লিবিয়া ও আলজেরিয়ায় তুরস্ক-আমিরাত দ্বন্দ্ব

সাইফুদ্দিন আহমেদ | Jul 27, 2021 10:05 pm
লিবিয়া ও আলজেরিয়ায় তুরস্ক-আমিরাত দ্বন্দ্ব

লিবিয়া ও আলজেরিয়ায় তুরস্ক-আমিরাত দ্বন্দ্ব - ছবি : সংগৃহীত

 

তুরস্ক-কাতার এবং আমিরাত-মিসর এই দুই ব্লকের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো লিবিয়া। লিবিয়া বর্তমানে কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। দেশটির রাজধানীসহ পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোর সরকার তুরস্কপন্থী। অপরদিকে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের সরকার হলো আমিরাত ও মিসরপন্থী।

তুরস্কপন্থী পশ্চিমাঞ্চলীয় সরকার আবার জাতিসঙ্ঘ-সমর্থিত। তুরস্ক তাই লিবিয়ার সাথে আন্তর্জাতিকভাবে সমুদ্রসীমা চুক্তি সম্পন্ন করতে পেরেছে ভূমধ্যসাগরে। বলা যায়, ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের কার্যকর মিত্র এখন একমাত্র লিবিয়া। এছাড়াও লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে অনেকগুলো সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করছে তুরস্ক। এছাড়াও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে কাতার সরকার ব্যাপক সহায়তা করে যাচ্ছে।

লিবিয়ার তেলখনির বেশিরভাগই পূর্বাঞ্চলে। পূর্বাঞ্চলের দখলে থাকা সরকারটিকে সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাকআপ দিচ্ছে মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই দুই ব্লকের সরব উপস্থিতির কারণে অদূর ভবিষ্যতে লিবিয়াতে কোনোরূপ রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

অর্থাৎ তুরস্ক এবং আমিরাত ব্লকের দ্বন্দ্বের কারণে দ্বিখণ্ডিতই হয়ে গেল একটি রাষ্ট্র!

 আলজেরিয়া

১৯৫৫ সালে যখন আলজেরিয়ার স্বাধীনতার জন্য যখন জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি হয়, তখন তুরস্ক আলজেরিয়ার পক্ষ না নিয়ে তার পশ্চিমা বন্ধুদের পক্ষে ভোট দেয়। সেই তখন থেকে দীর্ঘ সময় অবধি আলজেরিয়ার সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ভালো ছিল না।

কিন্তু ভূরাজনৈতিক নানা সমীকরণে বর্তমান তুর্কি সরকারের সাথে আলজেরিয়ার ক্ষমতাসীন সরকার কৌশলগত ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। হঠাৎ করে দেশ দুটির সম্পর্কে নাটকীয় পরিবর্তন আসার কারণ হলো

* আলজেরিয়ার উপর দীর্ঘকাল ধরে ফ্রান্সের একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা অর্জন করলেও দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা, অর্থনীতিতে ফ্রান্সের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আলজেরিয়ার বর্তমান সরকার এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চাচ্ছে। আর এজন্য তাদের নির্ভরযোগ্য মিত্র দরকার। আর এক্ষেত্রে তুরস্ক বড় একটা বিকল্প।

* পশ্চিম সাহারা অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী মরক্কোর সাথে আলজেরিয়ার বিরোধ বিদ্যমান। আলজেরিয়া চায়, মরক্কোর কাছ থেকে পশ্চিম সাহারা স্বাধীনতা অর্জন করুক। অপরদিকে মরক্কো পশ্চিম সাহারাকে নিজেদের সার্বভৌমত্বের অংশ মনে করে।

পশ্চিম সাহারা নিয়ে মরক্কো ও আলজেরিয়ার বিরোধে মরক্কোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। চতুর্থ আরব দেশ হিসেবে গত বছর মরক্কোর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আর এই স্বীকৃতি দেয়ার বিনিময়ে মরক্কো পশ্চিম সাহারায় নিজেদের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি আদায় করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আর পুরো প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।১

মরক্কোর এই কূটনৈতিক সফলতাকে টেক্কা দিতে হলে আলজেরিয়ারও দরকার একটি শক্তিশালী মিত্র।

অপরদিকে উত্তর আফ্রিকা তথা মাগরেব অঞ্চলে ও শক্তিশালী মিত্রের অভাবে ধুঁকছে তুরস্ক। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে তুরস্ক এবং আলজেরিয়া হঠাৎ করেই কৌশলগত মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।২

* লিবিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত আলজেরিয়া। লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে তুরস্কপন্থী সরকারের টিকে থাকতে হলে আলজেরিয়ার নৈতিক সমর্থন দরকার। এই বাস্তবতায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান সাহায্যের আহবান করেন আলজেরিয়া সরকারের কাছে। তুরস্ককে নিজেদের অনুকূলে রাখতে লিবিয়া বিষয়ে তুরস্কের অবস্থানকে সমর্থন দান করে আলজেরিয়া।

বর্তমানে আলজেরিয়াতে তুরস্কের বিনিয়োগ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশ দুটির মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন হয়েছে গত বছর। তুরস্ক তার এলএনজি আমদানির বড় অংশ আলজেরিয়া থেকে করে থাকে। অপরদিকে আলজেরিয়াও ইলেকট্রনিকস, টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন কোয়ালিটি পূর্ণ তুর্কি পণ্য আমদানি করে থাকে। এছাড়া আলজেরিয়াতে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে তুরস্ক। যা উত্তর আফ্রিকায় তুরস্কের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ এবং আলজেরিয়ার ক্ষেত্রে ও সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ এটি।৩
তুরস্কের সাথে আলজেরিয়ার সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, ততই আলজেরিয়ার সাথে সম্পর্ক শীতল হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত শাহীর।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us