তিউনিসিয়ায় সৌদি-আমিরাতি চাল ব্যর্থ হবে?
তিউনিসিয়ায় সৌদি-আমিরাতি চাল ব্যর্থ হবে? - ছবি : সংগৃহীত
তিউনিসিয়ায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান পুরো মাগরেব অঞ্চলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোপন পৃষ্ঠপোষকতায় গত ২৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইয়েদ নির্বাহী, বিচার ও আইন সভার উপর সর্বময় কর্তৃত্ব গ্রহণ করার পর এখন তিউনিশিয়ার ভেতরে বাইরে তীব্র চাপের মধ্যে পড়েছেন তার কর্তৃত্বত্বাদী অভ্যুত্থানের ব্যাপারে। তার সিসি স্টাইলের পদক্ষেপে পুরোপুরি সাড়া দিতে রাজি হচ্ছে না সেনাবাহিনী। মিডল ইস্ট আইয়ের সম্পাদক ডেভিড হার্স্ট-এর মতে, দেশটিতে অভ্যুত্থানকারীদের সময় হাতের গণনার মধ্যে চলে এসেছে।
আলজেরিয়ার মতো প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আন নাহদা নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রফিক আবদুস সালামের কয়েক দিন আগে দেয়া এক দীর্ঘ টিভি সাক্ষাতকারের বক্তব্যে মনে হয়েছে তিউনিশিয়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি প্রেসিডেন্টের অভ্যুত্থানকে ভালোভাবে নিচ্ছে না। তিনি নতুন করে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচনের মোকাবেলা করার ব্যাপারে আন নাহদা প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেছেন।
গতি হারাচ্ছে অভ্যুত্থান দেশটির সাম্প্রতিক দিনগুলোর ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণে মনে হয় যে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদের অভ্যুত্থান গতি হারাচ্ছে। তিনি নিজে থেকে দেশ
চালানোর জন্য যে জোরাল বিদেশী সমর্থন পাবেন বলে আশ্বস্ত হয়েছিলেন তা তিনি পাচ্ছেন না। আর তিউনিশিয়ানদের বৃহত্তর এবং বিস্তৃত অংশ এখন বুঝতে পারছে যে কারা রাষ্ট্র, সরকার এবং বিচার বিভাগ পরিচালনা করছে। এর পরিণতিই বা কী হতে পারে।
সাইয়েদের দিক থেকে, তার পক্ষের কাজ বা বোঝাপড়াগুলো যথেষ্ট দ্রুত কাজ করছে না। রাষ্ট্রপতিকে সমর্থনকারী দল পিপলস মুভমেন্টের মহাসচিব জুহাইর মাগজাউই সাইয়েদের সংসদের উপর স্থগিতাদেশ ছয় মাসের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
কিন্তু তিউনিসিয়ার মতো ভঙ্গুর একটি ছোট দেশের জন্য বৈদেশিক সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত যে দেশটি তার বিশাল সরকারি খাতের বেতন ভাতা ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারে না এবং এই বছর নাগাদ শুধুমাত্র বিদেশী ঋণ পরিশোধ খাতে ৬ বিলিয়ন ডলার পাওনা জমেছে। এই অবস্থায় তিউনিসিয়ার অর্থনীতির বিদেশী স্টেকহোল্ডাররা কী ভাবছেন তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ আর তারা সাইয়েদ যা শুনতে চাইছেন সেভাবে কথা বলছে না।
সংসদ সচল করার চাপ তিউনিসিয়ান এবং ইতালীয় উভয় সূত্রের মতে জার্মানি, ইতালি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা সবাই সাইয়েদকে বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পার্লামেন্ট পুনরুদ্ধার করতে হবে। ডেভিড হার্স্ট তার তিউনিসীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছেন, আমেরিকানরা তাকে তার ক্ষমতা দখলের পক্ষে গণসমাবেশ করতে বাধা দিয়েছে। তারা সবাই পার্লামেন্টের স্পিকার ও আন নাহদার প্রধান রশিদ ঘানুশির পাশাপাশি দলের অন্য নেতাদের কাছে সমর্থনের বার্তা পাঠিয়েছেন।
