সম্রাট হবার পথে বাবর

আফফান উসামা | Jul 18, 2021 01:51 pm
বাবর আজম

বাবর আজম - ছবি সংগৃহীত

 

স্যার ব্রাডম্যানের গল্প শুনেছেন। সোবার্স-ভিভের ইতিহাস পড়েছেন, শচিন-লারা-পন্টিংয়ের দ্বৈরথ দেখেছেন, আনোয়ার-ইনজামাম আর দ্রাবিড় তো আজও চোখে ভাসে।

শেবাগ-গিলক্রিস্ট-জয়সুরিয়ারা তো আধুনিক ক্রিকেটে মিশে গেছে। সাঙ্গা-মাহেলা আর ভিলিয়ার্স-আমলারা তো সদ্য ফুরিয়েছে। হালে ফ্যাব ফোরের রাজত্ব চলছে; কোহলি-স্মিথ লড়াই তার নতুন মাত্রা দিয়েছে। কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসনও কম কিসে? তবে সময়ের সাথে আরো একজন তীব্রবেগে ঝড়ের গতিতে ছুটে আসছে তাদের দিকে। মিশে যেতে চাইছে তাদের মাঝে। তাদের রাজত্বে যেন ভাগ চাইছে সমান ভাবে। রাজত্ব তো করতেই চাইবে, নামটা যে তার রাজার নামে! হ্যাঁ, ধরতে পেরেছেন তবে, বাবর আজমই বটে।

হালের ক্রিকেটের এক বিস্ময়কর নাম এই বাবর আজম। ধ্রুপদী ক্রিকেটের একজন যথার্থ ধারক বাহক বলা চলে তারে। শান্ত, সৌম্য ভঙ্গিমায় মাঠের চারদিকে সৌন্দর্যের ফুলঝুরি ছুটিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্রমেই নিজের পরিচিতি তুলে ধরে ছড়িয়ে চলেছেন নিজের শুভ্র দ্যুতি। ব্যাকরণসম্মত ব্যাটিংয়ে ধীরে সুস্থে বলের সক্ষমতা অনুযায়ী খুঁটে খুঁটে রান করার সাথে সুযোগ মতো চোখ জুড়ানো বাউন্ডারি আদায় করে নেয়ার সক্ষমতা তাঁর নিঃসন্দেহে হিংসে করার মতন। নান্দনিক ব্যাটিং পসরার পাশাপাশি তিনি যেন ধারাবাহিকতার প্রতিচ্ছবি! কী নেই তার ব্যাটে? তার স্বভাবজাত শৈল্পিক কভার ড্রাইভ থেকে প্রতিপক্ষকে ছত্রখান করে দেয়া খুনে ব্যাপারটিও রয়েছে তার হাতে। বলা চলে বজ্রহীন এক ঝড় যেন তিনি। যিনি পৈশাচিক নয়, নীরব ঘাতক!

জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবরকে যেমন শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আর কঠিন সময় অতিক্রম করে সম্রাট বাবর হতে হয়েছে, ইতিহাসের সোনালি পাতায় স্থান পাবার মতো করে নিজেকে গড়ে নিতে হয়েছে, তেমনি বাবর আজমকেও কঠিন দুঃসময় পেছনে ফেলে আজকের এই অবস্থায় আসতে হয়েছে। যেই গল্পগুলো হয়তো খুব অল্প সময়ে চলে আসবে আমাদের মাঝে ‘বাবর কী কাহানি' বায়োগ্রাফি সিনেমার মাধ্যমে। তবে প্রচলিত একটা গল্প আছে, বাবরের বলবয় হবার গল্পটা শোনা যায় বেশ জোরেশোরে।

গল্পটা আজ থেকে ১৪ বছর পূর্বের। সেবার সাউথ আফ্রিকা শেষবার এসেছিল পাকিস্তানের মাটিতে। পারিবারিকভাবে ক্রিকেটকে ধারণ করার ফলে ক্রিকেটে একটা ভালোবাসা গেঁথে ছিল বাবরের মনে। অনুশীলন করতেন তাই একাডেমীতে। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে স্বপ্নের ক্রিকেটারদের খুব কাছে থেকে দেখার ইচ্ছেয় চাচাতো ভাইদ্বয় উমর আকমল ও কামরান আকমলের মাধ্যমে সুযোগ পেয়ে যান বলবয় হিসেবে। কাছে থেকে প্রিয় প্লেয়ারদের দেখে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে তার মন। সেই সিরিজ যেন স্বপ্নের বীজ বুনে দেয় বাবরের জীবনে। লক্ষ্য হয়ে যায় স্থির, আমাকেও তাদের মতো হতে হবে!

তাদের মতোই তো বটে। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো অন্য সবাইকে পিছিয়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধারাবাহিক পারফর্ম করে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। প্রত্যাশার চেয়েও ভালো খেলে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের কাতারে নিজেকে নিয়ে গেছেন ২৫ বছর বয়সী এই পাক তরুণ। নান্দনিক পারফরম্যান্সের সুবাদেই জাতীয় দলের অধিনায়কত্বও উঠে এসেছে হাতে। স্বীকৃতিও জুটেছে ললাটে। ১২৫৮ দিন পর ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির একচেটিয়া আধিপত্য ভেঙে ব্যাট হাতে উঠে এসেছেন ওয়ানডেতে সেরাদের সেরার কাতারে; নাম্বার একে।

রান দৌড়েও ছুটে চলেছেন তীব্র বেগে। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় দ্রুততম (২১) ইনিংসে ১০০০ পূরণ করা ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি। দুই হাজারের দৌড়েও দ্বিতীয় তিনি (৪৫ ম্যাচ)। তিন হাজারে সংগ্রহে তৃতীয় তিনি, ৬৮ ম্যাচে। টি-২০ ক্রিকেটেও দ্রুততম ১০০০ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় তিনি, তবে দুই হাজারে দৌড়ে সবার আগে বাবর। তুলে নিয়েছেন মাত্র ৫২ ইনিংসে। এক দেশের মাটিতে (সংযুক্ত আরব আমিরাত) টানা ৫টি সেঞ্চুরি করা একমাত্র ক্রিকেটার বাবর। এক বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হয়ে সর্বাধিক ৪৭৪ রানও করেছেন বাবর। রয়েছে আরও অনেক অর্জন, গড়েছেন আরো একাধিক কীর্তি। সাথে জিতে নিয়েছেন একখান চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও।

বাবর আরো অনেক দূর দৌড়বেন। তাকে দৌড়াতে হবেই। মাত্র তো পথচলা শুরু। রাজত্বে ভাগ বসাতে হলে ছুটতে হবে আরো তীব্রবেগে। আর যদি একক ভাবে রাজা হতে চান, তবে কী করতে হবে তা নিশ্চয়ই তিনি ভালো জানেন আমাদের থেকে! আমরা শুধু চাই মুগ্ধ হতে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন আশ্বিন মুগ্ধ হয়েছেন যেভাবে। কতটা মুগ্ধ হলে মানুষ এভাবে বলে- 'বাবর আজমকে দেখে আমার মিলিয়ন ডলার ক্রিকেটার মনে হয়। ইংল্যান্ডে ভালো খেলে এলেন, অস্ট্রেলিয়ায়ও সেঞ্চুরি করেছিলেন। তাকে এত ভালো খেলতে দেখাটা দারুণ। তার খেলা চোখের প্রশান্তি দেয়। বাবর আজমকে আপনি মূল্যায়ন করবেন কিভাবে?'


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us