিন কাগজেই কাজটা সেরে নিলেন, করে নিলেন চুক্তি। কিন্তু কে জানত যে সময়ের বিবর্তনে ওই ন্যাপকিনটাই রুপান্তরিত হবে পৃথিবীর সব থেকে দামী ন্যাপকিনে? ওখানে যে শুধুই একটি চুক্তি সই হয়নি, বরং সূচনা হয়েছিলো এক অম্লান ইতিহাসের। যে ইতিহাস লেখা হবে আরো দীর্ঘকাল। তবে গত জুনের শেষে জুলাইয়ের প্রথম প্রহরে শেষ হয়েছে সেই ন্যাপকিনের মেয়াদকাল। আর তাতেই ভেঙেছে সম্পর্ক, ছিড়েছে আবদ্ধতার সুতো, ফাটল ধরেছে প্রায় ২১ বছরের বন্ধনে, দিনের হিসেবে যা সাত হাজার পাঁচ শ' চার! নিশ্চয়ই বুঝতে বাকি নেই গল্পটা কার? হ্যাঁ, গতকাল আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ হওয়া লিওনেল মেসি আর ক্লাব বার্সালোনার।
যদিও গত মাসজুড়ে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে প্রতি সময়ে। অর্ধেক বেতনে মেসি থেকে যাবেন বার্সাতে, এমন কথাও শোনা গেছে। বার্সালোনা নাকি চুক্তিও তৈরী করে ফেলেছে, এমন গুঞ্জনও উঠেছে। এমন সব খবরে ভক্তকূল যখন নীরবে, মেসি বার্সালোনাতেই থাকছেন তা নিশ্চিতই বলা চলে। আশার পালে বাতাস লেগেছে ম্যানসিটির শত মিলিয়নে জ্যাক গ্রিলিসকে কেনার ফলে৷ ফলে যখন একটু শান্তিতে সুখের দম নেবে, তখনই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এলো বার্সালোনার তরফ থেকে, বলা হলোন ‘বিদায় মেসি'।
ব্যথাতুর মনে ভক্তকুল তবুও আশায় ছিল, চেয়েছিল মেসির দিকে। তারা শুনতে চায় মেসি কি বলে? ফলে গতকাল বিকেলে কর্তৃপক্ষ প্রেস কনফারেন্স ডেকেছে। বিকাল চারটায় প্রেস কনফারেন্স শুরু হওয়ার কথা। প্লেয়ার হিসেবে বার্সেলোনার ঘাঁটিতে হয়তো এটাই মেসির শেষবার। ফলে বার্সালোনার অফিসিয়াল চ্যানেলে ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকেই অপেক্ষায় সাদা-কালো, শিশু-বৃদ্ধ হাজারো মানুষ। সময় যত আগায়, মানুষও তত তীব্রতা পায়। দুই লক্ষ, চার লক্ষ, ছয় লক্ষ হয়ে ক্রমাগতভাবে তা বেড়েই চলেছে। অতঃপর মেসি প্রেস কনফারেন্সে ঢুকেই চোখ মুছলেন। এসেই কাঁদলেন শিশুর মতো। নিজে কাঁদলেন, সবাইকে কাঁদালেন। ভালোবাসার বিচ্ছেদ যন্ত্রণা যে বড্ড কঠিন!
অতঃপর বিদায় বললেন মেসি। সবাই দাঁড়িয়ে জানাল সম্মান। করতালিতে কানে তালা লাগার যোগাড়। যেন কেউ থামছে চাইছেন না। আজ না থামার দিন, আজ হারানোর দিন। যাবার আগে মেসি কান্না ভেজা কণ্ঠে বলে গেলেন-
'আমি আবার আসবো ফিরে, ফিরবো নিজ ঘরে
স্বপ্ন-সারথি হয়ে, সর্বাবস্থায় পাশে থাকবো বলে,
হয়তো তা শিশির ভেজা কোন এক নিশ্চুপ রাতে।
ততদিনে ঠোঁটে রেখো মিষ্টি হাসি, বুকেতে বাসনা,
আর ভুলে যেও সব অভিমান, সব দলছুট বেদনা!'