তিউনিসিয়ায় ভূরাজনৈতিক খেলা
তিউনিসিয়ায় ভূরাজনৈতিক খেলা - ছবি : সংগৃহীত
আরব বসন্তের সূতিকাগার উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে ছোট রাষ্ট্র তিউনিসিয়া। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে দেশটিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হয়। এই নির্বাচনে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের আদর্শে গঠিত আন নাহদা পার্টি।
তিউনিসিয়ার এলিট শ্রেণী এবং ডিপ স্টেট সম্পূর্ণভাবে ডানপন্থার বিরোধী। আর তাই ডিপ স্টেটের ভয়ে (মিসর থেকে শিক্ষা নিয়ে ) সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্টি হয়েও প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেনি আন নাহদা পার্টি। দলটির শীর্ষ নেতা রাশিদ ঘানুশি পার্লামেন্টের স্পিকার নির্বাচিত হন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্টি হলেও দেশ চালাতে ব্যাপক বেগ পেতে হয় আন নাহদা পার্টিকে। কেননা প্রেসিডেন্ট ছিলেন আন নাহদার সম্পূর্ণ বিপরীত ধারার (প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আন নাহদা জিতে আসতে পারেনি)। এছাড়াও দেশটার এলিট শ্রেণী এবং ডিপ স্টেটের বিরোধিতা তো রয়েছেই।
আন নাহদা যে দেশটির ক্ষমতায় থেকেও ক্ষমতাহীন, তার নজির দেখা গিয়েছিল লিবিয়া যুদ্ধের সময়। লিবিয়াতে যুদ্ধে জড়ানোর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগন লিবিয়ার পশ্চিম সীমান্তের দেশ আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া উভয়ের কাছে সহায়তা চান।
আলজেরিয়ার সরকার আদর্শিকভাবে তুরস্কের সরকারের মিত্র না হলেও ভূ-রাজনৈতিক কারণে তুরস্ককে আংশিক সমর্থন জানায়। অপরদিকে তিউনিসিয়ার ক্ষমতাসীন সরকার আদর্শিকভাবে তুরস্কপন্থী হওয়ার পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিকভাবেও তুরস্কের পক্ষে অবস্থান নেয়া তাদের জন্য লাভজনক ছিল। কিন্তু দন্তহীন বাঘ আন নাহদার সরকার তুরস্ককে কোনো সাহায্য করতে পারেনি বিরোধী দল এবং ডিপ স্টেটের বিরোধিতায়।
নামকাওয়াস্তে তিউনিসিয়াতে টিকে থাকা তুর্কি মিত্র আন নাহদারও অবশেষে পতন হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর আন নাহদার এই পতনে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকা রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্লেয়ার সংযুক্ত আরব আমিরাত!
অর্থাৎ তিউনিসিয়াতেও মিসরের মতো ব্রাদারহুডপন্থী সরকারের পতন হতে যাচ্ছে। আর এই দুই দেশেই ব্রাদারহুড পরবর্তী নতুন সরকারের সবচেয়ে কাছের মিত্র যে আরব আমিরাত তা তো বলার উপেক্ষা রাখে না।
আরব বসন্তের পর উত্তর আফ্রিকায় ব্রাদারহুডের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় একটা সময় মনে হয়েছিল এই অঞ্চলে তুরস্ক শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, এই অঞ্চলে ব্রাদারহুডের প্রভাব কমেই ক্ষীণ হচ্ছে এবং শক্তিশালী হচ্ছে ব্রাদারহুডের কট্টর বিরোধী আরব আমিরাত সরকার।
আরব আমিরাত এই অঞ্চলের ৫টি রাষ্ট্রের মধ্যে তিনটি রাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। অপরদিকে তুরস্ক একটিমাত্র রাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা স্থাপন করতে পেরেছে। আর বাকি একটি রাষ্ট্র লিবিয়াতে দুটি সরকার বিরাজমান। যার একটি তুরস্কপন্থী এবং অপরটি আমিরাতপন্থী।
দীর্ঘ স্বৈরশাসনের যাঁতাকল থেকে ২০১১ সালের আরব বসন্তের পর মুক্তি পায় উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো। কিন্তু ওই মুক্তি যে চূড়ান্ত মুক্তি নয়, চলমান সংকটগুলো সেটি বারে বারে দেখায় দিয়ে যাচ্ছে।