তালেবানের অনন্য যুদ্ধ কৌশল
তালেবানের অনন্য যুদ্ধ কৌশল - ছবি : সংগৃহীত
তালেবানের যুদ্ধ কৌশলে বিস্মিত হচ্ছেন খোদ আমেরিকান জেনারেলরাও। তারা তালেবান বাহিনীর সাবেক প্রধান ইব্রাহিম সদরকে এই সময়ের সেরা কমান্ডার হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। কয়েকমাস আগে মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুবকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। তালেবান রাসূলের সা: যুগের ইসলামের পুরনো যুদ্ধ কৌশলকে নতুনভাবে ফিরিয়ে এনেছে। তারা প্রথম পর্যায়ে আফগানিস্তানের সব স্থল সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। তাজিক উজবেক তুর্কমেন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে জাতিগত প্রধান সম্প্রদায়ের লোকদেরই দায়িত্ব দিচ্ছে যাদের মধ্যে জনগণের আস্থাশীল তাজিক উজবেক গোত্র নেতারাও রয়েছেন। এটি করার পাশাপাশি তালেবানরা কাবুল সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রাদেশিক শহর ও জেলা কেন্দ্রকে অবরোধ করে রাখছে যাতে সেখানে রসদপত্রের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং তালেবানের আহ্বানে আত্মসমর্পণের লোভনীয় অফারে সরকারি সৈন্যরা সাড়া দেয়। এভাবে হাতে গোণা কয়েকটি প্রাদেশিক শহর আর কাবুল ছাড়া বাকি গোটা অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তালেবানের।
সীমান্ত অঞ্চলে তালেবান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ফলে নিরাপত্তা নিয়ে যেমন বেকায়দায় পড়েছে কাবুল সরকার তেমনিভাবে সরকারের রাজস্ব আদায়ও ক্রমেই সঙ্কুচিত হচ্ছে। এক পর্যায়ে বাইরে থেকে জরুরি অর্থ সহায়তা না পেলে কাবুলের সরকার চালানো আশরাফ গনির পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে। অন্যদিকে বিজয়ী শক্তি হিসাবে তালেবানকে সহায়তা করার জন্য অনেক পক্ষই এগিয়ে আসছে।
আফগানিস্তানে পপিজাত ড্রাগ ব্যবসার প্রতিও নজর রয়েছে অনেক মাফিয়া গোষ্ঠীর। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক তাজ হাশমি উল্লেখ করেছেন, হেলমন্দ প্রদেশেই মূলত পপির সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। এক কেজি পপি থেকে উৎপাদনকারীরা যে অর্র্থ পায় তা ড্রাগ বানিয়ে ৫০ থেকে এক শ' গুণ মূল্য সংযোজন হয়ে ভোক্তা পর্যায়ে যায়। ফলে এর সাথে যুক্ত রয়েছে হাজার হাজার কোটি ডলারের মাদক ব্যবসা। হাশমির তথ্য অনুসারে, এই ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্রিটিশ বর্তমান বা সাবেক জেনারেলদের সংযোগ রয়েছে।
তালেবান পরিকল্পনা
তালেবানের পরিকল্পনা সম্পর্কে যতটা জানা যাচ্ছে তাতে তারা আমেরিকার প্রত্যাহারের শেষ মাসটিতে প্রচণ্ড চাপ তৈরি করে রাখবে। কাবুল সরকারের সরবরাহ লাইনকে যথাসম্ভব সঙ্কুচিত করার চেষ্টার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আত্মসমর্পণ ও পক্ষ ত্যাগের এমন এক প্রবাহ তৈরির চেষ্টা করবে যাতে চূড়ান্ত সমঝোতা বা আলোচনায় কাবুল সরকারের নিজেদের নিরাপদ প্রস্থানের বাইরে বড় রকমের কোনো পাল্টা চাপ সৃষ্টির অবস্থা আর না থাকে। এর পর আফগানিস্তানে তালেবান অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা তৈরি করবে যার আওতায় পশতুন তাজিক উজবেক নির্বিশেষে সকল জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা আফগানিস্তান শাসনে অংশীদার হতে পারে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি থাকবে তালেবানের হাতে।
তালেবানরা ‘ইসলামিক আমিরাত’ প্রতিষ্ঠার ধারণা থেকে কিছুটা সরে এসে ‘ইসলামিক নেজামত’ প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই ব্যবস্থায় একদিকে রাষ্ট্রের জন্য এক ধরনের থিওলজিক্যাল নিয়ন্ত্রক কাঠামো থাকবে, আর রাষ্ট্রের দৈনন্দিন কর্ম পরিচালনা করবে প্রতিনিধিত্বশীল জিরগা বা সংসদীয় ব্যবস্থাভিত্তিক সরকারকাঠামো। ৫ বছরের অন্তবর্তী সময়ে আফগানিস্তানের উপযোগী একটি ইসলামী মডেলের গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হবে। তালেবান মুখপাত্র জবিহউল্লাহ মুজাহিদের বক্তব্যেও এর ইঙ্গিত রয়েছে।