কার্ডিফ ফিরে এলো মিরপুরে
কার্ডিফ ফিরে এলো মিরপুরে - ছবি : সংগৃহীত
১৮ জুন ২০০৫ কার্ডিফ থেকে ৩০ আগস্ট ২০১৭ সালের মিরপুর, দূরত্বটা ছিল এক যুগেরও বেশি। তবে এবার আর দূরত্বটা খুব বেশি দূর যেতে পারেনি, চার বছরের ব্যবধানে ৩ আগস্ট ২০২১-এ ফুরিয়েছে অপেক্ষা। টেস্ট, ওয়ানডে শেষে এবার টি-টোয়েন্টিতেও পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিলেছে জয়ের দেখা। নিজ ডেরায় বাঘেরা কতটা ভয়ঙ্কর, তাই যেন বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়া। হলুদে ক্যাঙ্গারুদের বেশ ভালোভাবেই বুঝিয়েছে লাল-সবুজের বাঘেদের সক্ষমতা। জয়টা এসেছে দাপট দেখিয়ে, দর্প চূর্ণ করে। একদম ক্ষুধার্ত বাঘেদের মতো করে!
জল্পনা-কল্পনা, শঙ্কা আর ভয় অনেক ছিল, প্রশ্ন ছিল সাকিব, সৌম্য, মোস্তাফিজ দলে থাকবেন তো? বৃষ্টির পূর্ভাবাসও শোনা যাচ্ছিল। একাদশ কেমন হবে, তা নিয়েও ভাবনা ছিল। তবে সব শঙ্কা দূর হয়েছে, তারা তিনজনও দলে থেকেছে, বৃষ্টির সম্ভাবনাও হারিয়েছে সময়ের সাথে। এরই মাঝে মাহমুদউল্লাহর ভাগ্যের পুনরাবৃত্তি, আবারো টস হার। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ। টস হারে ভয় নেই, ম্যাচটা না হারলেই তো হলো!
অস্ট্রেলিয়ার দলটা ব্যাটিং শক্তিতে খানিকটা দুর্বল দেখালেও, বোলিংয়ে ওরা দুর্লভ, দুর্বার। ভয়ঙ্কর স্টার্কের সাথে টাইয়ের কম্বিনেশন, হ্যাজলউড তো স্লো পিচে বরাবরই রাজা। স্পিনেও কম কিসে? দলে আছেন জাম্পা, ট্যানার, আগাররা। বলা চলে বৈচিত্র্যের মিশেলের এক পারফেক্ট বিষাক্ত বোলিং লাইন-আপ৷ যাহোক, খানিকটা ভয় পাবারই কথা। কিন্তু কোথায় মিলল তার দেখা? দ্বিতীয় বলেই স্টার্ক কে যে নাইম করলেন সীমানা ছাড়া!
ব্যাটিংয়ে বাঘেদের দাপটটা ওই পর্যন্তই। সময়ের সাথে সাথে যেন ব্যাটিং উপমা হারিয়েছে ব্যাখ্যা। শুরু থেকেই এলোমেলো সৌম্যের আর সৌম্যতার দেখা মেলেনি, যেভাবে ফিরেছেন এককথায় বলা চলে স্বেচ্ছায় আত্মাহুতি। অতঃপর সাকিব, মাহমুদউল্লাহ নেমেছেন, কিন্তু বাড়েনি রানের গতি। এরই মাঝে নাইম ফিরলেন ডট বলের বোঝা নিয়ে, ২৯ বলে ৩০ রানে, ২০ এসেছে দুই ছক্কা আর দুই চারের মারে। একাধিক জীবন পেয়েও ক্লান্ত সাকিব ৩৩ বলে ৩৬ রানে যখন ফিরলেন, ১৭ ওভারে দল মাত্র শতক ছুঁয়েছে। সোহান, শামীম এদিন ব্যর্থ, তবে প্রয়োজনে আফিফ জ্বলে উঠেছেন আপন শক্তিতে৷ ১৩২ রানের টার্গেটা বলতে গেলে এসেছে তার ওই ১৭ বলে ২৩ রানের ছোট্ট ইনিংসটাতে ভর করে।
