হাটে সাদা মহিষ, দাম ১০ লাখ টাকা
হাটে সাদা মহিষ, দাম ১০ লাখ টাকা - ছবি সংগৃহীত
বিরল প্রজাতির সাদা মহিষ ওঠেছে হাটে। রাজধানীর সূত্রাপুর হাটে গতকাল রোববার বিরল প্রজাতির সাদা মহিষ দুটি দেখা যায়। বিক্রেতা দাম হাঁকিয়েছেন ১০ লাখ টাকা।
আজ থেকে পুরোদমে জমবে কোরবানির পশুরহাট
আর একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজধানীর হাটগুলোতে উঠেছে বিপুল পরিমাণ গরু, ছাগল, মহিষসহ বিভিন্ন গবাদিপশু। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে এসব হাটে বেচাকেনা। তবে, পুরোদমে জমে ওঠেনি হাটের এই কেনাবেচা। গতকাল রোববার পর্যন্ত রাজধানীর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দরদাম নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই বলছেন, আজ সোমবার থেকে পুরোদমে কোরবানির পশুর হাট জমে উঠবে। ঈদের সকাল পর্যন্ত চলবে এই কেনাবেচা।
রাজধানীর অন্যতম বড় মেরাদিয়া পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাক বোঝাই করে কোরবানির গরু আসছে। বিভিন্ন আকারের গরু রয়েছে এই হাটে। পশুর হাটের নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় মেরাদিয়া এলাকার মেইন রাস্তাসহ অলিগলিতে এমনকি নির্মাণাধীন বাসার নিচেও গরু বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। একই অবস্থা রাজধানীর অন্যান্য হাটগুলোতেও। গতবারের তুলনায় এবার ঢাকার হাটগুলোতে বেশি কোরবানির পশু উঠেছে বলে জানা গেছে। তবে, পশুর দাম নিয়ে কথা কাটাকাটি করতেও দেখা গেছে।
মেরাদিয়া হাটে গরু কিনতে যাওয়া বনশ্রী এলাকার তফিজ উদ্দিন বলেন, গতবার হাট বসবে কী বসবে না, এমন অবস্থায় আমরা ঢাকার বাইরে থেকে কয়েকজন মিলে ট্রাকে করে গরু কিনে নিয়ে এসেছিলাম। এবার যেহেতু আগেভাগেই হাট বসার খবর এসেছে তাই ঢাকার বাইরে যাইনি। গত কয়েকদিন ধরে মেরাদিয়া ও গাবতলীর হাটে ঘুরছি। গরুর দাম অনেক চড়া। গতবার সাড়ে ৫ মণ ওজনের গরু কিনেছিলাম এক লাখ ৫ হাজার টাকা দিয়ে। এবার একই সাইজের গরু ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা বলেছি, কিন্তু দিচ্ছে না।
মেরাদিয়া হাটে কথা হয় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী মোজাফফর আলীর সাথে। তিনি বলেন, হাটে তিনি ২৪টি গরু এনেছেন। এলাকার কৃষকের কাছ থেকে কিনে তিনি এসব গরু হাটে তুলেছেন। সাথে ১১ জন রাখাল নিয়ে এসেছেন। তার ভাষ্য, গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু লালন পালনে খরচ বেশি পড়েছে। তাই বেশি দাম দিয়েই কৃষকের কাছ থেকে কিনতে হয়েছে। আমাদেরও একটু বেশি দাম চাইতে হচ্ছে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ঢাকায় মূলত ঈদের আগের দিন সবচেয়ে বেশি গরু কেনাবেচা হয়ে থাকে। কারণ গরু কেনার পর তা রাখার জায়গা নেই অধিকাংশ মানুষের। এ ছাড়া আগে কোরবানির পশু কিনলে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়, যা অনেকেই পছন্দ করেন না। তাই আজ সোমবার, কাল মঙ্গলবার পুরোদমে হাট জমে উঠবে।
চলছে নানা অফার : এদিকে গরু কেনাবেচায় রাজধানীর হাটগুলোতে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিক্রেতারা নানা অফারও দিচ্ছেন। রাজধানীর শনিরআখড়ার হাটে সাড়ে ১২ লাখ টাকার একটি ষাঁড়ের সাথে ৮০ হাজার টাকার একটি খাসি ফ্রি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মোস্তফা শেখ। তার মতো আরো অনেককেই এভাবে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মনোযোগী হতে দেখা গেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৪১ কোটি ২২ লাখ খাবারযোগ্য প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে এক কোটি ১৯ লাখ কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। দেশে কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে এক কোটি ৫ লাখের মতো। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে বলে মনে করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
করোনাভাইরাস মহামারীতে ডিজিটাল হাটে কোরবানির পশু বিক্রি গতবারের চেয়ে এবার বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা: শেখ আজিজুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, গত ২ জুলাই থেকে অনলাইন বা ডিজিটাল হাট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোববার পর্যন্ত তিন লাখ ১৮ হাজার ৫০৭টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ দুই হাজার ২০৬ কোটি ৬২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এ সময়ে ডিজিটাল হাট তথা অনলাইন শপগুলোতে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬ কোরবানির পশুর ছবি আপলোড করা হয়েছে। এবারের ঈদে কোরবানিযোগ্য ২৫ শতাংশ পশুর ছবি আপলোডের টার্গেট ছিল। আরো দুই তিন দিন বাকি আছে, আমরা চেষ্টা করছি সেটা পূরণ করার। তবে করা সম্ভব হবে কিনা বলতে পারছি না।