আফগানিস্তানে ভারতীয় মিশন থেকে ৫০০ কোটি পাকিস্তানি রুপি উদ্ধার!

আফগানিস্তানে ভারতীয় মিশন থেকে ৫০০ কোটি পাকিস্তানি রুপি উদ্ধার! - ছবি : সংগৃহীত
তালেবান আফগানিস্তানে আসলে চূড়ান্ত জয় কিভাবে অর্জন করতে চাইছে সেটি নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা একটি ধারণা অনেকের মধ্যে। আবার তাদের পদক্ষেপগুলোর মধ্যে বেশ পরিকল্পনার ছাপ রয়েছে বলেও মনে হয়। এখন তালেবানরা বিদেশের সাথে সব সীমান্ত প্রবেশপথের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে নিয়েছে। স্থল সীমানা দিয়ে বাইরে থেকে এখনকার পরিস্থিতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ কাবুল সরকারের পক্ষে হবার মতো অবস্থা আর নেই। এর মধ্যে ভারত থেকে কাবুল সরকারের জন্য বিমান যোগে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের খবর গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে বিভিন্ন সংবাদপত্রে বের হয়েছে। একটি ভারতীয় কন্টিনজেন্ট কাবুল সরকারের পতন ঠেকানোর জন্য তাজিকিস্তানের ভারতীয় ঘাঁটিতে মজুত করা হয়েছে বলেও খবর বেরিয়েছে। এসব খবর ভারত সরকার অস্বীকার করেছে। তবে ভারত যে আফগানিস্তানে কৌশলগত এক ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে তা দৃশ্যমান নানা ঘটনায় স্পষ্ট।
তালেবান চীন ইরান তুর্কমেনিস্তান উজবেকিস্তান তাজিক সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নেবার পর পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণও গ্রহণ করেছে। তালেবানের এই পদক্ষেপে ভারত সত্যিকার অর্থেই বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। আকস্মিক এই তালেবান নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের ব্যাপারে দিল্লি খুব বেশি সচেতন ছিল বলে মনে হয় না যার কারণে হঠাৎ করেই ৫০০ কূটনীতিককে ভারতীয় সামরিক পরিবহণ বিমান পাঠিয়ে দিল্লি ফিরিয়ে নেয়ার খবর বেরিয়েছে। আর আফগানিস্তানের পাক সীমান্ত জেলাগুলোতে ৮টির মতো ভারতীয় মিশন অচল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কান্দাহারের একটি ভারতীয় সীমান্ত শহরের মিশন থেকে তালেবান ৫০০ কোটি পাকিস্তানি রুপি উদ্ধার করেছে বলে খবর বেরিয়েছে। ইসলামাবাদের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, এই অর্থ বেলুচিস্তান এবং খায়বার পাকতুনখোয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদ ও অন্তর্ঘাতী কাজে ব্যবহারের জন্য জমা রাখা হয়েছিল।
২০০১ সালের পর আমেরিকা আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিল ভারতের হাতে। দেশটি বেশ কিছু অবকাঠামোও তৈরি করে আফগানিস্তানে। সেখানে এ যাবৎ ৯ বিলিয়ন ডলার ভারত খরচ করেছে বলে জানা যাচ্ছে। এই বিপুল বিনিয়োগের পেছনে অর্থনৈতিক কারণের চেয়ে কৌশলগত কারণ যে বড় তা স্পষ্ট হয় ঘোষিত অঘোষিতভাবে দেশটিতে ১৬টির মতো ভারতীয় মিশন চালানোতে। এই সব মিশনের অধিকাংশই তালেবান নিয়ন্ত্রণে পড়ার কারণে অচল হয়ে পড়েছে। এখন দিল্লির মাথাব্যথা হলো, নতুন পরিস্থিতিতে ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক আফগানিস্তানে সচল রাখার বিষয়টি।
ভারত গোড়া থেকেই তালেবানের সাথে যেকোনো আলোচনার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও আমেরিকা তাদের কথা না শুনে চূড়ান্তভাবে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করছে। ফলে বাধ্য হয়ে রাশিয়া ইরান এবং কাতারের সহায়তায় তালেবানের সাথে তিন দফা বৈঠক করেছে দিল্লি। এসব বৈঠকে ভারতীয় বিনিয়োগ ও কূটনৈতিক তৎপরতা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সহায়তার আশ্বাস চেয়েছেন দিল্লির কর্মকর্তারা, কিন্তু অন্য কোনো দেশ বিশেষত পাকিস্তান ও চীনের স্বার্থের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে না দেয়ার ব্যাপারে তালেবানের অবস্থান ছিল কঠোর। তারা বলেছে, ভারতের বিরুদ্ধে যেমন তারা আফগানিস্তানের মাটি কাউকে ব্যবহার করতে দেবে না তেমনিভাবে অন্য প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধেও আফগানিস্তানের ভূ-খণ্ড কাউকে ব্যবহার করতে তারা দেবে না।
এই পরিস্থিতিতে দিল্লির নিরাপত্তা নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দুই ধরনের মতামতের কথা জানা যাচ্ছে। প্রথমত, কাবুল সরকারকে সব ধরনের সামরিক সহায়তা দিয়ে এবং তালেবানবিরোধী যুদ্ধবাজ গ্রুপগুলোর মাধ্যমে মিত্র সরকারের আয়ু বাড়ানো আর তালেবানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করা। দ্বিতীয় হলো, তালেবানের সাথে সরাসরি সঙ্ঘাতে না গিয়ে তাদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করা। আর দেশটির পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নীতি বিন্যাস করা। এই গ্রুপের ধারণা, ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র যেখানে তালেবান প্রতিরোধের সামনে টিকতে পারেনি, সেখানে ভারতের পক্ষে সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপ করে জয়ী হবার সম্ভাবনা নেই। অধিকন্তু তালেবানের সাথে নতুন করে সামরিক সংঘাতে যাওয়ার অর্থ হবে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে তালেবানকে ডেকে নিয়ে আসা। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং ইসরাইলি লবি প্রথম মতের পক্ষে থাকায় আলোচনার ধারাটি এখনো প্রবল হতে পারছে না বলে জানা যায়। তালেবান অবস্থানে সর্বশেষ আমেরিকান বিমান হামলার ঘটনা এই লবির চেষ্টায় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।