তুরস্ক কি আফগানদের স্বার্থ দেখে?
এরদোগান - ছবি সংগৃহীত
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দেখা যাবে, তুরস্ক আফগানদের স্বার্থ দেখে আসছে এবং তাদের সাথে ভালো সম্পর্কও রেখেছে। ন্যাটো জোটের সদস্য হলেও তুরস্ক তালেবানের বা আফগানিস্তানের কোনো ক্ষতি চায়নি এবং এমন কোনো কাজের সাথে জড়িত নয়। তালেবান ইতঃপূর্বে শাসন করার সময় তৈরি করা সংবিধানকে আরো পরিমার্জিত করে এবার উপস্থাপন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তুরস্ক এসব কিছুতে জড়াতে চাইছে না এবং রাজনীতিতেও হস্তক্ষেপ করতে চাইছে না। আফগানিস্তানে স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষের সাথে তুরস্ককে ‘ব্যালেন্স’ করে চলতে হবে; কোনো ভুল করা যাবে না।
তালেবানের ভেতরও বড় সমস্যা আছে, তাদের মাঝে রয়েছে বহু নৃতাত্ত্বিক দল ও ধর্মীয় মতবিরোধসম্পন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী। তারা মূল তালেবানের সব কাজকে সমর্থন করে, এমন নয়। তালেবানের প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি থাকলে হয়তো সবাইকে মিলিত করা সম্ভব হবে। তালেবানে এখন উজবেক ও তাজিক গ্রুপগুলোও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তুরস্কের সাথে পাকিস্তানের বহু আগে থেকে ঐতিহাসিক বন্ধন রয়েছে। তালেবানদের ওপর পাকিস্তানেরও বড় কর্তৃত্ব রয়েছে। এসব ফ্যাক্টর এখন গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই দেশের সাথে কাতারের সম্পর্ক বেশি। তালেবানরা এসব ঝেড়ে ফেলে দিতে পারে না। কাতার, তুরস্ক ও পাকিস্তান তালেবানের কোনো সমস্যা নিয়ে মধ্যস্থতা করলে বা কোনো অনুরোধ জানালে তালেবান রক্ষা করবে এমনই মনে করা হচ্ছে।
বিগত শতাব্দীতে আফগানিস্তানে ব্রিটিশদের দুর্গ ছিল। বিংশ শতাব্দীতে তদানীন্তন সোভিয়েতরা ঢুকে পড়ে। ২০১০ সালে আফগানিস্তানে আমেরিকার ৭০০ বড় ও ছোট সেনাছাউনি ছিল। এসব ছাউনির প্রায় রসদপত্র ও গোলাবারুদ বাইরে থেকে সরবরাহ করা হতো। বতর্মানে আফগানিস্তানে আমেরিকার ও মিত্রদের ৪০০ সেনা ঘাঁটি রয়েছে। কিছু ঘাঁটি অনেক বড়। যেমন- কান্দাহার বিমানঘাঁটি। এখানে সর্বক্ষণ আমেরিকার যুদ্ধবিমান উঠা-নামা করে। এখান থেকে বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও আমেরিকার যুদ্ধবিমান যাতায়াত করে। এই বিমানঘাঁটিকে বিশ্বের ব্যস্ততম সামরিক বিমানঘাঁটিগুলোর একটি হিসেবে ধরা হয় যার কোনো হিসাব-নিকাশ ও নিয়ন্ত্রণ আফগান সরকারের হাতে নেই, এটি যেন এক স্বাধীন এলাকা। বাগরাম বিমানঘাঁটিও তেমন একটি। এখানে সোভিয়েত ইউনিয়নও ঘাঁটি গেড়েছিল।
সেখানে আমেরিকার সেনা কত ছিল তার সঠিক তথ্য প্রচার করা হয়নি, মিডিয়ার কাছেও এর সঠিক তথ্য নেই। তবে জানা যায়, বাগরামে ২০ হাজার সেনা ছিল। রাতের আঁধারে তাদের ঘাঁটি ত্যাগ করার অন্যতম কারণ হলো- প্রকৃত সেনা সংখ্যা যেন মিডিয়ায় না যায়। বাগরাম ঘাঁটি আধুনিকীকরণের জন্য ওয়াশিংটন ২০০ মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিল আরো আধুনিক অ্যাপ্রন স্পেস, কার্গো হেলিকপ্টার অ্যাপ্রন, টেকটিক্যাল এয়ারলিফট অ্যাপ্রন নির্মাণের। অন্য বড় ঘাঁটিগুলোতে এবং কান্দাহারেও এমন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ৩০ হাজার সেনা ও এক হাজার ন্যাটো সেনার অবস্থানের জন্যও কান্দাহারকে আপগ্রেড করা হয়েছে এবং ১২টি সেনাছাউনি তৈরি করা হয়েছে। সেদেশে নামকরা আরো সেনা ঘাঁটি আছে- পাকতিয়া, হিরাত এবং মাজার-ই শরিফ।