কটন বাড দিয়ে কান খোঁচালে ক্ষতি হতে পারে মস্তিষ্কেরও
কটন বাড দিয়ে কান খোঁচালে - ছবি : সংগৃহীত
কান খোঁচানোর কাঠি, কটন বাড বা ইয়ার বাড দিয়ে আরাম নিতে কার না ভালো লাগে! কানের ভিতরে সুড়সুড়ি দিতে দিতে আরামে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু এই আরামও বিপদ ডেকে আনতে পারে।
কান-নাক-গলাবিদ চিকিৎসক চিরজিৎ দত্ত বলছেন, এই আরামের কারণ কানের ভিতরে অসংখ্য স্নায়ুর জটলা। ‘কান এমন একটা জায়গা, যেখানে অসংখ্য স্নায়ু জটলা পাকিয়ে থাকে। তার উপর সুড়সুড়ি দিলে আরাম তো লাগবেই। কিন্তু সামান্য অসাবধানে কটন বাড বা কাঠিটা আর একটু ভিতরে চলে গেলেই পর্দায় খোঁচা লাগতে পারে। আর তাতেই বড় বিপদ হতে পারে,’ বলছেন চিরজিৎ।
চিকিৎসকেরা বলছেন, কান খোঁচাতে গিয়ে পর্দায় চোট লেগেছে, এবং সেই চোট মস্তিষ্কে পর্যন্ত প্রভাব ফেলেছে- নিরন্তর এমন ঘটনা ঘটে। এমনকি এর কারণে বধির পর্যন্ত হয়ে যেতে পারেন কেউ। ‘কটন বাডের প্যাকেটেও লেখা থাকে, এগুলো কানের ভিতরে ব্যবহারের জন্য নয়। তার পরেও অনেকে ব্যবহার করেন। বিষয়টি অনেকটা ধূমপানের মতো। প্যাকেটে লেখা থাকে, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। তাতেও লাভ হয় না,’ বলছেন চিরজিৎ।
কানের খোল পরিষ্কার করতেও অনেকে এই কাঠি বা কটন বাড ব্যবহার করেন। চিরজিৎ বলছেন, তার কোনও প্রয়োজনই নেই। ‘অনেকেরই ধারণা, খোল আসলে ময়লা। বিষয়টি একেবারেই তা নয়। কানের খোল এমন একটা জিনিস, যা ময়লাকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতে। পর্দা পর্যন্ত যাতে ধুলোবালি বা ময়লা না যেতে পারে, তারই ব্যবস্থা করে খোল। খুব দরকার না হলে সেগুলো পরিষ্কার করতে হবেই বা কেন,’ বলছেন তিনি। তবু অনেকের ক্ষেত্রে এই খোল বেশি মাত্রায় জমে গিয়ে সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই কান খোঁচানো যাবে না। এমনই পরামর্শ চিরজিতের।
একটু পর পর ঘুম ভেঙে যায়? হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি
সারা দিন সব কাজ ঠিকভাবে করতে গেলে সবচেয়ে জরুরি হলো আট ঘণ্টা নির্বিঘ্ন ঘুম। অবশ্য, কারো তার চেয়ে সামান্য বেশি, কারো বা অল্প কম প্রয়োজন। মূলত তা নির্ধারিত হয় বয়সের ভিত্তিতেই।
ঠিক যেভাবে শরীরের খাদ্য ও পানি প্রয়োজন, তেমনই দরকার ঘুম। কয়েক রাত না ঘুমালেই যে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এমন নয়। কিন্তু মস্তিষ্ক একভাবে সচল নাও থাকতে পারে। কাজের সময়ে অনেক কিছুই গুলিয়ে যায়। মন দিয়ে কাজ করতে অসুবিধা হতে পারে। সমস্যা হয় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও। চলাফেরা করার সময়ে দুমদাম পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, দিনের পর দিন ঘুমের অভাব ঘটলে। আরো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে ঘুমের জটিলতার কারণে। কাজেই ঘুমানোর দিকে বেশ ভালোভাবেই নজর দেয়া উচিত।
অন্য দিকে, নিয়ম করে ঘুমোলে সে সব সমস্যার অনেকটাই দূরে থাকে। ফলে ঘুমের নিয়মে কোনো রকম গোলমাল দেখা দিলে চিকিৎসকের সাহায্য নেয়াই ভালো।
তবে কম ঘুমেরও নানা ধরন আছে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এ হলো সাময়িক অসুবিধা। হয়তো পরপর কয়েক দিন কম ঘুম হল। পরে আবার ঠিক হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে কিছু দিনের জন্য ঘুমের সময় কমে যায়।
কিন্তু কম ঘুমই কারো ক্ষেত্রে অভ্যাসে পরিণত হয়। অসুখ তখন জটিল আকার নেয়। মাস তিনেকেরও বেশি সময় যথেষ্ট ঘুম ছাড়া চলতে থাকে শরীর। ফলে তার প্রভাব পড়ে দৈনন্দিনের কাজে। খাওয়া-দাওয়া থেকে মনের অবস্থা, সবই এর ফলে প্রভাবিত হয়। এমন ক্ষেত্রে অনেকেরই কিছুক্ষণ বিশ্রামের পরে ঘুম ভেঙে যায়। তার পরে আর সারা রাত দু’চোখের পাতা এক হয় না। ঘুমের প্রয়োজন অনুভব করা এবং চেষ্টা করলেও কাজ হয় না।
এমন অসুখের প্রভাব শরীরের উপরে নানাভাবে পড়ে। যেমন—
১) ক্লান্তি : সারা দিন ঝিমিয়ে থাকেন কেউ কেউ। কোনো কাজে মন যায় না। সকাল থেকেই মনে হয় বিশ্রাম প্রয়োজন।
২) ওজন : দিনের পর দিন কম ঘুমোলে যে ওজন বাড়ে, তা অনেকেরই অজানা। আসলে ঘুমের নিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন হর্মোনের ওঠা-নামা। তার উপরে নির্ভর করে খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছা। কর্মশক্তিও। কম ঘুমের জেরে সব গোলমাল হয়ে গিয়ে ওজন বাড়ে কারো কারো।
৩) মেজাজ : মনের ভাব ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায় এর কারণে। কখনো ইচ্ছা হয় কাজে বসতে, কিন্তু তার পরেই হয়তো ঘিরে ধরে এক রাশ বিরক্তি। সংসারের কোনো কিছুই হয়তো ভালো লাগে না। আবার কিছুক্ষণ পরে তা নিয়ে মন খারাপও হয়।
দৈনন্দিনের জীবনে এই সমস্যার প্রভাব পড়ে অনেকটাই।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা