কাবুল দখল নিয়ে যা ভাবছে তালেবান
তালেবান প্রতিনিধিদল - ছবি : সংগৃহীত
তালেবানের উত্থানে অনেক দেশ শঙ্কা বোধ করছে। অনেকে আবার নিজ দেশের 'সশস্ত্র বিদ্রোহীদের' প্রতি তালেবানের আনুকূল্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছে। তালেবান বিভিন্ন সময় এই বিষয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে। তালেবানের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, 'আমরা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপে বিশ্বাসী নই।' অর্থাৎ বাইরের দেশের সমস্যায় নাক গলানোর মতো ইচ্ছা এখন তালেবানের নেই। ২০ বছরের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি, শিল্পকারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবই বন্ধ হওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তালেবান সরকার ওই ক্ষতি পোষাতে অবকাঠামো উন্নয়নেই জোর দিবে। তাদের মনোযোগ এখন দেশ ও দশের উন্নয়নের দিকেই নিবদ্ধ থাকবে। অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক থাকবে কেবল সহযোগিতামূলক।
অন্য কোনো শক্তি যেন আফগানকে নিয়ে খেলতে না পারে, সে প্রস্তুতিও গ্ৰহণ করছে তালেবান। সরকার পক্ষের সঙ্গে মিটমাট করার জন্য তালেবান আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে। তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, 'কাবুল সরকার ও তালেবানের মধ্যে শুরু হওয়া সংলাপকে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করছি, এর মাধ্যমে আমরা গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যায়ে উপনীত হতে পারবো।' এতে বোঝা যায়, ন্যাটো জোটের সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান বলপূর্বক কাবুল দখলে নেবে না। বরং সংলাপের মাধ্যমেই সমস্যার নিরসন করবে।
তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, 'আমরা সংলাপের মাধ্যমে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চাই। আমাদের সামরিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও আমরা বলপূর্বক কাবুল দখল করবো না। বরং সংলাপকেই প্রাধান্য দেব।'
অবশ্য সংলাপের মাধ্যমে যদি কোনো সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব না হয়, তবে সংলাপের দরজা বন্ধ করে দেয়ারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তালেবান। ইরানের ইংরেজি নিউজ চ্যানেল প্রেস টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তালেবানের সিনিয়র নেতা মোল্লা খয়রুল্লাহ খয়েরখা বলেন, 'সংলাপের মাধ্যমে যদি সমঝোতা সম্ভব না হয়, তবে আলোচনার দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে।'
তালেবানের নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দিয়েছেন, 'সরকার কাঠামোতে সব পক্ষের অবস্থানই আমরা নিশ্চিত করবো।' ইতোমধ্যে তালেবানের নিয়ন্ত্রণে নেয়া অঞ্চলে তা কার্যকরও করা শুরু হয়েছে। শিয়া সম্প্রদায়ের এক সদস্যকে গভর্নর বানানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিতে সকল গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়ায় আশা করা যায়, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে বহিরাগতদের হস্তক্ষেপের সুযোগ কমে আসবে। তালেবানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সক্ষমতা আগামীতে হয়তো বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ থেকে দেশকে পুরোপুরিভাবে মুক্ত করতে সক্ষম হবে।
তালেবান ঘোষণা দিয়েছে, এবার আগের সংবিধানকে পরিমার্জিত করে উপস্থাপন করা হবে। এতে নারী পুরুষ সব শ্রেণীর নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তালেবানের রাজনৈতিক ডেপুটি চিফ মোল্লা আব্দুল গণি বারাদার ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমরা এই মর্মে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি যে, আফগান সমাজের মূল ঐতিহ্য ও মহান ধর্ম ইসলামের বিধিনিষেধের আলোকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করবো।'