মেসি রাজি হলেও বার্সা কেন তাকে রাখতে পারল না?
মেসি - ছবি : সংগৃহীত
দীর্ঘ ২১ বছর অর্থাৎ টানা দু'দশকের ও বেশি সময় লিওনেল মেসি কাটিয়েছেন বার্সেলোনাতে। আসন্ন মরসুমে ও ক্লাব এবং ফুটবলার দুজনেই রাজি ছিল তাদের চুক্তির বিষয়ে। এমনকি মেসি তার আগের মরসুমে প্রাপ্ত বেতনের অর্ধেক বেতনেই বার্সেলোনার হয়ে খেলতেও রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। তাহলে কেন বা ঠিক কোন নিয়মের বেড়াজালে এসে আটকাল এই চুক্তি! আমরা সেটাই বিস্তারিত বুঝে নেয়ার চেষ্টা করব।
বার্সেলোনা ক্লাবের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা এবং লা লিগার নতুন ‘ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে' (এফ এফপি) নিয়মের গেড়োতে পরেই এই চুক্তি নতুন করে আর সম্ভব হয়নি। লা লিগার 'এফ এফ পি' অনুযায়ী মেসিকে দলে নিতে গেলে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন ইউরোর যে ঋণ ক্লাবের আছে, তা ব্যালান্স করতে হবে ক্লাবকে। সেজন্য খেলোয়াড়দের বেতন ক্লাবের আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। যা প্রায় অসম্ভব। ফলে নতুন চুক্তি মেসির সাথে করা আর সম্ভব হয়নি।
আগের মরসুমে আদালতের ভয় দেখিয়ে মেসিকে ক্লাবে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বার্তোমেউ। ইতিমধ্যেই উসমান দেম্বেলে, ফিলিপ কুটিনহো, মিরালেম পিয়ানিচের মতো একের পর এক ফুটবলারের পিছনে একগাদা টাকা খরচ করে ফেলে ক্লাব বার্সেলোনা। বেশি পারিশ্রমিকে ফ্লপ তারকাদের আমদানি হওয়ার ফলে বার্সেলোনা আর্থিকভাবে আর ও 'পঙ্গু' হয়ে যায়। ক্লাবের কাঁধে ঋণের বোঝা চাপিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন বার্তোমেউ। দ্বিতীয়বার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হন হুয়ান লাপোর্তা। গত ৩০ জুন ফ্রি এজেন্টে পরিণত হন মেসি। অর্থাৎ আগামী মরসুমে তাকে খেলাতে গেলে ক্লাবকে তার সাথে নয়া চুক্তিতে যেতেই হতো। আর এখানেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় ক্লাবের আর্থিক পরিস্থিতি এবং লা লিগার 'এফ এফ পি' নিয়মটি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সিভিসি ক্যাপিট্যাল পার্টনারসকে (সিভিসি) নিয়ে লা লিগা প্রস্তাব দেয় বার্সেলোনাকে। যা বার্সেলোনার পক্ষে মেনে নেয়া অসম্ভব। কারণ এই প্রস্তাব মানলে অদূর ভবিষ্যতে সুপার লিগের মাঠে গড়ানোর কোনো সম্ভাবনা থাকত না। স্প্যানিশ লা লিগার সাথে ২৭০ কোটি ইউরোর একটা চুক্তি করেছে সিভিসি। এই চুক্তি অনুযায়ী লা লিগা কর্তৃপক্ষ একটা নতুন কোম্পানি তৈরি করবে, যেটির দায়িত্ব হবে স্পনসরশিপ চুক্তিসহ লিগের বাণিজ্যিক দিকটা দেখা। ২৭০ কোটি ইউরোর ৯০ শতাংশই ক্লাবগুলোর মধ্যে বণ্টন করে দেবে লা লিগা কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ ২৭ কোটি ইউরো পাওয়ার কথা ছিল বার্সেলোনার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পেলেই লিওনেল মেসির চুক্তি নবায়নের ঝামেলা মিটে যেত বার্সার। তবে সেক্ষেত্রে চিরতরে বিসর্জন দিতে হতো সুপার লিগের স্বপ্ন।
অর্থাৎ লা লিগার নিয়মের বেড়াজাল এবং ক্লাবের আর্থিক দৈন্যতা মেসির, বার্সার সাথে চুক্তি নবায়ন না হয়ার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস