ফোনে আড়িপাতা, ভারতে তোলপাড়
ফোনে আড়িপাতা, ভারতে তোলপাড় - ছবি : সংগৃহীত
১৮ মাসের ব্যবধানে ফের শিরোনামে ‘পেগাসাস’। ইসরাইলি সংস্থার তৈরি এই বিশেষ প্রযুক্তি বা স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে ভারতের তিন শতাধিক ভেরিফায়েড নম্বরে আড়িপাতা হয়েছে বলে দাবি করল ‘দ্য ওয়্যার’সহ পাশ্চাত্যের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। নজরদারির তালিকায় রয়েছেন ভারতের বহু মন্ত্রী, বিরোধী নেতা, সাংবাদিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, সরকারি আমলা, বিজ্ঞানী ও সমাজকর্মী। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে, নেটওয়ার্ক ১৮, দ্য হিন্দু এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-সহ বেশ কিছু বড় সাংবাদমাধ্যমের শীর্ষ স্তরের সাংবাদিকদের ফোন হ্যাক করা হয়েছে।
পেগাসাসের মাধ্যমে আড়ি পেতেছিল এক অজ্ঞাত সংস্থা। ফরেন্সিক পরীক্ষায় ফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি প্রমাণিত বলে দাবি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নম্বরগুলোকে নিশানা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট পর্যন্ত চলে ওই ট্যাপিং পর্ব।
সমাজের কিছু বাছাই করা ব্যক্তির উপর চরবৃত্তি প্রকাশ্যে আসতেই উত্তাল গোটা ভারত। এরপরই মোদি সরকার নাগরিকের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে বলে প্রশ্ন উঠে গেছে। তাহলে কি সরকারের বিরুদ্ধে মত পোষণ করা সাংবাদিক, সমাজকর্মী, আমলা-মন্ত্রীদের বেছে বেছে টার্গেট করা হয়? বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, এই ঘটনা এলগার পরিষদের ওপর সরকারের নজরদারিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে।
রোববার বোমাটি ফাটান বিজেপির রাজ্যসভার এমপি সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। ট্যুইটারে তিনি দাবি করেন, নরেন্দ্র মোদি সরকারের মন্ত্রী, আরএসএস নেতা এমনকি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ফোনে আঁড়ি পাততেও পেগাসাস-কে ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু পশ্চিমী দেশের সংবাদমাধ্যম শিগগিরই রিপোর্ট প্রকাশ করবে বলেও তিনি জানান।
খবরে প্রকাশ, আঁড়ি পাতার তালিকায় নাম রয়েছে ৪০ জনেরও বেশি নামজাদা সাংবাদিকের। এছাড়া তিনজন বিরোধী নেতা। মোদি মন্ত্রিসভার দুই মন্ত্রী। দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বর্তমান ও সাবেক প্রধান এবং বহু ব্যবসায়ী।
ফাঁস হওয়া তথ্যভাণ্ডারটি প্যারিসের একটি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্লেষণ করেছে। তারাই ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দ্য গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের একাধিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সেই তথ্য শেয়ার করে। যে সমস্ত নম্বরের উপর আড়িপাতা হয়েছে, সেগুলো ভারতসহ ১০টি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর তথা মোদির সমালোচক সাইদ গিলানি ও সৌদি আরবের নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগির বান্ধবীর নম্বরও রয়েছে।
যদিও হ্যাকিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে মোদি সরকার দাবি করেছে, ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার কোনো ভিত্তি নেই। অতীতের একটি আরটিআইয়ের জবাবকে হাতিয়ার করে ভারত সরকার বলেছে, সরকারের কোনো এজেন্সি অবৈধভাবে নজরদারি চালায়নি। তবে, পেগাসাস স্পাইওয়্যার ক্রয় বা ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেনি। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এর আগেও সরকার-পেগাসাস সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে পেগাসাস নির্মাতা এনএসও গ্রুপের দাবি, সরকার ছাড়া আর কাউকে এই প্রযুক্তি দেয়া হয় না। তাহলে প্রশ্ন এখন একটাই, এই আড়িপাতার নেপথ্যে কে?
স্বামী ট্যুইটে প্রতিক্রিয়া দেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার এমপি ডেরেক ও’ব্রায়েন। তিনি বলেন, ফোন ট্যাপ করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সদস্যদেরও নিশানা করা হচ্ছে।
কংগ্রেসের লোকসভার এমপি কার্তি চিদম্বরমের ইঙ্গিতপূর্ণ ট্যুইট, পেগাসাস নিয়ে বিস্ফোরক কিছু ঘটতে চলেছে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে খবরের শিরোনামে এসেছিল পেগাসাস।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে খবরের শিরোনামে আসে পেগাসাস। সেখানে বলা হয়, সারা পৃথিবীর প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনের ফোনে আড়িপাতা হয়েছিল। সেই তালিকায় ছিলেন কূটনীতিক, নেতা, সাংবাদিক ও সরকারি আধিকারিকরা। ভারতের ব্যবহারকারীরাও ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। সেই তালিকায় ছিলেন গবেষক, দলিত আন্দোলনকারী, সাংবাদিক। সেই সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পেগাসাসের কোনো অনৈতিক ব্যবহার করেনি।
সূত্র : বর্তমান ও আনন্দবাজার পত্রিকা