ফয়সালকে চেনেন তো?

আফফান উসামা | Jul 31, 2021 12:27 pm
ফয়সাল

ফয়সাল - ছবি : সংগৃহীত

 

বাবা! ভালোবাসায় পূর্ণ এক গম্ভীর শব্দ। যাদের মনের ভেতরটা মমতায় ঘেরা, মোহনীয় কোমল। কিন্তু বাইরের দিক খানিকটা গম্ভীর, রাগত্ব স্বর। চরিত্রটা কারো ক্ষেত্রে ভিন্নও হতে পারে... তবে ফয়সালের ক্ষেত্রে তা নয়। অবশ্য বাবা রাগ করবেনই না কেন? পড়ালেখায় কখনো তৃতীয় না হওয়া ছেলেটার যে চোখ পড়েছে ভিন্নতায়। অন্য সব বাবার মতো তারও যে স্বপ্ন ছেলে আমার লেখাপড়া করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বড় কিছু হবে। কিন্তু ছেলে মায়ায় পড়েছে খেলাধুলার!

খেলতেও বাধা নেই, খেলুক। কিন্তু খেলতে হবে ফুটবল। ছোট্ট বেলাতে তাই বাবা ফুটবলটাই ছেলেকে দিয়েছিলেন খেলনা সামগ্রী হিসেবে। যার কিছু ছবি আজও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়ায়। যাহোক, ফুটবল পায়ে ক্রমশ ভালোও করতে শুরু করেছিল ছেলেটা। কিন্তু বল পায়ে দারুণ করা ফয়সাল যে তবুও নিজের জন্য বেছে নিয়েছে হাতে খেলা বলকেই। তার বড় বল থেকে ছোট্ট বলের খেলা ক্রিকেটটাই বেশী প্রিয়। কারণ তাতে বিশ্বকাপ খেলা যাবে।

এহেন কর্মকাণ্ডে ভীষণ রেগে গেলেন ছেলের ওপর। গোস্বা ধরে রাখতে না পেরে একদিন তো বলেই ফেললেন- ‘তোকে খেলতে বলি ফুটবল, আর তুই কি না খেলিস ক্রিকেট। ক্রিকেট একটা খেলা হলো! কী হবে মড়ার খেলাটা খেলে? মাশরুর রেজার রাগটা অবশ্য স্বাভাবিক। মাশরুর রেজা! উহ... বলাই হয়নি। ফয়সালের বাবার নামই হলো মাশরুর রেজা।

মাশরুর রেজা কৃষিবিদ। তবে ধ্যানজ্ঞান তার ফুটবলেই। স্থানীয় এলাকায় নামকরা কোচ ও ফুটবল সংগঠকও তিনি। নিজেও ফুটবল খেলেছেন। স্বপ্ন ছিল একদিন জাতীয় দলের হয়ে গায়ে চড়াবেন লাল-সবুজ জার্সিটা। ওই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বাস্তবতার ভিড়ে হারিয়ে গেছে স্বপ্নটা। প্রত্যেক বাবাই চান তার অতৃপ্ত, অপূর্ণ স্বপ্ন নিজের সন্তান পূরণ করবে। ফলে ছেলের যখন খেলাতেই মনযোগ তবে বড় হয়ে বড় ফুটবলার হোক- এই তো চাওয়া ছিল বাবা মাশরুর রেজার।

যাহোক, চাওয়ার অপূর্ণতায় বেজায় রেগে ছিলেন ছেলের ওপর। রাগটা একপর্যায়ে এত দূর চলে গেল যে এবার ছেলের ব্যাট ভাঙতে শুরু করেছিলেন। যা হবার তাই হলো, ফয়সাল ছুটে গেল মায়ের কাছে। গলা জড়িয়ে কেঁদেছিলও ফুপিয়ে ফুপিয়ে। মা অবশ্য ছেলের পাশে বরাবরই বেশ ভালোভাবেই ছিলেন। ছেলে যখন খেলতে যেতে চাইত, বাবার চোখের আড়ালে মা-ই দেখিয়ে দিতেন পথ। যেদিন ঘরে ফিরতে দেরি হতো, খেলার জন্য স্কুল কামাই যেত- বাবার মারের হাত থেকে মায়ের স্নেহই তাকে বাঁচাত বরাবর।

তবে সব বাধা জয় করে, প্রতিভার অসামান্য নিদর্শন রেখে ফয়সাল যখন পুরো প্রস্ফুটিত হতে বিকেএসপির পথে, তখন সেদিনের ব্যাট কেটে দেয়া বাবাটাই রক্ত পানি করে, মাথার ঘাম পায়ে জড়িয়ে উপার্জিত ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেলেকে কিনে দিয়েছিলেন নতুন ভালো ব্যাট ও প্রয়োজনীয় ক্রীড়া সামগ্রী! অবশ্য বাবার এই ত্যাগ বৃথা যায়নি। ফয়সাল তার বাবাকে নিরাশ করেনি। দিয়েছে চাওয়ার থেকেও বেশি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us