নেপালি রাজনীতির ৩ সমীকরণ
নেপালি রাজনীতির তিন সমীকরণ - ছবি : সংগৃহীত
নেপালের প্রধানমন্ত্রী খড়গ প্রসাদ অলি বা কে পি অলি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন। গত ২০১৮ সালের প্রথম নেপালি পার্লামেন্টের নির্বাচনে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। তাও আবার সংসদের সিদ্ধান্ত বা তার নিজের পদত্যাগ ইত্যাদি এসবের কোনো কারণে নয়। ১২ জুলাই ২০২১, নেপালি সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে তিনি পদচ্যুত হয়েছেন। আর সেই সাথে নেপালি কংগ্রেসের শের বাহাদুর দিউবা গত ১৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়েছেন। এতে দেড়-দুই বছর ধরে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠা নেপাল ও এর সরকার, নেপালি রাজনৈতিক দলগুলো অলির বিরুদ্ধে নানান অসন্তোষ ও অভিযোগ এসব কিছুর অবসান ঘটল। এ সময়ে বারবার অলির বিরুদ্ধে নিজ দল ও বিরোধীদের অভিযোগ ও অসন্তোষ জেগে উঠলেও তিনি বরং যেকোনো উপায়ে বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলেও ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে গেছেন। এ সময়ে দু-দু’বার সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে বলে প্রেসিডেন্টকে দিয়ে ঘোষণা করিয়েছেন। কিন্তু দু’বারই আদালত তার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে দিয়েছেন। তাই আদালতের রায়ে অবৈধ ও ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যাওয়া অলি এখন রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে। আর এই প্রথম দিউবা সরকার আগামী নির্বাচনের (২০২৩) আগে টানা দেড় বছর আইনগতভাবেই স্থিতিশীল ক্ষমতায় শাসন চালাতে পারবেন বলে নেপালের রাজনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা আশা দেখছেন। কিন্তু কেন এমন হলো? ২০১৮ সালে দুই কমিউনিস্ট পার্টি মিলে টু-থার্ড মেজরিটিতে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু এখন নেপালি কংগ্রেসই কিছু কমিউনিস্টের সমর্থনে সরকার গড়তে সক্ষম হলো কেন?
এক নেপালি দৈনিকে শ্যাম শ্রেষ্ঠ নামে এক কমেন্টেটর যিনি বাম রাজনীতির দিকে চোখ রাখেন তিনি কে পি অলি সম্পর্কে মূল্যায়ন করে লিখেছেন, ‘অলি ক্ষমতার যথেচ্ছ অপব্যবহার করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের রায়ে যে ঐতিহাসিক সুযোগ তাদের হাতে এসেছিল, তাকে হেলায় হারিয়ে ফেললেন। কারণ অলি এক দাম্ভিক, অর্থহীন একগুঁয়ে আর ইগো বা অহংবোধে আচ্ছন্নব্যক্তিত্ব।’ বোঝা যাচ্ছে, যথেষ্ট শক্ত অবজারভেশন এবং সম্ভবত তা সবচেয়ে সঠিক!
