প্রত্যাবর্তনের পূর্বাভাস!
সাকিব আল হাসান - ছবি সংগৃহীত
রুগ্নতার চাদরে মোড়া বাংলার ক্রিকেটের সাদা-কালো মলিন পোস্টারটিকে ক্ষণে ক্ষণে বদলে দিয়ে সোনালি সুন্দর ক্রিকেটের মুগ্ধতা ছড়ানো সব ছবি এঁকেছেন তিনি বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের কালিতে। ব্যাটে-বলে সমতালে প্রত্যাশার পাহাড় মাথায় চাপিয়ে লড়ে চলেছেন প্রত্যাশা পূরণে। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে বা দেশের পতাকা আরো ওপরে তুলে ধরতে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন ২২ গজের দুনিয়াতে।
কিন্তু সময় কি সর্বদা একই রকম থাকে? তিনিও মানুষ তো! তারও তো পরিবর্তন আসে। শত গল্পতে কিছু ব্যর্থতা ঘেরাও কিছু স্মৃতি থাকে। ব্যর্থতা না আসলে কি বিজয়ের পূর্ণ সুখ আসে? সোনা তো পুড়ে পুড়েই খাঁটি হয়, মাটি পুড়েই তো শক্ত হয়। ফলে তার জীবনেও খারাপ সময়ের দেখা মিলেছে। খারাপ সময় সবারই আসে। খারাপ সময়ের তো 'ক্রিকেট ঈশ্বর' খ্যাত শচিন টেন্ডুলকারেরও দেখা মিলেছে। কিন্তু তারা খারাপ সময়ে বোঝা হয়ে দলে থাকার ব্যক্তি নয়। যখন যেভাবে পেরেছেন সমর্থন দিয়ে গেছেন দলকে।
তেমনি তিনিও। নিষেধাজ্ঞা-পরবর্তী তার বেশ খারাপ সময় চলছে। হচ্ছে তীব্র সমালোচনা। কিন্তু কখনো কখনো তার সমালোচনা পেয়ে যায় ভিন্ন মাত্রা। হয়ে উঠে তার স্বপক্ষে, আশীর্বাদ স্বরূপে। পাহাড়সম চাপ যে তাকে সর্বদাই স্বরূপে ফিরতে সহায়ক করে তা কে না জানে? বাপ্পা মজুমদারের কি সাধেই বলে–
'সমালোচকের তোপের মুখে, পড়েছি হাজারবার,
ব্যাট আর বলে, মাঠে দিয়েছি, কঠোর জবাব তার।'
জবাব দিয়েছেন শুক্রবারও। ব্যাট হাতে ব্যর্থতা যেন গিয়েও যাচ্ছে না। দুঃস্বপ্নের মতো ফিরে আসছে বারবারে। সেই দুঃস্বপ্ন ভুলতেই কিনা কাল জ্বলে উঠলেন বল হাতে। হাতের ভেল্কিতে বিভ্রমে ফেলে স্পিনের নীল বিষে কাবু করে তুললেন জিম্বাবুয়েকে। তুলে নিলেন পাঁচটা উইকেট। গড়লেন নতুন কীর্তি, পৌঁছেছেন নতুন মাইলফলকে। দেশের হয়ে তিন ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ উইকেট এখন তার ঝুলিতে। যে কীর্তি আফগানি রশিদ খান ছাড়া নেই আর কারো কাছে।
টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে আগে থেকেই বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড তার দখলে। টেস্টে তার (২১৫ উইকেট) ধারেকাছেও আপাতত কেউ নেই। তালিকার ২ নম্বরে থাকা তাইজুল ইসলামের উইকেট বহু দূরে ১৩৪টি উইকেট নিয়ে। আর টি-টোয়েন্টিতে তার উইকেট ৯২টি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মোস্তাফিজ নিয়েছেন এখন পর্যন্ত মাত্র ৫৮টি উইকেট। তবে ওয়ানডেতে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে মাশরাফির সাথে। তবে আজ পাঁচ উইকেট নিয়ে ছাপিয়ে গেছেন তারে। হয়তো মাশরাফির আর সাকিবকে ছোঁয়া হবে না কোনো দিনই বাস্তবতা অনুপাতে।
কাল সাকিবের বল হাতে শুরুটা ছিল বাজে। দুই ওভারে রান দিয়েছিলেন ১৭। তবে তৃতীয় ওভারেই ফিরলেন স্বরূপে। ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে থাকা রস টেলরকে ফেরালেন বিভ্রমে ফেলে। সেই শুরু, অতঃপর তুলে নিলেন আরো ৪টি উইকেট। ২ ওভারে ১৭ দেয়া সাকিব যখন জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেটটা তুলে নেন তখন তার স্পেলটা ছিল ৯.৫ - ৩ - ৩০- ৫। অর্থাৎ শেষ ৭ ওভার ৫ বলে দেন মাত্র ১৩ রান!
বল হাতে সাকিবের এই দারুণ প্রত্যাবর্তন আমাদের পুরনো সাকিবকে ফিরে পাবার পূর্বাভাস দিচ্ছে। আশা করি তাই হবে। বলের পাশাপাশি সাকিব এবার জ্বলে উঠবেন ব্যাট হাতে। আর বলবেন-
'আমাকে দমিতে এসো না,
আমি অদম্য,আমি দুর্দমনীয়।
আমি নির্বিশঙ্ক বজ্র কঠিন হিমাদ্রী,
আমি দুরন্ত বিহগ, দুর্বার, দুর্ভেদ্য প্রাচী!'