সাইয়েদকে বার্তাগুলো ব্যক্তিগতভাবে দেয়া হলেও, নিন্দার পাবলিক বার্তাগুলো অভ্যন্তরীণভাবেই দেয়া করা হয়। মার্কিন সিনেটর জিম রিচে এবং সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেন্দেজ বলেছেন, 'তিউনিসিয়ায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতায় তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। রাষ্ট্রপতি সাইয়েদকে অবশ্যই গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলতে হবে যা মার্কিন-তিউনিসিয়া সম্পর্ককে সমর্থন করে এবং সেনাবাহিনীকে সাংবিধানিক গণতন্ত্রে তার নির্ধারিত ভূমিকা পালন করতে হবে।'
সাইয়েদ এই সব উপেক্ষা করার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারেন, আর তিনি মনে করতে পারেন যে আমিরাতি ও সৌদিদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন যে তারা তাকে উদ্ধার করবে। কিন্তু উপসাগরীয় অর্থের এই প্রতিশ্রুতিগুলোকে বাস্তব হিসেবে গ্রহণ করার আগে তার উচিত সুদানিদের জিজ্ঞাসা করা যে তাদের অভিজ্ঞতাটি কেমন ছিল।
হার্স্ট উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে যখন ওমর আল-বশিরকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় করা হয়, তখন সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সুদানকে ৩ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই সাহায্যের মধ্যে মাত্র ৭৫০ মিলিয়ন ডলার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আর ২০১৯ সালে সামরিক বাহিনীর সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তি হওয়ার পর আর কিছুই দেয়া হয়নি। এখন সৌদিরা সুদানে একটি যৌথ তহবিলে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আরেকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ যাবৎ এর মধ্য থেকে মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
সৌদি-আমিরাতের দেয়া প্রতিশ্রুতি ও ডেলিভারি দুটি যে ভিন্ন জিনিস তা সুদান এখন বুঝতে পারছে আর এর মধ্যে, সুদানে মুদ্রাস্ফীতি ৪০০ শতাংশে বেড়ে চলেছে। সেখানকার লোকেরা ওমর বশিরের আমলে ভালো ছিল বলে মনে করলেও সে অবস্থা ফিরিয়ে আনার সুযোগ তাদের সামনে আর নেই। আলজেরিয়ার উদ্যোগ তবে আলজেরিয়ার সরকার নিয়ে সাইয়েদের সবচেয়ে বেশি চিন্তা করা উচিত।
তিউনিসিয়া বড় প্রতিবেশীদের সীমান্তবর্তী একটি ছোট দেশ। মিসর বা সংযুক্ত আরব আমিরাত যারা এই অভ্যুত্থান সংগঠিত ও উপকরণের যোগান দিয়েছিল তারা কেউ এর প্রতিবেশীদের মধ্যে নেই।
আলজেরিয়া একটি মৃদু-নরম পদ্ধতির সাথে কাজ শুরু করেছে। আলজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রামতানে লামামরা দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল মাদজিদ তেব্বোনের কাছ থেকে একটি মৌখিক বার্তা দেয়ার জন্য তিউনিসে গিয়েছিলেন, কিন্তু এর বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়নি। তিনি মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সাথে দেখা করতে কায়রো যান, যার পর মিশরের রাষ্ট্রপতি এক বিবৃতি দেন, যেখানে বলা হয়, ‘তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদ এবং