অলির পুরনো রাজনৈতিক দল এক ‘কমিউনিস্ট পার্টি’ বলে পরিচিত। কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউনাইটেড মার্কসবাদী-লেনিনবাদী), সিপিবির মতো দল হলেও কিন্তু এটি আবার নেপালের সেকালের পরিবেশে মূলত সংসদীয় ভোটে দাঁড়ানো দল। তাও নেপালে রাজতন্ত্রের আমলের (২০০৮ সালের আগের ২৪০ বছরের রাজতন্ত্র) এমন ভোটে দাঁড়ানো দলগুলো হতো রাজার দিকে মুখ চাওয়া দল; যদি রাজা তার দলকে সরকার গঠন করতে ডাকেন বা মন্ত্রিসভায় নেন, সেটি হতো তাদের সাফল্য; অর্থাৎ নেপাল তখন নাগরিকের হাতে ক্ষমতার রাষ্ট্র নয়, রাজার মালিকানাধীন এক কথিত রাষ্ট্র নেপাল। তাই তাতে ওই সব দলের নামে কমিউনিস্ট শব্দ থাকুক কিংবা কংগ্রেস দল হোক কী-ই-বা আর আসে-যায়। আসা-যাওয়ার কোনো কারণ নেই, এমনই দল ছিল সেগুলো।
কিন্তু সেকালে নেপালের রাজার সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক-ভারসাম্য এমন থাকলেও তাতে ব্যাপক ফাটল ধরে ও পরিবর্তনের সূচনা করেছিল ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে। কারণ ওই বছর থেকে আরেক কমিউনিস্ট দল যারা ‘মাওবাদী’ নামেই বেশি পরিচিত; আনুষ্ঠানিক নাম তাদের যাই হোক না কেন, তাদের নাম নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) বা কখনো এদের নাম ছিল নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী-কেন্দ্র)। একে অনেক নাম নিতে হয়েছিল, কারণ কোনো ছোট গ্রুপ মূল দলের ভেতর অঙ্গীভূত হলেই নামের একটু পরিবর্তন করা হয়েছে, এমন।
এসব মাওবাদীই নেপালের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন বা ভারসাম্যে পরিবর্তন এনেছিল। অথচ অন্য সবাই যেখানে আইনি রাজনৈতিক দল, মাওবাদীরা ছিল জন্ম থেকেই সশস্ত্র দল। শুধু তা-ই নয়, এরাই ১৯৯৬ সালে দাবি তুলে ছিল যে, নেপালের রাজতন্ত্র উৎখাত করে একটি রিপাবলিক মানে ‘গণপ্রজাতান্ত্রিক নেপাল রাষ্ট্র’ কায়েম করতে হবে। এ লক্ষ্যে তারা শেষে ২০০৮ সালের জুনে নেপালে রাজতন্ত্র উৎখাত করে আর এতে একটি রিপাবলিক মানে গণপ্রজাতান্ত্রিক নেপাল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পথ খুলে যায়। তবে এরই মধ্যে রাজার আমলের পুরনো দলগুলোর সাথে মাওবাদীসহ সবাই ২০০৬ সাল থেকেই আইনি (প্রকাশ্য গণ-আন্দোলনের দল) দল হিসেবে নিজেদের যৌথ অবস্থান প্রকাশ করে নিয়েছিল। এর ভেতর দিয়েই মাওবাদী দলের প্রধান পুষ্পকমল দাহাল-ও ক্রমেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেন।
কিন্তু তবু একটা ট্র্যাজিডি নেপালের রাজনীতিকে সবসময় অস্থির করে রেখেছে। তা হলো আজ পর্যন্ত নেপালের রাষ্ট্র গড়ার কাজে যতটুকু অর্জন বা অগ্রগতি হয়েছে, এতে সবচেয়ে বড় অবদান মাওবাদীদের হলেও এই দলের নির্বাচনী ভাগ্য খুবই খারাপ। নেপালে ২০০৮ ও ২০১৩ সালে দু-দু’বার কনস্টিটিউশন প্রণয়নের প্রতিনিধি নির্বাচন হয়েছিল। প্রথমবার ভারতের প্ররোচনায় ও প্রভাব হস্তক্ষেপে পড়ে প্রতিনিধি সভা নির্ধারিত সময়ে কনস্টিটিউশন প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছিল। তাই নেপালি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তারা