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, ৪০০ কেজি লাইভ ওয়েটের দেশী গরু প্রতি কেজি ৪২৫ টাকা, ৪০১ থেকে ৫০০ কেজি ওজনের গরু ৪৭৫ টাকা এবং ৫০১ থেকে ৬০০ কেজি ৫২৫ টাকা কেজি হিসেবে ধরে বিক্রি করা হচ্ছে। এর বাইরে হাইব্রিড বা বেশি ওজনের গরু অন্যান্য দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, করোনা মহামারীতে সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে লকডাউন শিথিল করে কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি দেয় সরকার। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে শর্ত দেয়া হয়। হাট কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে বারবার অনুরোধ করতে শোনা গেলেও তাতে গুড়েবালি। কোরবানির হাটে যেন স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার প্রতিযোগিতা চলে। এ অবস্থায় চলমান করোনা পরিস্থিতি আরো প্রকট হয়ে ওঠে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গরুতে ঠাসা রাজধানীর পশুহাট চড়া দাম বলছেন ক্রেতারা : রাজধানীর প্রতিটি হাটেই গরুতে ঠাসা। তবে বেচাবিক্রি তুলনামূলক কম। হাটে আসা অধিকাংশ ক্রেতাই বলছেন দাম বেশি। তাই তারা আরো একটু যাচাই বাছাই করতে চান। আর বিক্রেতাদের আশা শেষ দিকে পশুর দাম আরো বাড়বে। তাই আরো একটু সময় অপেক্ষা করতে চান তারা।
কয়েকটি হাটে দেখা গেছে গতকালও বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে কোরবানির পশু। গতকাল তিনটি বিশেষ ট্রেনে এক হাজারের বেশি গরু এসেছে ঢাকায়। সেই সাথে দুই শ’ ছাগলও এসেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, জামালপুর ও উত্তরাঞ্চলের আরো কয়েকটি জেলা থেকে এই গরু ও ছাগল সকালে ঢাকায় আসে। একই সাথে সড়কপথেও ট্রাকে ট্রাকে গরু এসেছে রাজধানীতে।
এবার কোরবানির ঈদে শুধু হাটে নয়, পশু কেনাবেচা হচ্ছে অনলাইনেও। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দেয়া তথ্য মতে গতকাল পর্যন্ত অনলাইনে গরু বেচাকেনা হয়েছে দেড় লাখেরও বেশি। হাটে ভিড় না করে ঘরে বসে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচা করতে শুরু থেকেই ক্রেতা বিক্রেতাদের উৎসাহিত করছে দুই সিটি করপোরেশন। একই সাথে প্রতিটি হাটের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতেও পৃথকভাবে মোবাইল টিম পরিচালনা করছে দুই সিটি করপোরেশন। গতকাল উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম রাজধানীর ভাটারার সাইদনগরের কোরবানির পশুহাট পরিদর্শন করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন কোনো হাটে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না হলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই হাটের ইজারা বাতিল করা হবে।
কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে শুধু গরু নয় সেই সাথে বিক্রি হচ্ছে ছাগল ও মহিষ। রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী পশুহাট গাবতলীতে উঠেছে মরুর উট ও দুম্বা। হাটের উত্তর পাশে আলাদা ছাউনিতে বিক্রি হচ্ছে মহিষ। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেল হাটে মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি।
অনেক হাটে দেখা গেছে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থও হয়ে পড়ছে গরু। তাৎক্ষণিকভাবে হাটে নিয়োগ দেয়া পশুচিকিৎসক অসুস্থ গরুকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। ভেজা গামছা দিয়ে বড় গরুর শরীর অব্যাহতভাবে মুছতে হচ্ছে গরুর মালিককে। সরকারের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুহাটের ভিড় এড়িয়ে চলতে বলা হলেও অনেক হাটেই দেখা গেছে একটি গরু কিনতে পরিবারের তিন চারজন লোক হাটে এসেছেন। ফলে প্রতিটি হাটেই গতকাল ক্রেতাদেরও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
গাবতলীর পশুহাটে গরুর দরদাম বিষয়ে সিরাজগঞ্জের পাইকার মিহির আলী জানান, ছোট আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের গরুর দাম এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ বা ৩০ হাজার টাকা। আর বড় গরুর দাম আকারভেদে দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ বা আরো বেশি। তবে মাঝারি এবং ছোট গরুর চাহিদাই বেশি বলে তিনি জানান। কয়েকটি খামার থেকে তিনিসহ আরো দুইজন মিলে তারা ৬০টি গরু নিয়ে এসেছেন গাবতলীর হাটে। প্রতি বছর তারা ঈদ মৌসুমে কোরবানির পশুর এই ব্যবসা করেন। ভালো দাম না পেলে লোকসানের আশঙ্কার কথাও জানান এই পাইকার।
গাবতলীতে গরু কিনতে আসা কল্যাণপুরের বাসিন্দা রজিমউদ্দিন জানান, এবার পশুর দাম একটু বেশিই বলে মনে হচ্ছে। যদিও বিক্রেতারা হাটের শুরুর দিকে দাম বেশি হাঁকেন। তবে এখন বিক্রেতারা যে দাম হাঁকছেন সেই দামে তারা পশু বিক্রি করতে পারবেন না। এক দু’দিনের মধ্যে দাম আরো কমবে।