দেশটির স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এবং ভ্রাতৃপ্রতীম তিউনিসিয়ার জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য তাদের সামর্থ্য এবং তাদের দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সবকিছু করতে দুপক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছেছে।’
আলজেরিয়ার পক্ষ থেকে অনুরূপ কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। যখন এটা স্পষ্ট হয় যে তাদের বার্তাটিতে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে না, তখন আলজেরিয়ার পরবর্তী কর্মকর্তা কথা বলেন সেনাবাহিনীপ্রধান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইদ চেংগ্রিহার সাথে। তিনি বলেন যে ‘আলজেরিয়া এবং এর জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তগুলো কল্পনার মূর্তি নয় কারণ যারা সন্দেহ পোষণ করে তাদের কেউ কেউ দাবি করে, তবে প্রকৃত সত্য হলো যা সকলের কাছে রয়েছে’।
কয়েক দিন আগে, আলজেরিয়া থেকে পরিচালিত সৌদি মালিকানাধীন আল আরাবিয়া টিভির
স্বীকৃতি প্রত্যাহার করা হয় এই অভিযোগে যে চ্যানেলটিকে ‘ভুল তথ্য প্রচার’ করছে। এই জেনারেল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসরকে সরে যাওয়ার জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কতাই জারি করেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আলজেরিয়া তিউনিসকে তার আঙ্গিনা এবং ত্রিপোলির প্রবেশদ্বার হিসাবে বিবেচনা করে, যেখানে তিউনিসিয়া ও লিবিয়া উভয়ের ইভেন্টে স্পষ্ট আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব রয়েছে। মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও রাশিয়া গাদ্দাফি-যুগের জেনারেল খলিফা হাফতারকে লিবিয়ার ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল ও হাফতারের বাহিনী ত্রিপোলি শহরের কেন্দ্রের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল তুর্কি ড্রোনের ধাক্কা দেয়ার আগে। হাফতার ব্যর্থ হন এবং ফলস্বরূপ, পূর্ব ও পশ্চিম উভয়ের সহায়তায় সেখানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
লিবিয়ায় ব্যর্থ হওয়ার পর, আমিরাতিরা এখন তিউনিসিয়ায় একই লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে। আলজেরীয়রা অন্তত এটিকে সেভাবে দেখে। আর তাদের এই দেখাটাকে সঠিক বলেই মনে হয়। আলজেরিয়ার উর্ধ্বতন একটি সূত্র উল্লেখ করেছে, 'এই অভ্যুত্থান সফল হওয়ার ব্যাপারে কোনো দিগন্ত রেখা নেই। আমরা দাবি করেছিলাম যে কাইস সাইয়েদ যেন [রশিদ] ঘানুশির সাথে আলোচনা করেন এবং আমরা ঠিক জানি কিভাবে মিসরীয় এবং আমিরাতিরা এই অভ্যুত্থানকে বাস্তবায়ন করেছিল। আমরা তিউনিসে অন্য আরেক হাফতারকে দেখতে চাই না। আমরা তিউনিসে এমন কোনো সরকার দেখতে চাই না যা এই বাহিনীর অধীন।' এটা বেশ পরিষ্কার এবং মোটামুটি সোজা সাপ্টা একটি বার্তা।
লিবিয়া নিয়ে ইতালিয়ানরাও চিন্তিত। দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রোডি বলেছিলেন যে তিউনিসিয়ায় যা ঘটছে তা অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা নয় : ‘স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঝুঁকির পরিণতি তিউনিসিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে যাবে। আমরা, ইউরোপীয়রা ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ তীরে রাজনৈতিক প্রভাব হারাচ্ছি।’
