যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান ফ্রেমওয়ার্ক

মো: বজলুর রশীদ | Aug 05, 2021 07:26 pm
যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান ফ্রেমওয়ার্ক

যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান ফ্রেমওয়ার্ক - ছবি : সংগৃহীত

 

অতিসম্প্রতি গঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান ফ্রেমওয়ার্ক। এটি গঠনে পাকিস্তান রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে এবং মধ্য এশিয়ায় তার অবস্থান সংহত করে সম্প্রীতি ও বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই ফ্রেমওয়ার্কে ভারতের পরিবর্তে পাকিস্তান বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়েছে। চীনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে এই জোটের সম্মিলিত উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য পাকিস্তান ও উজবেকিস্তান অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। তা ছাড়াও এই জোট ২০১৬ সালে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান ও চীন যে জোট করেছিল, তা থেকেও অনুপ্রাণিত হয়েছে। এখন ২০১৬ সালের ‘মেকানিজমে’ রাশিয়াও সংযুক্ত হওয়ার জন্য তোড়জোড় করছে। যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে আলাপানুসারে সেনা প্রত্যাহারের পর পাকিস্তান-আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান রেলওয়ে ব্যবহার করতে চায়। অন্য দিকে রাশিয়া শতাব্দী পুরনো লক্ষ্যে ভারত মহাসাগর উপকূলীয় দেশের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে উদগ্রীব। গত জুন মাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলাপে উঠে আসে যে, আফগান কূটনীতিকরা বিআরআইয়ের সাথে সংযুক্ত হতে চান, বিশেষ করে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর ও গোয়াদর বন্দরে সংযুক্তি কাবুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই কূটনৈতিক বোঝাপড়া প্রমাণ করে পাকিস্তানের নতুন কৌশল যথেষ্ট কাজ দিয়েছে। গত মার্চে রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা ইসলামাবাদে যে ‘নিরাপত্তা ডায়লগ’ উন্মোচন করেছিলেন, তারই ফলাফল এটিকে মনে করছেন অনেকে। এভাবে সব স্টেকহোল্ডারের সাথে পাকিস্তান ও উজবেকিস্তান ‘উইন-উইন’ অবস্থানে রয়েছে।

ভারতের জন্য অবশ্যই বিষয়গুলো সুখবর নয়। ভূরাজনৈতিক কৌশলে পাকিস্তান কয়েক মাসে যে উন্নতি করেছে, ভারত গত এক দশকেও তা অর্জন করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র এক স্টেকহোল্ডার হিসেবে অনেক আঞ্চলিক বিষয়ে পাকিস্তানে প্রভাব ফেলবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, যদিও দিল্লি সেটি অস্বীকার করে আসছে। তা ছাড়া আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোকাস ভারত থেকে পাকিস্তানের দিকে সরে যেতে পারে, যা ভারতের জন্য সুখের নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করেও একটি গ্রহণযোগ্য বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা পাকিস্তানের সাথে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে আসছিলেন; বাইডেন গুরুত্বপূর্ণ এ পলিসিকে কাজে লাগিয়েছেন। ভারতের সাথে বিশেষ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আমেরিকা পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চায়। কেননা আফগানিস্তানে শান্তির জন্য পাকিস্তান একটি মৌলিক ফ্যাক্টর। যুক্তরাষ্ট্রের আরো একটি উদ্দেশ্য নিহিত আছে। তা হলো পাকিস্তান যেন পুরোপুরি চীনের কক্ষপথে ঢুকে না যায়। চীনের বিপক্ষ সামরিক শক্তি হিসেবে ভারতকেও বড় প্রয়োজন ওয়াশিংটনের। বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়ার সাথে ভারতের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে পারে। ‘ক্লাডিভস্টক-চেন্নাই মেরিটাইম করিডোর’ ও ‘নর্থ সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোরে’ উভয় দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। রাশিয়া পরিচালিত ইউরেশিয়া ইকোনমিক ইউনিয়নেও ভারত রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারে। তবে অতিসম্প্রতি কাশ্মির প্রশ্নে রাশিয়া ভারতকে সমর্থন দেয়নি।

ইউরেশিয়ান বাণিজ্যের কারণে চলতি বছর চীনের জন্য শুভ না হলেও উজবেকিস্তানের সাথে বাণিজ্য বেশ ভালোভাবেই চলছে। সদ্যসমাপ্ত আর্থিক বছরে এ ক্ষেত্রে ট্রেড ভলিউম ছিল ৬.৪ বিলিয়ন ডলার। চীনের রফতানি ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ও উজবেকিস্তান থেকে আমদানি ১.৯ বিলিয়ন ডলার। পাশের কাজাখিস্তানের সাথেও চীনের বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য। ২০১৫ সাল থেকে চীন উজবেকিস্তানের ট্রেডিং পার্টনার। গেল বছর উজবেকিস্তানের এক হাজার ৬৫০ প্রতিষ্ঠান বেইজিংয়ে বসে কারবার শুরু করে। উজবেকিস্তান ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নে পর্যবেক্ষকের পদমর্যাদা পেয়েছে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনে সদস্য পদের জন্য উজবেকিস্তান চেষ্টা করছে। রাশিয়ার এ সুযোগ প্রদান কাজে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

উজবেকিস্তানের সেনা বহর, সাথে তাজিকিস্তান ও রাশিয়ার কমান্ডো সেনারা, তাজিক-আফগান সীমান্ত পাহারা দেয়ার জন্য অগ্রসর হয়েছে। রাশিয়া-উজবেকিস্তান যৌথ মহড়া ১-১০ আগস্ট খাতলুন প্রদেশের তারমিজ প্রশিক্ষণ এলাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তারমিজ আফগান সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে, সেখানে কমপক্ষে দুই হাজার সেনা জমায়েত হচ্ছে। ২০০ ইউনিট মিলিটারি হার্ডওয়্যার ড্রিলে থাকছে। মহড়া আফগান সীমান্ত ঘেঁষে চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। এটি তিন দেশের প্রথম সামরিক মহড়া। রাশিয়া জানায়, এই ড্রিল মধ্য এশিয়ার টেরিটরিয়াল ইন্টিগ্রিটিকে আরো শক্তিশালী করবে। তাজিক সেনাবাহিনীও শেষের পাঁচ দিন অংশ নেবে। উজবেকিস্তানের সাথে রাশিয়া ও চীনের যে বাণিজ্য তরী ভাসানো হয়েছে, সেখানে প্রতিযোগিতা থাকলেও কোনো বিরোধ নেই।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us