দ্বিতীয় সুযোগ (২০১৩) পেয়েছিলেন। পরে ২০১৫ সালে কনস্টিটিউশন রচনা সমাপ্ত ও গৃহীত হওয়ার ঘোষণা দেয়ায় ভারত প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। পরে ২০১৮ সালেই নেপালের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এসব নির্বাচনে কখনোই মাওবাদী দল একা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ মানে পঞ্চাশ ভাগের বেশি আসন দখল করতে পারেনি। অথচ নেপাল এত দূর আসতে যত দেশী-বিদেশী বাধা নেপাল পার হয়েছে, তাতে দাহালের ভূমিকা সবার ওপরে, বিশেষ করে অন্য দলগুলোকে সাথে নিয়ে সঙ্কট মোকাবেলার মূল অর্গানাইজার হিসেবে দাহালই ভূমিকা রেখেছেন।
রাজা উৎখাতের পরে ২০০৮ সালের প্রথম নির্বাচনে মাওবাদীরা জিতে ২৯.২৩ শতাংশ আসন, যদিও এটি মূল তিনটি দলের মধ্যে একক সর্বোচ্চ। অন্য দুই দল নেপালি কংগ্রেস পেয়েছিল ২১.১৪ শতাংশ আর অলির দল পেয়েছিল ২০.৩৩ শতাংশ; অর্থাৎ মোট ৬০০ আসনের মধ্যে দল তিনটির আসনসংখ্যা হিসাবে ফল যথাক্রমে ২০০, ১১০ ও ১০৩।
নেপালের রাজনীতিতে ২০০৮ সাল থেকেই ভোটের ফলের এই ‘ত্রিভঙ্গ অবস্থা’ মানে তিন দলের তিন ভাগে বিভক্ত ভোট, কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না- এটি ২০০৮ সাল থেকে আজো একই অবস্থা বজায় থেকেছে; যদিও ২০১৩ সালের দ্বিতীয়বারের কনস্টিটিউশন সভার প্রতিনিধি নির্বাচনে সেবার নেপালের ভোটাররা মাওবাদীদের ওপর শুধু না, সামগ্রিক রাজনীতির ওপর প্রচণ্ড আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। এর প্রতিফলনে ফল হয়েছিল নেপাল কংগ্রেস ১৯৬, অলির দল ১৭৫ আর মাওবাদী হয়ে যায় মাত্র ৮০ আসন।
নেপালি কংগ্রেস মানে হলো ট্র্যাডিশিনাল ও বয়স্কদের দল; তুলনায় মাওবাদীরা তরুণ ও বিপ্লবীদের সমর্থক ভোটারদের দল; এভাবে হয়তো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু ভারতের প্ররোচনায় প্রথমবারের প্রতিনিধি সভা নির্ধারিত সময়ে কনস্টিটিউশন প্রণয়নে ব্যর্থ হওয়ায় মানে রাজতন্ত্র ভেঙে দেয়ার পরও নিজ রিপাবলিক রাষ্ট্র গড়ে নিতে ব্যর্থতা দেখে তারা প্রচণ্ড হতাশ হয়ে যায়- এরই প্রতিফলন ছিল ২০১৩ সালে ফল। কিন্তু তিন দলের কেউই যে একাই পঞ্চাশ ভাগের বেশি আসন পার হতে পারেনি, সেই ধারা ২০০৮ সালের মতো এখনো বজায় আছে।
তবে সেবার অন্য একটি বড় ইতিবাচক দিক ছিল। তা হলো দাহালের উদ্যোগে এই তিন দল শপথ নেয় যে, একটি কনস্টিটিউশন প্রণয়নের কাজ শেষ করা অবধি তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে; ভারতের দিকে তাকাবেও না; যোগাযোগ সম্পর্ক করবে না। এর ফলেই ভারতকে চরমভাবে পরাস্ত করে এই তিন দল (যারা একত্রে ৭৫ ভাগ আসনধারী) ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নেপালের কনস্টিটিউশন প্রণয়ন সম্পন্ন ও গৃহীত হয়েছে বলে ঘোষণা দিতে সক্ষম হয়। এটি ছিল ভারতের প্রকাশ্য বিরোধিতা ও উপেক্ষা। কারণ নেপালের এই কনস্টিটিউশন প্রণয়ন কেমন হবে তা নিয়ে ভারত দাবি, শর্ত বা চাপ দিয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে ভারতের সাথে নেপালের সমতলী সীমান্ত এলাকার ‘মাধোসি ও তরাই অঞ্চলের’ মুখপাত্র সাজতে চাইছিল ভারত।
কিন্তু নেপালের কনস্টিটিউশন প্রণয়ন সম্পন্ন ও গৃহীত হয়েছে বলে ঘোষণা ভারত ঠেকাতে না পেরে শেষে ল্যান্ডলকড নেপালে যেখানে বাইরের পণ্য প্রবেশ করতে গেলে ভারতের অনুমতি ও সহযোগিতা লাগে- এরই ফিজিক্যাল বাধা তৈরি করে ভারত। তারা স্থলবন্দর বন্ধ করে দেয়। ফলে জ্বালানি তেল বা রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারসহ যা ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ ছিল, সেসবের যেকোনো পণ্যবাহী ট্রাক অবরোধ করে রাখে ভারত।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়ায় নেপালের রাজনীতিক সমাজে এক ব্যাপক পোলারাইজেশন ঘটে গিয়েছিল। দল নির্বিশেষে নেপালের নাগরিকমাত্রই ভারতবিরোধী হয়ে ওঠে। এমনকি নেপালি কংগ্রেসও যাকে সবচেয়ে ভারতঘেঁষা মনে করা হয়, সেও। কথাটা এমন হয়ে যায় যে, কারো বাসায় রান্না হয়নি ভারতের কারণে। কারণ ভারতীয় গ্যাস বন্ধ। যেখানে নারীদের দুর্দশা সবার উপরে। কারণ পরিবেশ রক্ষার চাপে থেকে পাহাড়ের পাতা বা কাঠ টোকানি জ্বালানিতে রান্না তাদের বহু আগেই ত্যাগ করতে হয়েছিল। আর তারা অভ্যস্ত হয়েছিল ভারতীয় সিলিন্ডার গ্যাসে। অথচ তখনকার ভারতীয় অবরোধের দিনে চাইলেই আবার সে কাঠ টোকানি আর চুলার দিনে ফেরত যাওয়া খুবই কঠিন।
এ দিকে সে সময় কনস্টিটিউশন চালুর পরে নেপালে তিন দলীয় বোঝাবুঝি অনুসারে, সরকার গড়ার পালা অলির দলের। তিনি ক্ষমতায় এসেই ভারতবিরোধী প্রবল সেন্টিমেন্ট সফল ব্যবহারকারী হয়ে ওঠেন আর এতে নিজের দলের সাংগঠনিক ভিত্তি বাড়িয়ে নেন। হয়ে ওঠেন ভারতবিরোধী জনতার কণ্ঠস্বর। আর তিন দলই সিদ্ধান্ত নেয় এই প্রথম চীনের সাথে নেপালের যোগাযোগ সম্পর্কের। কারণ অন্তত জ্বালানিসহ পণ্য আমদানির বিকল্প উৎস নেপালের লাগবেই। ছয় মাস টানা অবরোধের পরে ভারত, ওদিকে চীনের আগমন টের পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু তত দিনে চীন নেপালে প্রবেশ সম্পন্ন করে ফেলেছিল। তখন থেকেই এক নতুন নেপাল : এখান থেকেই নেপাল একেবারেই বদলে যায়; যাকে বলা যায় একেবারেই ভারতের হাতের বাইরে চলে যাওয়া। আর বিপরীতে চীনের প্রভাব দ্রুত বেড়েই চলে, অথচ ভারত নিজের পায়ে কুড়াল না মারলে এমন হতো না। চীন শুধু পণ্য সাপ্লাইয়ের বিকল্প প্রধান উৎসই নয়। এমনকি বিভিন্ন অবকাঠামোর বিনিয়োগদাতা অবশ্যই। চীনের নিজের সড়ক হাইওয়ে বা হাইস্পিড ট্রেন লাইনের সাথে (কাঠমান্ডু পর্যন্ত) প্রায় শত কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ ও নতুন রেল পেতে দিয়ে নেপালকেও চীনের নিজের অবকাঠামোর সুবিধার হাত বাড়িয়ে দেয়। এখানেই শেষ নয়।