তিনি বলেন, কেবল কোভিড -১৯-এর বর্ধিত বিপদই নয়, অভিবাসীদের প্রত্যাশিত তরঙ্গও ইতালিকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
তুর্কি সরকার তিউনিসিয়ার ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন, অন্তত এই অনুভূতির কারণে নয় যে মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আঙ্কারার সাথে সাম্প্রতিক অচলায়তন সৃষ্টি তুরস্ককে প্রকৃত পদক্ষেপ থেকে বিভ্রান্ত করার একটি কৌশল হতে পারে।
তিউনিসিয়ার বিরুদ্ধে যা করা হয়েছে তা তুরস্কের জন্য কোনোভাইে মেনে নেয়ার মতো নয়। এটি এ কারণে নয় যে এরদোয়ান রশিদ ঘানুশিকে পছন্দ করেন। তিউনিশিয়ার সাথে তুরস্কের ভূমধ্যসাগরে অনেক বড় স্বার্থের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
লিবিয়ায় তুরস্কের শক্তি প্রদর্শন ছিল নির্ণায়ক। এটি কেবল হাফতারকেই নয়, তার পিছনে থাকা সমস্ত শক্তির পরিকল্পনাও ব্যর্থ করে দিয়েছে : রাশিয়ান, আমিরাতি, ইসরাইলি ও ফরাসি, যাদের সবাই এক সময় বা অন্যভাবে সামরিকভাবে হাফতারকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু তুরস্ক কি ত্রিপোলির ওপর চাপ বজায় রাখার পরিকল্পনায় বল থেকে চোখ সরিয়ে নিতে পারবে, যা সব সময় তিউনিসিয়া ছিল? জবাব হলো পারবে না।
সাইয়েদ না শুনলে কী হবে?
তিউনিসে ফিরলে দেখা যাবে সাইয়েদ কথা শুনছে না। ইতালীয় কূটনীতিকরা মাথা আঁচড়েছেন। তিনি বুঝতে পারছেন না যে গণতন্ত্র হলো বহুত্ববাদ। আর এটি দুর্নীতির অভিযোগে সংসদ সমস্যদের বিরুদ্ধে জনতুষ্টিবাদি নেতা হিসেবে কাজ করার বিষয়ও নয়। ২০১৯ সালে, যখন সাইয়েদ একজন বহিরাগত রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি স্পষ্টভাবে তার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। তার নির্বাচনী কর্মসূচির বর্ণনা দিতে গিয়ে সাইয়েদ বলেছিলেন: ‘আমি একটি নতুন ভিত্তি [বহু বছরের জন্য], একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছি ... যেখানে রয়েছে একটি নতুন রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা এবং একটি নতুন সাংবিধানিক পাঠ।'
সাইয়েদ যোগ করেন, যদি তিনি রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হন, তাহলে তিনি আইনসভা নির্বাচন থেকে মুক্তি পাবেন। তিনি তখন বলেছিলেন, 'দেখুন : পশ্চিমা দেশগুলোতে সংসদীয় গণতন্ত্র দেউলিয়া হয়ে গেছে, এবং তার সময় শেষ হয়ে গেছে ... ফ্রান্সে হলুদ ভেস্ট এবং আলজেরিয়ায় ও সুদানে কী চলছে তা দেখুন। দলগুলি বিলুপ্ত হওয়ার দিকে যাচ্ছে। তাদের যুগ শেষ হয়ে গেছে। তাদের মৃত্যুর জন্য হয়তো আরো কিছু সময় লাগতে পারে, কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে অবশ্যই তাদের ভূমিকা শেষ হয়ে যাবে। বহুত্ববাদ নিজেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে... আমরা ইতিহাসে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছি। এটাই নতুন বিপ্লব।'
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী তখন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন : 'সমস্যাগুলো কি দলগুলোর সাথে বা তিউনিশিয়ানদের সাথে যারা পড়েন না?' সাইয়েদ জবাব দিলেন : 'সমস্যা হচ্ছে পার্টি। তাদের ভূমিকা শেষ হয়ে গেছে।'
