টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যোগ্য সাকিব?
সাকিব আল হাসান - ছবি : সংগৃহীত
ক্রিকেট পাগল জাতি আমরা। ক্রিকেটেই খাই, ক্রিকেটেই ঘুমাই, ক্রিকেটেই খুঁজি ভালোবাসা। লাল-সবুজের একটা জয়ে এত সুখ পাই মনে, বাকি সব ভুলে ভেসে যাই আনন্দ-উন্মাদনার স্রোতে। ব্যর্থ হলে ব্যথিত হই, কিন্তু তবুও স্বপ্ন দেখি বুক ভরে। তবে এরই মাঝে নির্দিষ্ট কোনো একজনকে মনে ধরে যায়, তার খেলায় মুগ্ধ হই বলে। পরিভাষায় যাকে ভক্ত, সমর্থক বা ফ্যান বলে।
যাহোক, গতকাল তামিম ইকবালকে নিয়ে লিখেছিলাম, বিষয়টা কেউ স্বাভাবিকভাবে নিলেও, না করা সত্ত্বেও কিছু ভাই প্রশ্ন তুলেছেন 'শুধু তামিমকে নিয়ে কেন লেখা, সাকিব কি আন্তর্জাতিক টি-২০-এর যোগ্য? সাধারণ সাকিব আল হাসানকে নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তার জবাব তিনি ব্যাটে-বলে দেয়ারই চেষ্টা করেন হরহামেশা। কিন্তু আমি তো আর তার মতো ব্যাট-বলে বাধা দিতে পারব না, তবে পরিসংখ্যান ঘেটে তাকে নিয়েও লেখা যায় খানিকটা।
সাকিব আল হাসান। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ শেখরে সমাদৃত এক নাম। দেশ সেরার তকমা খুলে, যিনি গায়ে জড়িয়েছেন বিশ্ব সেরার খেতাব। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সাকিব আল হাসান বিধাতার এক মহিমান্বিত দান। সাকিবের গুরুত্ব শুধু দেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে। আইপিএল এর মতো বড় টি-টোয়েন্টি আসরেরও এক বড় নাম তিনি, বিগ ব্যাশ, পিএসএল, সিপিএল সহ আরও একাধিক টি-২০ ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্বকারী বাঙালি তিনি। সুতরাং তার টি-২০ সক্ষমতা সম্পর্কে খানিকটা ধারণা এর থেকেই চলে আসে। তিনি যদি টি-২০ ক্রিকেটের উপযুক্তই না হতেন, তবে কি বিশ্বজুড়ে টি-২০ দলে তাঁর এতো কদর?
এখন পর্যন্ত ৭৭ ইনিংসে সাকিব আল হাসান ব্যাট হাতে জাতীয় দলের হয়ে দেশের পক্ষে টি-২০ ক্রিকেটে রান করেছেন ১৬০৪। গড় সংখ্যা ২৪, স্ট্রাইকরেট ১২৫। অবশ্যই খুব বেশি নয়, কিন্তু একেবারে মন্দও নয়, যদি ধারাবাহিকতা থাকে। চলুন দেখি কোন দলের বিপক্ষে সাকিবের কেমন পারফর্ম-
পাকিস্তানের বিপক্ষে গড় ৪২, স্ট্রাইকরেট ১২৮।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে গড় ৩১, স্ট্রাইকরেট ১২২।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গড় ৩৬, স্ট্রাইকরেট ১২৬।
ভারতের বিপক্ষে গড় ১২, স্ট্রাইকরেট ১০৭।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গড় ২৭, স্ট্রাইকরেট ১৪২।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গড় ১২, স্ট্রাইকরেট ৯৯।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গড় ১২, স্ট্রাইকরেট ১০৫।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গড় ২৬, স্ট্রাইকরেট ১৩৪।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গড় ২০, স্ট্রাইকরেট ১৪৫।
নেপালের বিপক্ষে গড় ৩৭, স্ট্রাইকরেট ২০৬।
শ্রীলংকার বিপক্ষে গড় ২০, স্ট্রাইকরেট ১১০।
স্ট্রাইকরেট ও গড় বিবেচনায় সাকিব আল হাসান প্রিয় প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডসহ, ভারত, সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাট হাতে ব্যর্থই বলা চলে। নিঃসন্দেহে যা সাকিব আল হাসানের সাথে মানানসই নয়। আর একধরনের কাকতালীয় বিষয়ও জড়িয়েছে এই তিন দলকে কেন্দ্র করে, ওই তিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সাকিব আল হাসান খেলেছেন সমান ৬টি করে ম্যাচ। আর সেই ম্যাচগুলোর গড় রানটাও সাকিবের একই কাতারে, ১১+ এর ঘরে! মানে ম্যাচ সংখ্যা আর গড় রান, এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সবই সমান।
যাহোক, সাকিবের টি-২০ ক্যারিয়ারে অর্ধশতক এসেছে ৭৭ ম্যাচে ৯ টি, দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। এই ৯ হাফসেঞ্চুরির ৩টি পাকিস্তানের বিপক্ষে, আর দুটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আর একটি করে অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড আর রাশিদ খানের আফগানিস্তানের বিপক্ষে। অবাক করা বিষয় হলো, বাংলাদেশ কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজ পর্যন্ত কোন টি-২০ ম্যাচই খেলেনি!
