বিশ্ব মানবতার বিরুদ্ধে আমেরিকার অপরাধ
বোমা ফেলছে মার্কিন বিমান - ছবি : সংগৃহীত
বিশ্ব মানবতার বিরুদ্ধে বড় অপরাধগুলোর তালিকা যদি করা হয় তাহলে দেখা যাবে পরাশক্তি আমেরিকা সেগুলো বিগত সাত দশক ধরে করেছে। এসব অপরাধের প্রতিক্রিয়া হয়েছে বিভিন্নমুখী। রাষ্ট্র হিসেবে ইরাক লিবিয়া ও সিরিয়াকে তারা মোটামুটি ধ্বংস করে দিতে পেরেছে। এসব দেশের উন্নত সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের গৌরবকেও মুছে দিতে পেরেছে তারা। এই মানুষেরা এখন অধীনস্থ পরাস্ত। তারা এখন হীনমনা। ভিয়েতনামকেও তারা প্রায় ধংস করে দিয়েছিল। তবে তারা এখন উঠে দাঁড়িয়েছে। এসব দেশে আমেরিকা ও তার নেতৃত্বাধীন বাহিনী ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধগুলো করেছে। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। তাদের রাষ্ট্রীয় অবকাঠমো ভেঙে দিয়েছে।
আমেরিকান প্রভাবাধীন পশ্চিমা মিডিয়ায় এর উল্লেখ খুব কম। তারাই যুতসইভাবে বয়ান তৈরি করেছে, তালেবানরা ‘জঙ্গি’। পশ্চিমা মিডিয়া হয়ে সারা বিশ্বের জন্য বিগত দুই দশক ধরে তালেবানের বিরুদ্ধে যে খবর উৎপাদন করা হয়েছে তার সারমর্ম হচ্ছে, তারা নারীবিদ্বেষী। তালেবানের নির্দেশ, প্রত্যেক নারী একজন পুরুষের অধীনে থাকবে। বাইরে বেরুতে হলে একজন পুরুষের সাথে বেরুতে হবে। পুরো শরীর ঢাকা ছাড়া বাইরে তারা বেরোতে পারবে না। তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে না। আর পুরুষরা দাড়ি কাটতে পারবে না। তাদের ‘ইসলামী পোশাক’ পরতে হবে। তালেবানরা ভেঙে ফেলেছে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। এ ধরনের বাহ্যিক আচরণগত কঠোরতা প্রদর্শনের দীর্ঘ তালিকা মিডিয়া তৈরি করেছে তালেবানের বিরুদ্ধে যা মূলত ধর্মীয় গোঁড়ামি। এ ধরনের কট্টর গোঁড়ামির বহু নজির রয়েছে সারা বিশ্বের অসংখ্য উপজাতির মধ্যে। এমনকি প্রধান ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন গোঁড়ামি রয়েছে। এগুলোকে উপস্থাপন করা হচ্ছে তালেবানকে দানব হিসেবে প্রমাণ করতে। এমন ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে কয়জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, কয়জন ভিটেমাটি হারা হয়েছে সে হিসাব কোথাও নেই। এসব ধর্মীয় গোঁড়ামির বয়ান এতটা জোরালো প্রদর্শন করা হয়েছে যে, বোমা বর্ষণ করে হাজার হাজার মানুষ মারার প্রতিদিনকার খবর তার নিচে চাপা পড়ে হাওয়া হয়ে গেছে। পরমাণু বোমার একমাত্র ব্যবহারকারী আমেরিকার অন্যায়ভাবে আফগানিস্তান হামলার চেয়ে বড় করে মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে তালেবানি এ ‘দানবতাকে’।
টুইন টাওয়ার হামলার জন্য গুহা ও জঙ্গলে বসবাসকারী তালেবানের ওপর দায় চাপানো হলো। এর সপক্ষে একটা বয়ান রচনা করা ছাড়া তাদের কাছে তখন কোনো প্রমাণ ছিল না। ধর্মীয় গোঁড়ামির যেসব অভিযোগ তালেবানের বিরুদ্ধে সেটা যে প্রপাগান্ডা নয় তার প্রমাণও নেই। আফগানদের বিরুদ্ধে রচিত প্রপাগান্ডার কোনো সুষ্ঠু সুরাহা না হলেও নতুন এক বাস্তবতা দেখছে বিশ্ব। আফগান যুদ্ধে আমেরিকা ক্ষান্ত দিয়েছে। তালেবানদের সাথে তারা গত বছর আলোচনায় বসে কাতারের রাজধানী দোহায়। তাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযাযী ইতোমধ্যে তাদের প্রায় সব সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে আফগান থেকে। আফগানিস্তান নিয়ে প্রকাশ করা আমেরিকার সাম্প্রতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের রচিত ‘জঙ্গি’ ও ‘সন্ত্রাসী’ শব্দগুলো একবারও তালেবানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেনি।
আমেরিকান প্রশাসন তাদের ‘ন্যারেটিভ’ পরিবর্তন করেছে। নতুন বয়ানে তালেবান এখন জাতীয়তাবাদি। যা মোটামোটি কোনো অপরাধ নয়। আমেরিকার জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ মার্ক মিলি যিনি স্বৈরাচারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বে জেনারেলদের আইকন হয়েছেন সেই মিলি তার বক্তব্যে আফগানিস্তানে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে দেশটির নেতৃত্বের জন্য পরীক্ষা বলে উল্লেখ করেছেন। এই নেতৃত্ব যে শুধু আশরাফ গানির সরকার নয় সেটা বোঝার বাকি নেই। অন্যদিকে একই সময় দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব লয়েট অস্টিন ইসলামিক যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম নিয়েছেন সেগুলোর সাথে তালেবানের কোনো সম্পর্ক যে নেই তার বক্তব্যে তা স্পষ্ট। মোট কথা হচ্ছে ২০ বছর একটানা যুদ্ধ করার পর তারা বুঝেছে এরা তালেবান নয়, এরা মূলত আফগান জাতীয়তাবাদী শক্তি যাদের কাছে এর আগে পরাস্ত হয়েছিল মঙ্গোল, ব্রিটিশ ও সোভিয়েতরা।