তিনি তিউনিসিয়ায় সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোকে দমন করার জন্য তার স্পষ্ট অভিপ্রায়ের কথাও উল্লেখ করেন এবং বলেন, 'আমার একটি প্রকল্প আছে যার লক্ষ্য হলো সমস্ত সামাজিক সমর্থনের ইতি ঘটনো, তা [তিউনিসিয়া] থেকে হোক বা বাইরে থেকে, কারণ সেগুলো আমাদের বিষয়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।'
সতর্ক ঘণ্টার কারণ এটাও বলতে হবে যে সাইয়েদের নিকটতম মিত্র, মিসর কোনো ভালো উদাহরণ নয়। ২০১৩ সালে সিসির সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা গ্রহণের সময়ের চেয়ে আজকের দিনে এটি অতুলনীয় দরিদ্র ও দুর্বল দেশে পরিণত হয়েছে। যেদিন মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদের সাথে তার পূর্ণ সমর্থন দেয়ার জন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন, সেদিনই রুটিতে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন সিসি। সাদাত যুগের পর এটি প্রথমবারের মতো নেয়া ছিল যা একটি দাঙ্গাকে উস্কে দেয়। মিসরের বিড়ম্বনা কি সত্যি সত্যিই তিউনিসিয়ার জন্য অনুসরণীয় একটি মডেল হতে পারে? বর্তমান পরিসংখ্যান অনুসারে মিসরে তিউনিসিয়ার তুলনায় দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ২০২০ সালে তিউনিসিয়ায় দারিদ্র ১৯ শতাংশের বিপরীতে মিসরে ৩১ শতাংশ।
প্রশ্ন হলো কায়েস সাইয়েদ যদি সত্যিই কথা না শোনেন তাহলে কী হবে? আসল বিষয় হলো সাইয়েদের আশেপাশে আরো অনেক তিউনিশিয়ান আছেন তাদের শুনতে হবে। কারণ সাইয়েদের অস্থিরতা আর ‘ধর মার কাট’ ধরনের শাসন তাদেরও প্রভাবিত করতে শুরু করেছে।
সাইয়েদ তার বাহিনী দিয়ে তিউনিসিয়ান বার অ্যাসোসিয়েশনকে অবরুদ্ধ করে রাখে একজন আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করতে। কিন্তু, আইনজীবীরা দৃঢ ছিলেন এবং গ্রেফতারের জন্য মেহেদী জাগরোবাকে প্রদান করতে তারা অস্বীকার করে।
ফলস্বরূপ, সামরিক বিচার বিভাগ পিছু হটে এবং সোমবার জাগরুবা এবং সংসদে আল-কারামা কোয়ালিশনের সদস্য চারজন এমপির বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে। এটি হলো পিছু হটার শুরু। এটি কেবল একটি সর্বগ্রাসী পপুলিস্ট প্রেসিডেন্ট বা ইসলামপন্থী অধ্যুষিত সংসদের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। এটি এর চেয়েও বেশি কিছু। তিউনিশিয়ানরা নিজেদের জিজ্ঞাসা করছে যে সাইয়েদ তিউনিসিয়াকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
ভূমধ্যসাগরের আশেপাশে তার প্রতিবেশীদের উদ্বেগ মূলত প্রত্যক্ষ ও প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের তর্কের মধ্যে নিহিত নয়। তারা তিউনিসিয়ার স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। অস্থির সাইয়েদ তাদের বিপদের প্রতিটি কারণ সম্পর্কে সতর্ক ঘণ্টার মুখোমুখি নিয়ে এসেছে। তারা আর তাকে বিশ্বাস করে না, তারা তার প্রতি আস্থা রাখে না, এবং তারা আর তাকে সমর্থনও করে না। ডেভিড
হার্স্টের শেষ কথাটি হলো, ‘আমি মনে করি অভ্যুত্থানের দিনগুলো হাত গণনার মধ্যে চলে এসেছে।’ সম্ভবত তিউনিশিয়ায় সৌদি, আমিরাতি, মিসরীয় ইন্ধনে চালিত একনায়ক বিপ্লবের ইতি ঘটেতে যাচ্ছে। এর পর কী হবে সেটি হতে পারে নতুন বিশ্লেষণের বিষয়।