সাকিব আল হাসান তার খেলা সর্বশেষ ১৩ ম্যাচে রান করেছেন যথাক্রমে- ১৯(১০), ৬০(৩৮), ২৪(২২), ৬১(৪৩), ৪২*(২৬), ০(১), ১(৩), ১৫(১৩), ১০(৯), ৭০*(৪৫), -- ( - ), ১২(১০), ২৫(১৩)। মোট রান ৩৪৬, গড় ৩৫.৬। যার স্ট্রাইকরেট ১৪৮.৫০! অর্থাৎ প্রায় দেড়শতক। সুতরাং, সাকিব টি-২০ ক্রিকেটের যোগ্য না বা সাকিব ফুরিয়েছেন তা বলার পূর্বে বেশ কয়েকবার ভাবার প্রয়োজন হবে।
সাকিব আল হাসানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১২৫ স্ট্রাইকরেট মানে দেশের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল থেকে ৮ রান বেশী সমান তিন সংখ্যার বল থেকে হবে তার ব্যাটে। দেশের আরেক সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম থেকেও ৫ বেশি, আর ফিনিশার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থেকে ২ বেশি স্ট্রাইকরেটে রান করে এসেছেন সাকিব আল হাসান। এভারেজটা তামিম ইকবাল থেকে ১ ধাপ কম হলেও, মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ থেকে এগিয়ে তিনি।
এখানে শুধু ব্যাটিংটা তুলে ধরলাম। কারণ বোলিংয়ে তিনি অতুলনীয় নিঃসন্দেহে। চরম সমালোচকও তার বোলিংয়ের সমালোচনা করতে নিঃসন্দেহে দ্বিতীয়বার ভাববে। কারণ, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান দেশ তো বটেই, বিশ্বের সেরা বোলারদের একজন। স্পিনার হিসেবে সবারই সেরা। আর মাত্র ৫ উইকেটের অপেক্ষা, তবেই টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় বোলার ও প্রথম স্পিনার হিসেবে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করবেন মি. অলরাউন্ডার। সুতরাং, সাকিবকে ব্যাটসম্যান হিসেবে কোনো কারণে দলে না রাখতে চাইলেও বল হাতে পাবার জন্য অবশ্যই তাকে যে কেউ দলে রাখতে চাইবে৷ আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে তার ইকোনমিটাও লোভ করার মতো আকর্ষণীয়। মাত্র ৬.৮২!
সুতরাং, বলাই যায় সাকিবের সাথে অন্য কারো তুলনা আসেনা। তবে সাকিবের ব্যাট হাতে আরও উন্নতির প্রয়োজন। বিশেষ করে ধারাবাহিকতা রক্ষায় মন দেয়া আবশ্যকীয়। আর ভারত, নিউজিল্যান্ড আর সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে তার লজ্জাজনক পারফর্মকে ঢেকে ফেলা প্রয়োজন তাদের বিপক্ষে দারুণ কিছু ইনিংস খেলে। আমরা বিশ্বাস করি সাকিব পারবেন, কারণ সাকিব পারেন। ও হ্যাঁ, আর মাত্র ৫ উইকেট পেলে বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে ১০০০ রান ও ১০০ উইকেটের মালিক হবেন বাংলার এই সূর্যসন্তান। আর সেই জন্য সেরা সুযোগ তার সামনে, আগামীকাল হতে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৫ ম্যাচ টি-২০ খেলবেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। শুভকামনা...