ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি : যা বলল তুরস্ক
ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি - ছবি : সংগৃহীত
ভূমধ্যসাগরে অতি সম্প্রতি ঘটা ১২৭ জন অভিবাসী বহনকারী ডুবে যাওয়া নৌকার কমপক্ষে ৪৩ জন নিখোঁজের ঘটনা এই প্রথমবারের মতো হলো না, এমনকি শেষবারের জন্যও না। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এমন মন্তব্য করে ।
"তুরস্ক বা লিবিয়া কোনো দেশই এই অনিয়মিত অভিবাসনের উৎস না," একটি লিখিত বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় এ কথা দাবি করে। 'এই মিশ্র প্রকৃতির অভিবাসনের মূল কারণ নিম্নসাহারীয় আফ্রিকা, আফগানিস্তান এবং সিরিয়ায় অব্যাহত অস্থিতিশীলতা, দ্বন্দ্ব এবং দারিদ্র্য।'
এই নৌকা ডুবির ঘটনায় যাওয়ার জন্য আফসোস করেছে তুরস্ক মর্মাহত, এমনটা বক্তব্যের পাশাপাশি অভিবাসন সম্পর্কে যথাযথ নীতিমালা না থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনা করা হয় বিবৃতিটিতে। এ ঘটনার পর ৮৮ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ৪৩ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, ২০২১ সালে ভূমধ্যসাগরে ৮৬৬ জন অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন।পাশাপাশি সমুদ্রে নিমজ্জমান মানুষকে উদ্ধার করা সকল রাষ্ট্রের আইনি ও নৈতিক বাধ্যবাধকতা বলে বিবৃতিতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
“তবে সমুদ্রে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান ও উদ্ধারের দায়িত্বের ক্ষেত্রে ইইউর দেশগুলোর মধ্যকার সমন্বয় সাধন এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। একই সাথে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব অতিক্রান্ত দেশগুলোর উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব বিষয় একজন অভিবাসীর জীবনের অধিকারের প্রতি হুমকিস্বরূপ, " বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়।
মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে যে অভিবাসন-সমস্যার মূল কারণগুলোর সমাধান না করলে এর কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া এবং অভিবাসন রোধ করা অসম্ভব।
"অন্যথায় যেসব সমাধান প্রয়োগ করা হবে তাতে কেবল অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের যন্ত্রণা এবং সমুদ্রের বুকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলবে," বিবৃতিতে বলা হয়।
তুরস্ক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অভিবাসন-সমস্যার শিকড়ে গিয়ে সমাধান খুঁজতে এবং এর দায়ভার সমানভাবে ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট শনিবার জানায়, তিউনিসিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূল থেকে ১২০ জনেরও বেশি যাত্রী বহনকারী একটি নৌকা ডুবে যাওয়ার পরে অন্তত ৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছে।
রেড ক্রিসেন্টের মঞ্জি স্লিম আজাঁস ফ্রাঁস-প্রেস (এএফপি)-কে বলেন, "শুক্রবার রাতে জারজিস উপকূলে ১২৭ জন অভিবাসী বহনকারী একটি নৌকা ডুবে যাওয়ার পরে আটাশি জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং আরও ৪৩ জন নিখোঁজ রয়েছে।"
উদ্ধারকৃতদের দেয়া বিবরণ অনুযায়ী তিনি আরো যোগ করেন, জাহাজটি লিবিয়ার উপকূলে থেকে যাত্রা করেছিল ।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী বাংলাদেশ, চাদ, মিশর, ইরিত্রিয়া এবং সুদানসহ "বিভিন্ন জাতীয়তার ৮৪ জন অবৈধ অভিবাসী" উদ্ধার করেছে।
জারজিসে উদ্ধারকৃতদের মধ্যে তিন থেকে ৪০ বছর বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছে, মন্ত্রণালয় জানায়। তবে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সঠিক কোনও সংখ্যা তারা জানায় নি।
মন্ত্রণালয়ে পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নৌকাটি সোম থেকে মঙ্গলবার মধ্যরাতের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম লিবিয়ার জুওয়ারা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে।
লিবিয়া ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করার বিপজ্জনক চেষ্টায় লিপ্ত অভিবাসীদের জন্য যাত্রা শুরুর অত্যন্ত প্রচলিত স্থান । গ্রীষ্মের উষ্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ইউরোপ পৌঁছানোর চেষ্টা আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অভিবাসীদের বহনকারী মানবপাচারকারীদের নৌকা থেকে বেশ কয়েকটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে।
উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার জন্য অনিয়মিত অভিবাসীরা যে যাত্রাপথ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে, সেই ভূমধ্যসাগরকে গত মাসে পোপ ফ্রান্সিস "ইউরোপের বৃহত্তম কবরস্থান" হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
গত এপ্রিল মাসেও একই ধরনের এক দুর্ঘটনা ঘটে। ভূমধ্যসাগরে ঔ নৌকাডুবিতে ১০০-রও মানুষ মৃতুবরণ করেছিল।