ইরানের স্বার্থ কি তালেবান রক্ষা করবে?
ইরানি প্রেসিডেন্ট রুহানি ও আফগান প্রেসিডেন্ট গানি - ছবি : সংগৃহীত
আফগানিস্তানের সাথে প্রায় সাড়ে নয় শ' কিলোমিটারের বিশাল সীমান্ত রয়েছে ইরানের। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ক্ষিপ্রতাসম্পন্ন খেলোয়াড় হিসেবে অনেকেই ইরানকে বিবেচনা করে থাকে।
দুর্বল ইকোনমির পাশাপাশি অবরোধে পতিত এ দেশটি ইতোমধ্যেই তার নিজ কূটনৈতিক, ধর্মীয়, সামরিক দক্ষতায় মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশের ওপর পুরোপুরি বা আংশিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে সক্ষম হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের নিম্নোক্ত দেশগুলোতে ইরানের প্রশাসনিক প্রভাব ও সামরিক বাহিনী রয়েছে
→ ইয়েমেন,
→ ইরাক,
→ সিরিয়া ও
→ লেবানন।
এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিয়া জনগোষ্ঠী থাকায় বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব (দক্ষিণাঞ্চল) ও আফগানিস্তানে প্রভাব বৃদ্ধি করার চেষ্টায় সবসময় তৎপর থাকে ইরান।১
তালেবান (আফগান গেরিলা) ও ইরান (বিপ্লব-পরবর্তী) উভয়ই দীর্ঘ সময় ধরে মার্কিনবিরোধী ব্লকের রাজনীতি করলেও অতীতে এদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠেনি। কারণ ইরান চায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে শিয়াদের একাধিপত্য, অপরদিকে আফগান গেরিলারা সুন্নিপন্থী।
আফগানিস্তানের জনসংখ্যার ১৫ ভাগ অংশ শিয়া। আফগান জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মূলত হাজারা জনগোষ্ঠী হলো শিয়া। এরা মূলত আফগানিস্তানের মাটিতে ইরানের দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইরান আফগানিস্তানে হাজারা শিয়াদের ব্যাকআপ দিয়ে থাকে।2
আর তালেবান এই হাজারা শিয়াদের বিরুদ্ধে অতীতে কঠোর মনোভাব পোষণ করে এসেছে এবং অতীতে বিভিন্ন সময় হাজারা শিয়াদের উপর হামলাও করেছে তারা।3
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে যখন তালেবান ক্ষমতায় আসে, তখন তাদের স্বীকৃতিদানকারী চারটি দেশের একটি হলো সৌদি আরব। সৌদি আরব তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে দমাতেই মূলত তালেবানকে প্রমোট করার চেষ্টা করেছিল ওই সময়। ১৯৯৮ সালে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরীফ শহরে হামলা চালিয়ে ইরানি দূতাবাসের ৯ কূটনৈতিককে হত্যা করে আফগান গেরিলারা।4
অর্থাৎ বলা যায়, ইরানের সঙ্গে অতীতে উষ্ণ সম্পর্ক ছিল না আফগান গেরিলাদের। এছাড়াও ইরানের মিত্র ভারতের সাথে ও আফগান যোদ্ধাদের সম্পর্ক তলানিতে। এমতাবস্থায় মনে হতে পারে, ভবিষ্যতে ও আফগান গেরিলা [তালেবান] ও ইরানের সম্পর্ক খারাপই থাকবে। কিন্তু ভৌগোলিক বাস্তবতা বিবেচনায় তালেবান তাদের আগের কঠোর শিয়া বিরোধিতা থেকে সরে এসেছে। যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রিত একটা জেলায় শিয়া গভর্নর ও নিয়োগ দেয়া হয়।5
ইরানও তার কৌশলগত মিত্রতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে তালেবানের সাথে। এরই অংশ হিসেবে ইরানের মাটিতে এই বছর আফগান সরকারের সাথে বৈঠক করে আফগান যোদ্ধারা।6
বাহ্যিক দিক থেকে তাই মনে হচ্ছে, ইরান সরকার ও তালেবানের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে শিয়াইজম প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত ইরানের সাথে তালেবানের একটা মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব থেকেই যাবে। এছাড়াও ইরানের সম্প্রসারণবাদী পররাষ্ট্রনীতিকে সবসময়ই সন্দেহের চোখে রাখবে যোদ্ধারা। ইরানও চাইবে ঘরের পাশে আফগানিস্তান থেকে সর্বোচ্চ ফায়দা উত্তোলনের আর তা একমাত্র সম্ভব তাদের উপর নির্ভরশীল দুর্বল কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকলে।
আর তাই একটি নিজ সীমান্ত থেকে আমেরিকার বিদায় চাইলেও ইরানের পলিসি মেকাররা কখনোই চাইবে না, কোনো শক্তিশালী গেরিলা সংগঠন আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসুক।7
ইরান তার প্রতি অনুগত শিয়া সংগঠনগুলোকে আফগানিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্রে দেখতে চায় সবসময়। এটি যেহেতু এখন অনেকটায় অসম্ভব, সেহেতু ইরানের চাওয়া হচ্ছে সুন্নি দলগুলোর মধ্যে কোন্দল বাড়ানো।