টি-২০ ক্রিকেটের মারকাটারি যুগে রান দু'শ'র ঘর পাড়ি দেয় হরহামেশাই বলা চলে। মিরপুরের মাটি স্লো হলেও ১৬০/৭০-এর দেখা প্রায়ই মেলে। তবে আজকের দেখায় বোঝা যাচ্ছিলো ১৪০ রানও যথেষ্ট হতে পারে। কিন্তু ১৩২ রানই যে অনভিজ্ঞ এই অস্ট্রেলিয়া দলের কাছে পাহাড়তুল্য হবে, সেই কথা কে জানে? ০/১, ১০/২, অতঃপর ১১/৩; অর্থাৎ ৩ ওভারেই নেই ৩ উইকেট। বলাই চলে শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশ চেপে ধরেছে বেশ জোরেশোরে। অধিনায়ক ওয়েড আর অভিজ্ঞ মার্শ চেষ্টা করলেও তা শুধুই পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে। ১০৮ রানেই ওরা গুটিয়ে গেছে।বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতেছে ২৩ রানের ব্যবধানে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-২০ জয়ের জন্য অভিনন্দন অবশ্যই পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচ জয়ের আনন্দ পেলেও কিছু সূক্ষ্ম ভুলে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দূরে রয়েছে। বিশেষ করে ইনিংসে প্রায় অর্ধশত (৪৭) ডট বল খেলা প্রশ্নবিদ্ধ নিঃসন্দেহে। তাছাড়া, সৌম্য আর নাইমের আউটগুলো বড্ড বেশি দৃষ্টিকটু লেগেছে। সাকিব আল হাসান রান পেলেও, তার স্বাদ পাওয়া যায়নি। সাকিবের ফিটনেসে ঘাটতি কেউ লক্ষ্য করেন কি? তবে সব থেকে বেশি খারাপ লেগেছে ব্যাটিং লাইনআপটা, তরুণ বলে কি আফিফ-মেহেদীরা আরেকটু ওপরে সুযোগ পাবে না? বিশেষ করে আফিফের মাঝে মনে হয়েছে নাম্বার ৪/৫ সামলানোর যোগ্যতা আছে। দেখা যাক কী হয় আজকের ম্যাচে।
আজকের ম্যাচেও যে ১৩০+ করেই যে জিতে যাবেন, তা বলা যায় না। বরং তা একটু বেশিই আত্মবিশ্বাস মনে হয় আমার কাছে। শুরু থেকে সামান্য সহায়তা পেলে ১২০/৩০ টপকাতে পারবে ওরা অনায়াসে। প্রতিদিন তো আর মেহেদী প্রথম বলে উইকেট পাবেন না, বা নাসুমের ভাগ্য তার পক্ষে থাকবে না। আজকের উইকেটগুলোতে নাসুমকে তার ভাগ্য বেশ ভালোভাবেই সহায়তা করেছে। তাছাড়া, ওদের হোমওয়ার্ক যথেষ্ট কড়া, বুঝাই যাচ্ছে সাকিব আল হাসানকে বেশ ভালোভাবেই পড়ে এসেছে। সুতরাং, নাসুমের দূর্বলতা খুঁজতে বা সক্ষমতা বুঝতে ওরা যথাসাধ্য চেষ্টাই করবে নিঃসন্দেহে।
ভয়ের কিছু নেই, হারার ভয়ে লড়াই না করারা কখনো বীর হতে পারে না। সাহসীদেরই বীরের তকমা জোটে। বাংলাদেশকেও তাই সাহসী ব্যাটিং করতে হবে। বিশেষ করে সৌম্য সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। সাকিবকেও ব্যাটে-বলে নেতৃত্ব দিতে হবে সম্মুখ থেকে। সাথে আশা করি সাকিব আজকের ম্যাচেই আন্তর্জাতিক টি-২০ উইকেটের শতক স্পর্শ করবে। সেই সাথে বাংলাদেশকে আরও একটা জয় এনে দেবে। সিরিজ জয়ের পথে ছুটবে ২-০ তে। শুভকামনা বাঘেদের জন্য...
তবে নিঃসন্দেহে আজকের ম্যাচের সেরা প্রাপ্তি ছিল বাংলাদেশের জয়ে হাততালি দিতে থাকা অস্ট্রেলিয়া দলের ছবিটা। নিঃসন্দেহে এক অভিভূত দৃশ্য, যার কোনো মূল্য হয় না।