আবারো গৃহযুদ্ধের ডংকা বাজানোর চেষ্টা?
আবারো গৃহযুদ্ধের ডংকা বাজানোর চেষ্টা? - ছবি : সংগৃহীত
আফগানিস্তানে কি আসলেই শান্তিসময় ফিরে আসবে নাকি আবারো গৃহযুদ্ধের ডংকা বাজানোর চেষ্টা করা হবে? পরাজয়ের অনুভূতি নিয়ে পরাশক্তি আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিচ্ছে আর ন্যাটোভুক্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশ একটি উদার সেক্যুলার আফগানিস্তান গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক সম্পদ ব্যয় করে এখন নিজেদের ব্যর্থতাকে সামনে দেখছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে নানা কারণে প্রভাবশালী ইসরাইল পশতুন এলাকাকে নিজেদের হারানো ইহুদি ট্রাইবের বসতির অংশ মর্মে বিশ্বাস থেকে ভারতকে সাথে নিয়ে পাকিস্তান ভাঙ্গার ডক্ট্রিন নিয়ে কাজ করছে মর্মে উল্লেখ করা হয়। তালেবানের বিজয়ে তারা সবাই কি আফগানিস্তান থেকে হাত গুটিয়ে নেবে?
এই প্রসঙ্গে ইসরাইলি থিংকট্যাংক আইএনএসএসের এক নিরীক্ষণে বলা হয়েছে, ‘আফগানিস্তানে আমেরিকান আক্রমণ তার প্রাথমিক লক্ষ্যগুলো অর্জন করেছিল, আল-কায়েদার ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল এবং তালেবান সরকারের পতন ঘটিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে আমেরিকা তালেবানদের পুনরায় ক্ষমতা অর্জন আটকাতে ব্যর্থ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভূখণ্ডে আবার আক্রমণ করা হলে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে আফগানিস্তানের প্রতিবেশীরা এই প্রত্যাহারের ফলে শূন্যতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উদ্বেগের সাথে ভবিষ্যতের দিকে তাকাচ্ছে। এছাড়া, পরাশক্তির উপর মৌলবাদী ইসলামী প্রতিরোধের বিজয় সম্পর্কে তালেবান ও আল-কায়েদার পক্ষ থেকে যে বিবরণ প্রচার করা হবে তা মধ্য প্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলের অন্যান্য সংস্থার অনুপ্রেরণার কারণ হতে পারে। পশ্চিমে ইসরাইল এবং তার মিত্রদের এই সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত করা উচিত যে, আফগানিস্তান বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের ভিত্তি এবং অনুকরণের একটি মডেল হয়ে ফিরে আসবে।’
মূল্যায়নটিতে আরো বলা হয়, ‘আফগানিস্তানে তার উপস্থিতির ২০ বছরের সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল এবং রাষ্ট্রপতি বাইডেন নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন যে, আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিনিয়োগের জন্য কোনো রিটার্ন পেল না। তদুপরি, তালেবান সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে রাশিয়ান, ইরান, তুর্কি এবং চীনা প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেছে, বর্তমানে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে স্বীকৃতি এবং বৈধতা উপভোগ করেছে- এমন সুবিধাগুলো ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাদের অর্জনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। আমেরিকার প্রত্যাহারের পরে তালেবান এবং আল-কায়েদা সম্ভবত আরো একটি বিদেশী সাম্রাজ্যের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য এবং ‘সাম্রাজ্যের কবরস্থান’ হিসাবে পরিচিত আফগানিস্তান থেকে বিতাড়নে তাদের ক্ষমতা এবং ‘কাফের’ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিহাদের বিজয় ঘোষণা করবে। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের ফলে যে শূন্যতা থাকবে তা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের আশেপাশের অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য রাজনৈতিক ও সামরিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।’
ইসরাইলি থিংকট্যাংকের এই মূলায়নে স্পষ্ট, দেশটি এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রধান মিত্র ভারত তালেবান জয়কে কিভাবে দেখছে। এই মূল্যায়নের পাশাপাশি তারা প্রতিরোধমূলক কিছু কর্মসূচি নেবারও চেষ্টা করতে পারে। কাবুল সরকারের জন্য সামরিক সহায়তা প্রদানের যে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে, এর সাথে যোগসূত্র থাকতে পারে এর। তবে সম্ভবত এই সময়টা ইসরাইল ও তার মিত্রদের জন্য আগের মতো অনুকুল নয়। ২০০১ সাল আর ২০২১ সাল বিশ্বের জন্য সম্পূর্র্ণ ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে এসেছে। বিশ্ব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। নতুন লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে চীন-রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এই সময়ে ভারসাম্যকারী শক্তিতে পরিণত হতে পারে মুসলিম বিশ্ব। তাদের গুরুত্ব আগামী দিনগুলোতে অনেক বাড়বে। এর পটভূমি তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে আফগানিস্তানের তালেবান আন্দোলনের বিজয় পরিস্থিতি।
mrkmmb@gmail.com