বদলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য : সালমানের ৫ উদ্যোগ
বাদশাহ সালমান - ছবি : সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত পরিবর্তনশীল অবস্থার প্রেক্ষাপটে বাদশাহ সালমান সুনির্দিষ্ট কিছু নীতি পদক্ষেপ নিয়ে অগ্রসর হবার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমত, মুহাম্মদ বিন সালমান উদ্যোগী হয়ে ইয়েমেনে যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে সেটির অবসান ঘটানো। এই প্রচেষ্টায় পাকিস্তান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে আর ইরানের সাথে প্রত্যক্ষ আলোচনায় মতের ব্যবধান ঘোচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, সৌদি ধর্মীয় নেতৃত্বের পুরনো অবস্থান ও মর্যাদা ফিরিয়ে এনে, সৌদি জনমতে রাজতন্ত্রবিরোধী যে মনোভাব ক্রমেই চাঙ্গা হচ্ছে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ গ্রহণ। তৃতীয়ত, সৌদি আরবের ভেতরে এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মুসলিম ব্রাদারহুড বিরোধী অবস্থান নিতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের জনমত এবং সমাজ কাঠামোতে সৌদি আরবের প্রভাব দুর্বল হয়ে পড়ে। সেটি পুনরুদ্ধার করতে মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে পুরনো সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এজন্য নির্বাসিত ব্রাদারহুড নেতৃত্বকে যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসনে সহায়তা দেয়া এবং পর্যায়ক্রমে তাদের স্বদেশে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়াস নেয়া হয়েছে। চতুর্থত, ফিলিস্তিনি স্বার্থের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারে যে নেতিবাচক ভাবমর্যাদা সৌদি আরবের সৃষ্টি হয়েছে সেটি পুনরুদ্ধারের জন্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা। পঞ্চমত, রাজপরিবারের ভিন্ন মতের সদস্য ও কোণঠাসা পরিবারগুলোর আস্থা ফেরানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া।
সালমান বাদশাহ ফয়সলের আমল থেকেই সৌদি রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ সংহতির বিষয়াদি দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত যুবরাজ ছিলেন। ফলে রাজপরিবারের সব খুঁটিনাটি বিষয় তার জানা রয়েছে। অন্য দিকে তিনি ছিলেন সৌদি আরবের ফিলিস্তিনের বিষয় দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত যুবরাজ। মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগ বজায় রাখার দায়িত্বও তিনি একসময় পালন করেছিলেন। ফলে ধারণা করা হচ্ছে বাদশাহ সালমান যেভাবে এখন দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে কার্যকরভাবে সক্রিয় হচ্ছেন তাতে তার পক্ষে সৌদি সমাজ ও রাষ্ট্র্রে এর মধ্যে যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালন করা সম্ভব হবে।
তবে বাদশাহ সালমানের একটি বড় দুর্বলতা হলো তার পুত্র মুহাম্মদ বিন সালমানের ব্যাপারে। তিনি এই পুত্রের বেপরোয়া পদক্ষেপ গ্রহণের সামর্থ্যরে মধ্যে পিতা আবদুল আজিজের ছায়া প্রত্যক্ষ করতেন। কিন্তু পিতার সে আস্থা মুহাম্মদ বিন সালমানের ব্যাপারে রক্ষা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে বাদশাহ বড় একটি ধাক্কা খান তার অগোচরে ইস্তাম্বুলের সৌদি মিশনে বিখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাশোগির নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। এই ঘটনার প্রভাব এতটা গভীর হয় যে, সালমানের ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণের পরও পুত্র মুহাম্মদকে ক্ষমতার উত্তরাধিকারের অবস্থানে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। আমেরিকায় বাইডেন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাদশাহ সালমানের সাথে সরাসরি সব যোগাযোগ রক্ষা করছেন। ট্রাম্পের সময় একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যেতে পারলেও বাইডেনের সাথে এমবিএস সরাসরি সাক্ষাৎ পর্যন্ত করতে পারেননি। সর্বশেষ, খালিদ বিন সালমানকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছেন পিতা বাদশাহ সালমান। এই সফরে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয় এবং ক্রাউন প্রিন্সের উত্তরাধিকারের প্রশ্ন নিয়ে কথাবার্তা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।