তত দিনে চীন নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্টদের বন্ধু হয়ে উঠেছিল। তাই কনস্টিটিউশন চালু হওয়ার পর ২০১৮ সালের প্রথম নির্বাচন লড়তে দুই কমিউনিস্ট দল একদল হয়ে গিয়ে লড়ুক, এ পরামর্শ দেয় চীন। আপাত ফল হয় মারাত্মক। যৌথ দল দু-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করেছিল। দল দুটো এক হওয়ার প্রক্রিয়ার শুরু ঘোষণা দিয়ে (আইনগতভাবে একদল না হয়েই) ওই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ফলে আইনত ওটা নির্বাচনী জোটের বিজয় ছিল। দাহাল ও অলি দল দুটোর পক্ষ থেকে যৌথ প্রেসিডেন্ট, এভাবেই যাত্রা শুরু করেছিল। কথা ছিল একজন দলীয় সভাপতি হলে অন্যজন প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু অলি সেটি কখনোই বাস্তবায়ন করতে রাজি হননি, নানা অজুহাতে।
এ ব্যাপারে অলির ট্র্যাক রেকর্ড খুবই খারাপ। তিনি কারো সাথে চলা, ক্ষমতা শেয়ার করা, সিদ্ধান্ত শেয়ার ইত্যাদি এসব কোনো কিছু করতেই অভ্যস্ত বা আগ্রহী নন। তাই বিরোধ বাড়তে থাকে। কিন্তু ততই চীনের পরামর্শও বাড়তে থাকে কোনো সঙ্ঘাত বা বিরোধ না করতে।
খুব সম্ভবত চীনের অনুমিত কমিউনিস্ট পার্টি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে চেয়েছিল। তাই ২০১৮ সালের বিজয়ের পরে শুরু হওয়া বিরোধটাকে টেনে আজ প্রায় তৃতীয় বছরে টেনে শেষ করা হলো। তবে এত লম্বা টানাটানি যে অর্থহীন ছিল তা হয়তো চীন এখন স্বীকার করবে। আর তা ছাড়া নেপালে দুই কমিউনিস্ট দলের এক না হতে পারার বিরোধে চীনের সংশ্লিষ্টতা বিরাট দৃষ্টিকটুভাবে হাজির হতে শুরু করেছিল, যা চীনের পক্ষে যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী অলি সব মিলিয়ে নিজ দলকে (তত দিনে তা এক দল) অমান্য করেই এককভাবে ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু একা সব সিদ্ধান্তে চলা ব্যক্তিত্ব অলির সাথে থাকা তার দলের লোকজন তত দিনে তাকে ছেড়ে দাহালের পক্ষে চলে যায়। একপর্যায়ে অলি নিজের ক্ষমতার বিপদ বুঝে এবার ভারতবিরোধী অলি ভারতের দ্বারস্থ হন। ভারতের ‘র’-এর প্রধানকে প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে দাওয়াত করে এনে সারা দিন মিটিং করেন। উদ্দেশ্য ছিল, নেপালি কংগ্রেসের সমর্থনে নতুন সরকার গড়া। কিন্তু তত দিনে কংগ্রেস দলের ভেতরেও উপদল থাকায় তা তত জমে ওঠেনি। বরং কমিউনিস্টদের যে অংশ নেপালি কংগ্রেসকে সমর্থন করবে, তাদের সাথেই তারা সরকার গঠন করবে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল। কিন্তু বহু সংসদ সদস্য কেনাবেচা, অধ্যাদেশ জারি করে কনস্টিটিউশন বদলে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী রাখার চেষ্টা- এসব কিছুর শেষে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট অলির এসব তৎপরতাকে অবৈধ বলে ঘোষণা দেয়ার পর এবার নেপালি কংগ্রেসের শের বাহাদুর দিউবা গত ১৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের পথ খুলে যায় এবং তিনি এখন নেপালের প্রধানমন্ত্রী।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কে পি অলির রাজনৈতিক জীবন এরপর আর তত গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকবে না। এ দিকে চীনের অতিরিক্ত আগ্রহ দেখিয়ে ফেলা যে অপ্রয়োজনীয় ছিল, অনুমান করি চীন তা এখন অনুভব করবে ও শিক্ষা নেবে। দুনিয়ায় কারো জন্য কিছু ঠেকে থাকে না। অলির জন্যও নয়!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com