মুহাম্মদ বিন কাসিমের শাহাদাতবার্ষিকী
যুদ্ধের প্রস্তুতি - ছবি সংগৃহীত
উমাইয়া সেনাপতি ইমাদউদ্দিন মুহাম্মদ বিন কাসিম আল সাকাফির শাহাদাতবার্ষিকী ১৮ জানুয়ারি।
সিন্ধু নদসহ সিন্ধু ও মুলতান অঞ্চল তিনি জয় করে উমাইয়া খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত করেন। তার আগেও এই এলাকায় আরো কয়েকটি মুসলিম অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু কোনোটিই সফল হয়নি। যেন তার জন্যই নির্ধারিত হয়েছিল এই বিজয়। জানা যায়, রাওর দুর্গের কাছে টানা কয়েক দিনের লড়াইয়ে পরাজিত হয় মুহাম্মদ বিন কাসিমের বাহিনীর কাছে হেরে যায় সিন্ধুরাজের সুসজ্জিত বাহিনী, রাজা দাহির যুদ্ধেই নিহত হন। ১০ রমদান ৭১২ সাল, মুহাম্মাদ বিন কাসিম চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন। তার সিন্ধু জয়ের কারণে মুসলিমদের পক্ষে ভারতীয় উপমহাদেশ বিজয়ের পথ প্রশস্ত হয়।
এরপর তিনি কাসিম পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোও খিলাফতের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান। ৭১২-১৫ সালের মাঝে মুলতান জয় করেন। কিন্তু খুব বেশি দিন তার এই বিজয় অভিযান অব্যাহত থাকেনি। শুরু হয় ঘৃণ্য এক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
মুহাম্মদ বিন কাসিম তাইফের সাকিফ গোত্রের সদস্য ছিলেন। তার পিতা কাসিম বিন ইউসুফ তার বাল্যকালে মৃত্যুবরণ করেন। তার চাচা উমাইয়া গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তাকে যুদ্ধবিদ্যা ও সরকার পরিচালনা শিক্ষা দেন। সিন্ধু যাত্রার পূর্বে মুহাম্মদ বিন কাসিম তার চাচাত বোন হাজ্জাজের কন্যা জুবাইদাকে বিয়ে করেন। তার আরেকজন চাচা মুহাম্মদ বিন ইউসুফ ইয়েমেনের গভর্নর ছিলেন। হাজ্জাজের পৃষ্ঠপোষকতায় মুহাম্মদ বিন কাসিম পারস্যের গভর্নর হন। সেখানে তিনি একটি বিদ্রোহ দমন করতে সফল হন।
হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা থাকার কারণে খলিফা সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিকের ক্ষমতাগ্রহণের পর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যু মর্মান্তিক ঘটনা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে অনেক রোমাঞ্চকর কাহিনী প্রচলিত আছে। রাজা দাহিরের শক্তিশালী বাহিনী যাকে পরাজিত করতে পারেনি, সেই পরাক্রমশালী যোদ্ধা কী-না ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন! তবুও নিজেদের লোকের হাতেই! ভাবা যায়?
একটি কাহিনীতে বলা হয়ে থঅকে, পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে দাহিরের দু’কন্যা সূর্যদেবী ও পরিমলদেবী কাসিমের হাতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ খলিফাকে জানান। খলিফা কাসিমকে বস্তায় বন্দী করে ঘোড়ার পেছনে বেঁধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। কাসিমের মৃত্যুর পর দাহিরের দু’কন্যা তাদের ছলচাতুরি প্রকাশ করেন। এ ঘটনাকে আধুনিক ঐতিহাসিকরা ভিত্তিহীন তথ্য বলে উড়িয়ে দেন।
আধুনিক অনেক ঐতিহাসিক ঐক্যমত পোষণ করে বলেছেন- কাসিমকে রাজধানী দামাস্কাকে আহবান করে কারারুদ্ধ করে খলিফার আদেশে হত্যা করা হয়। তবে সিন্ধু বিজেতা মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যু যেভাবেই হোক, তার উত্থানের মতো পতনও ইতিহাসের এক নাটকীয় ঘটনা।
মুহাম্মাদ বিন কাসিম জন্মগ্রহণ করেন ৬৯৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তিনি ৭১৫ সালের ১৮ জুলাই তাইফে (বর্তমান সৌদি আরব) মৃত্যুবরণ করেন।