তামিম বাস্তবতা

আফফান উসামা | Aug 01, 2021 11:44 am
তামিম ইকবাল খান

তামিম ইকবাল খান - ছবি : সংগৃহীত

 

বাংলাদেশের ক্রিকেটে উৎসব লেগেছে। ঘরে ঘরে যার আমেজ ছুঁয়েছে। পাঁচবারের বিশ্বজয়ী দল বাংলাদেশে এসেছে। মনে ভয় নিয়েও বাঙালি জমজমাট এক সিরিজের অপেক্ষা করছে। প্রতিপক্ষ শক্তিমত্তায় ঢের এগিয়ে। স্টার্ক, হ্যাজলউড আর জাম্প, অ্যাগারসমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়া নিঃসন্দেহে ভীতি ছড়াচ্ছে। অপরদিকে নানা ইস্যুতে বাঘেদের দলেও ধস নেমেছে। তামিম, মুশফিক, লিটন নিঃসন্দেহে হারিয়েছে, শঙ্কা আছে সাকিব, মোস্তাফিজকেও ঘিরে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠার কথা, বাংলাদেশ পারবে তো জিততে? কিন্তু তা ছেড়ে প্রশ্ন উঠেছে সবার মাঝে, তামিম ইকবালের টি-২০ ক্রিকেটের যোগ্যতার দৌড় কত দূর তা নিয়ে। কী আর করা, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলুন আমরাও খুঁজি টি-২০ ক্রিকেটের তামিমকে।

তামিম ইকবাল খান- নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক স্তম্ভের নাম। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে ব্যাট হাতে দারুণ সব কারুকার্যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন দেশ হতে দেশান্তরে। দারুণ সব অর্জনে দেশকে করেছেন গৌরবান্বিত। লাল-সবুজের পতাকাকে করেছেন বিশ্ব ক্রিকেটে সমাদৃত। তার ব্যাটে সবুজের ক্যানভাসে কত শত রূপকথার গল্পই না আঁকা হয়েছে, লেখা হয়েছে কত অম্লান ইতিহাস। তা সত্ত্বেও ক্রিকেটের স্বীকৃত সর্বসংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে তার পারফর্ম নিয়ে কেন উঠে বা উঠছে প্রশ্ন? তিনি তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক অমূল্য রত্ন।

এমনি আবেগ সব দূরে ঠেলে চলুন বাস্তবতায় ফিরি, রূপকথার স্বপ্ন থেকে সত্যটা খুঁজি। আবেগের স্রোত দূরে ঠেলে, বাস্তবতার মিশেলে আসলে একটুখানি চমকে যেতেই হবে, পরিসংখ্যান লজ্জা দিচ্ছে বলা চলে। ক্রিকেটে পরিসংখ্যানই সব নয়, কিন্তু তবুও কিছু প্রশ্ন আছে, যার উত্তর পরিসংখ্যানের পরিমাপেই খুঁজতে হয়। চলুন তাই চেষ্টা করি।

তামিম ইকবাল খান দেশের হয়ে সর্ব সংক্ষিপ্ত ওভারের ক্রিকেটে তামিম খেলেছেন ৭৮ ম্যাচ। এই ৭৮ ম্যাচে প্রায় ২৪ গড়ে রান করেছেন ১,৭৫৮, স্ট্রাইকরেট প্রায় ১১৭। জাতীয় দলে আছেন, এবং অন্তত ১০ ম্যাচ খেলেছেন, এমন ওপেনারদের মাঝে যা সব থেকে কম স্ট্রাইকরেট। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অন্তত ২০ ম্যাচ খেলেছেন এমন ওপেনারদের মাঝে তামিমের স্ট্রাইকরেট সব থেকে কম। অর্থাৎ, ২০ ম্যাচ খেলা পঞ্চাশ ওপেনারের মাঝে ৫০তম অবস্থানে তামিম ইকবাল খান।

ক্যারিয়ারে অর্ধশতক করেছেন সাতটি, যার তিনটাই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আর একমাত্র সেঞ্চুরিটি ওমানের বিপক্ষে। মূলত, এই বড় ইনিংসগুলোই তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের গড় ও স্ট্রাইক রেট বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। অন্যথায় এতটা দৃঢ় হয় না। ৭টি হাফ সেঞ্চুরির ৩টা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে, দুটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। একটা করে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বাকি ৭১ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৪৭ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। অর্থাৎ বড় দলগুলোর বিপক্ষে বরাবরই নীরব থেকেছে তামিমের ব্যাট। এখন চলুন দেখি কোন দলের সাথে তামিম ইকবালের পারফর্ম কেমন-

আফগানিস্তানের বিপক্ষে গড় ১৭, স্ট্রাইকরেট ৮৪।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গড় ১৮.৫০, স্ট্রাইকরেট ৭২।
ভারতের বিপক্ষে রান গড় ১৮, স্ট্রাইকরেট ১০৭।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গড় ১০, স্ট্রাইকরেট ১১৮।
পাকিস্তানের বিপক্ষে গড় ২০, স্ট্রাইকরেট ১২০।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে গড় ১২, স্ট্রাইকরেট ৯৬।
শ্রীলংকার বিপক্ষে গড় ২৩, স্ট্রাইকরেট ১১৯।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গড় ২৩, স্ট্রাইকরেট ১২৩।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গড় ২৬, স্ট্রাইকরেট ১২৬।

তামিমের পরিসংখ্যানের বিপরীতে গিয়ে তার পক্ষে উত্তর দিতে পারেন এই বলে যে, তার ওপর দায়িত্ব বেশি, তিনি এক পাশ হতে ম্যাচটাকে ধরে রাখেন, অর্থাৎ দাবি করতে পারেন ম্যানেজমেন্ট তাকে এক প্রান্ত আগলে রাখার দায়িত্ব দিয়েছে। তবে তাই যদি হয়, তবে স্ট্রাইক রেটটা না হয় হজম করতে কষ্ট হলেও মেনে নিলাম, কিন্তু এভারেজ! তথা গড়ের পরিমাণ এত কম কেন? তার দায়িত্বই যদি হয় একপাশ আগলে রেখে রান করা, তবে তো তার গড় অন্তত ৩০+ হওয়া উচিৎ।

শেষ ১৫ ম্যাচে তামিম ইকবালের রান যথাক্রমে ৫০(৪২), ১৫(১৩), ২(৮), ০(১), ৪২(৪৮), ৫(৬), ০(১), ৭৪(৪৪), ২১(১৩), ৫(৭), ১৫(১৬), ৮(৬), ৩৯(৩৪), ৬৫(৫৩), ৪১(৩৩)।

শেষ ৩ ইনিংসের রান সংখ্যা দেখে ভাবতে পারেন তামিম ইকবাল খান খুব ভালো ফর্মে আছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের আগের দুই ম্যাচ খেলেছিলেন পাকিস্তানের মাটিতে। প্রথম ম্যাচে ৩৪ বলে ৩৪ করলেও, পরবর্তী ম্যাচে পেয়েছিলেন অর্ধশতক। কিন্তু তার জন্য খেলে ফেলেছিলেন ম্যাচের প্রায় অর্ধেক বল (৫৩)। সেই ম্যাচে তার ব্যাটে রান পেলেও তাতে তার নিজের গড় বাড়ানো লাভ ছাড়া আর কিছুই হয়নি। বিশেষজ্ঞরা সেই ইনিংসটাকে ম্যাচ হারার কারণ বলেও উল্লেখ করেছেন নানা সময়ে, নানা জায়গাতে।

যাহোক, তার পরও তিনি দলের নিয়মিত সঙ্গী। তার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠেনা, কথাও হয় না। বরং তার জায়গা নিশ্চিত করে খোঁজা হয় তার সঙ্গী। পাওয়ার প্লেতে পর্যাপ্ত রান না উঠার অজুহাতে পরিবর্তন করা হয় সঙ্গীকেই। কিন্তু কেন আর কী জন্য জানি প্রয়োজনীয় পারফর্ম না করেও তামিম ইকবাল থেকে যান দলের ভরসার প্রতীক হয়ে। কিন্তু কেন এমনটা হবে? সঙ্গী ক্রিকেটার চাপ নিয়েও ব্যর্থ হওয়ার ফলে যখন বাদ যাচ্ছেন, তখন চাপহীন খেলে তিনি ব্যর্থ হলেও কি করে প্রশ্নহীন থেকে যাচ্ছেন? শুধুই সিনিয়র ক্রিকেটার বলে! এমন যদি হয়, তবে তরুণ ক্রিকেটাররা ভুল শিক্ষা পাবে।

একজন তামিম ইকবালের মূল্য আমরা জানি, বুঝি তার গুরুত্ব। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার সীমাবদ্ধতাটাও মেনে নিতে হবে। বলতে পারেন বিকল্প কে? বিকল্প খুঁজতে সময় আর সুযোগ দিতে হবে। তাদেরকে প্রান্ত আগলে রাখা নয়, ভয়ডরহীন ক্রিকেটের শিক্ষা দিতে হবে। এমনটা করতে ভয় থাকবে ব্যর্থ হবার। কিন্তু তাতে কী, একটা সময় সাফল্য ধরা অবশ্যই দেবে। প্রান্ত আগলে রাখার চেয়ে একা ম্যাচ বের করে আনার চেষ্টায় মন দিতে হবে।

শেষ কথা, এখানে তামিম ইকবালের সমালোচনা করা হয়নি, বরং তার খেলার ভুল ধরনটা তুলে ধরা হয়ছে। তামিমকে ব্যর্থ বলিনি, বলেছি টি-২০ ক্রিকেটে তার আরো উন্নতির প্রয়োজন আছে। জানি ভক্তদের এসব লেখায় খারাপ লাগতেই পারে, কিন্তু সত্যটা তো মেনে নিতেই হবে।
আপনারাই কী বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, তামিম ইকবালের স্ট্রাইকরেট টি-২০ ক্রিকেটের সাথে মানানসই আছে? উদাহরণ দিতে বা তার পক্ষে বলতে অন্য কোনো ক্রিকেটারের উপমা না দিয়ে যুক্তিশীল জবাব দিলেই ভালো লাগবে। আর তামিমের কাছে আশা থাকবে, আপনি আমাদের ভুল প্রমাণ করবেন, করেই যাবেন বার বার। সত্যি বলছি, আপনার কাছে ভুল প্রমাণ হলে সব থেকে বেশি আনন্দ আমারই হবে। তাছাড়া লাভটা তো বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই হবে!


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us