মোল্লা ওমরের পরিকল্পনা

মোল্লা ওমর - ছবি : সংগৃহীত
তালেবান আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও আধ্যাত্মিক গুরু মোল্লা ওমরের রয়েছে এই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর অসাধারণ আধ্যাত্মিক প্রভাব। এই নেতা ২০১৪ সালে মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, তাদের ক্ষমতা হারানোর দুই দশকের মধ্যে বিদেশী দখলদারিত্বের অবসান ঘটবে আফগানিস্তানে। এরপর শত বছর ধরে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ আফগানদের হাতে থাকবে। তিনি বলে গিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে আমেরিকান সেনারা চলে যেতে শুরু করবে। আফগানরা ফিরে পাবে তাদের নিজ দেশের নিয়ন্ত্রণ। একেবারে সাদামাটা ও আধ্যাত্মিক জীবনযাপনকারী এই নেতার প্রভাব তালেবান আন্দোলনে এতটা প্রবল যে, তার জীবৎকালে এবং মৃত্যুর পর তালেবান আন্দোলনে অনেক চেষ্টা করেও বড় কোনো বিভক্তি আনা যায়নি। অথচ একাধিক তালেবান আমীরকে আমেরিকান বিমান বা ড্রোন হামলায় হত্যা করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত বজায় থাকা তালেবান আন্দোলনের ঐক্য ও সংহতির পেছনে রয়েছে মোল্লা ওমরের আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা।
আফগানিস্তানের ব্যাপারে মোল্লা ওমর একটি বিষদ অর্থনৈতিক পরিকল্পনাও দিয়ে গেছেন বলে তালেবান সুত্রগুলো উল্লেখ করছে। এই ফর্মুলার বাস্তবায়ন হলে আফগানিস্তানকে আর বিদেশী সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হবে না। এই ফর্মুলা অনুসারে আগের তালেবান শাসনের মতোই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর পপি বা আফিম চাষ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হবে। এর বিকল্প হিসাবে আফগান চাষিরা আবাদ করবে জাফরান। পপি চাষ থেকে চাষিরা যে অর্থ উপার্জন করবে সে একই পরিমাণে অর্থ জাফরান চাষ থেকে আয় সম্ভব হবে। এর বাইরে আঙ্গুর ও বেদানা চাষকেও উৎসাহিত করা হবে।
দ্বিতীয়ত, যে প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদ আফগানিস্তানের রয়েছে সেটিকে সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে: কয়লা, তামা, আয়রন আকরিক, লিথিয়াম, ইউরেনিয়াম, বিরল ধাতব উপাদান, ক্রোমাইট, সোনার, দস্তা, ট্যালক, বারাইট, সালফার, সিসা, মার্বেল, মূল্যবান ও অর্ধ-মূল্যবান পাথর, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম। ২০০৭ সালে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ দ্বারা প্রক্ষেপণ অনুসারে, আফগানিস্তানের অনুত্তোলিত খনিজ মজুতের পরিমাণ ১ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যমানের। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের মাইকেল ই ওহানলন অনুমান করেন যে, আফগানিস্তান যদি খনিজ মজুত থেকে বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করে, তবে এর সামগ্রিক জাতীয় উৎপাদন থেকে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী এবং অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি তহবিল সরবরাহ করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) ২০০৬ সালে প্রক্ষেপণ করেছে যে, উত্তর আফগানিস্তানে গড়ে ২.৯ বিলিয়ন বিবিএল অপরিশোধিত তেল, ১৫.৭ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ৫৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুল্যের তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এই প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগানো গেলে আফগানিস্তানে সম্পদের অভাব হবে না। তৃতীয়ত, সব দেশের সাথে যৌক্তিক সম্পর্ক বজায় রেখে আফগানিস্তানের পুরনো বাণিজ্য রুটগুলো সচল করা। এক্ষেত্রে চীনের রোড অ্যান্ড বেল্ট উদ্যোগ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ জন্য আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ জাতিগোষ্ঠীগুলোর সাথে সংহতি ও সৌহার্দ্যরে সম্পর্কও গড়ে তুলতে হবে। তালেবানরা এর মধ্যেই তাদের বিজিত অঞ্চলে মোল্লা ওমরের এই ফর্মুলা যতটা সম্ভব কাজে লাগিয়ে ‘অসাধারণ’ সাফল্য পাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।