মাত্র ০.২ ভাগ যেভাবে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে

রাহাত খান রাছি | Jul 13, 2021 09:22 am
মাত্র ০.২ ভাগ যেভাবে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে

মাত্র ০.২ ভাগ যেভাবে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে - ছবি : সংগৃহীত

 

ইসরাইলে ইহুদির সংখ্যা ৫৪ লাখ, অবশিষ্ট প্রায় এক কোটি ইহুদি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে আমেরিকাতে ৭০ লাখ, কানাডাতে ৪ লাখ, ব্রিটেনে ৩ লাখ ইহুদি থাকে। ইহুদিরা মার্কিন জনসংখ্যার মাত্র ২ ভাগ, আর পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.২ ভাগ অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতি ৫০০ জনে একজন ইহুদি! অর্থাৎ সারা বিশ্বের ইহুদিরা জনসংখ্যার দিক দিয়ে ঢাকা শহরের কাছাকাছি ।

৩০০০ বছরের ইতিহাসে ইহুদি সম্প্রদায় থেকে যুগে যুগে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য প্রতিভাবান ব্যক্তি। একেশ্বরবাদী ইব্রাহিমী ধর্মগুলোর মতে হযরত ইব্রাহিম আ.-পরবর্তী একমাত্র হজরত মোহাম্মদ সা. ছঅড়া বাকি সকল নবীই এসেছেন ইহুদি সম্প্রদায় তথা বনি ইসরাইল থেকে এসেছেন।

জ্ঞান, শিক্ষা ও শিল্পের চর্চায় সবসময়ই তারা অগ্রগামী, ইহুদিদের ৮৫ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া। এ কমিউনিটির সদস্যদের হাতে মেডিসিন, ফিজিক্স, কেমিষ্ট্রি, ইকোনোমিক্স, লিটারেচার ও পিস বিভাগে এখন পর্যন্ত ২০০টিরও বেশি নোবেল পুরস্কার এসেছে। যা মোট নোবেল বিজয়ীদের মোটামুটি ৪০ ভাগ। সারা বিশ্বের পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের মূল অভিভাবকও তারা। বর্তমান পৃথিবীর চলমান পুঁজির ৮৫ শতাংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ইহুদিরা।

বিখ্যাত ইহুদিদের মধ্যে আছেন মনুষ্যসৃষ্ট যে মতবাদটি পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলা সেই কমিউনিজমের স্বপ্নদ্রষ্টা সমাজবিজ্ঞানী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক কার্ল মার্কস, বিশ্বের মানুষকে মুগ্ধ করে রাখা যাদুশিল্পী হুডিনি ও বর্তমানে ডেভিড কপারফিল্ড, বিং আর একুশ শতকের শ্রেষ্ঠ দুই বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনস ও স্টিফেন হকিং, শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক প্রফেসর নোয়াম চমস্কি, যাকে প্রদত্ত ডক্টরেটের সংখ্যা আশিটির ও বেশি। লেখকদের মধ্যে আর্থার মিলার, ফ্রানজ কাফকা, জন ষ্টাইনব্যাক যেমন এসেছেন, তেমনি এসেছেন সাইন্স ফিকশান জগতের সবচেয়ে আলোচিত লেখক আইজাক আসিমভ। পৃথিবীর মোট তথ্য প্রবাহের ৬০ ভাগই কোনো না কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিডিয়া গ্রুপের মালিক রুপার্ট মারডোক। তার অধীনে সারা বিশ্বের ১৮৫টি পত্রপত্রিকা ও অসংখ্য টিভি চ্যানেল। ফেসবুক, হোয়াটস্যাপসহ সবচেয়ে বড় সোস্যাল মিডিয়া গ্রুপের মালিক ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ।

পুঁজিবাদী বিশ্বের বাণিজ্যিকব্যবস্থা অর্থ্যাৎ আমেরিকা ইউরোপ তথা বিশ্বের অর্থ, অস্ত্র, খনিজ, ড্রাগস, প্রাকৃতিক সম্পদ, খাদ্য, শিল্প-উৎপাদন ও বহুজাতিক বাণিজ্যব্যবস্থার মূল নিয়ন্ত্রক ইহুদিরা। সারাবিশ্বের মোট প্রযুক্তি, উদ্ভাবনী ও গবেষণাধর্মী কর্মকাণ্ডের অর্ধেকের চেয়ে বেশি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন।

বলা হয়, আমেরিকা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করে, আর আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করে জুইশ কমিউনিটি। মোট জনসংখ্যার ২ ভাগের কম হয়েও ২০ ভাগ বা প্রতি পাঁচজনের একজন আমেরিকান সিনেটর-কংগ্রেসম্যান ইহুদি, তাছাড়া আমেরিকা প্রশাসনের শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়া অন্য গুরুত্বপূর্ণ বা মূল পদগুলো সবসময়ই তাদেরই দখলে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা, আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সেন্ট্রাল রিজার্ভ সিস্টেমসহ আমেরিকা ও ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলো, ব্রিটিশ সরকারি ট্রেজারি বন্ডের ৭৫ ভাগের মালিকানা তাদের। তাছাড়া বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের অর্থের মূল যোগানদাতা রথসচাইল্ড, রকফেলারসহ অন্য প্রভাবশালী বিত্তবান পরিবারগুলোও ইহুদি সম্প্রদায় থেকে এসেছে।

আমেরিকার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে মূলত কর্পোরেট হাউজগুলো । তারা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বানাতে পারে, সরাতে পারে। এসব কর্পোরেট হাউজের দিকে তাকালে দেখা যায়, এদের মালিক কিংবা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম্পানিগুলোর মূল দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী বা চিফ এক্সজিকিউটিভ হলেন কোনো ইহুদি। এ কমিউনিটি বা সম্প্রদায়কে হাতে না-রাখলে ক্ষমতায় টেকা যাবে না। শুধু এ কারণে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যেতে হয়। ঐক্যবদ্ধ ইহুদি ক্ষমতাধর বিলিয়নেয়াররা মিলিতভাবে যেকোনো সময়, যেকোনো ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারেন। সেটা হতে পারে অর্থে, অস্ত্রে কিংবা মিডিয়ায়। তাদের এ শক্তি সামর্থের প্রমাণ তারা বহুবার দিয়েছে ।

কিন্তু সেই ফারাও আমলের মিসর থেকে হিটলারের ইউরোপ আমল পর্যন্ত আড়াই হাজার বছরের অধিক সময়কালে ইহুদিরা তাদের অবিশ্বস্ততা আর ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য কোথাও স্থিত অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। যাযাবরের মতো একস্থান থেকে অন্যত্র ঘুরে বেড়িয়েছে জীবন বাঁচানোর তাগিদে। কিন্তু আড়াই হাজার বছর ধরে চলা যাযাবর জীবনের মাঝে ইহুদিরা তাদের ঐক্য ধরে রাখার শক্তি ও কৌশল অর্জন করেছে। এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে যেখানে ইহুদি পরিবারগুলোর বংশলতিকা বা ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করতে সাহায্য করে। কোনো মেধাবী ইহুদি ছাত্র বা ছাত্রীর পড়াশোনার জন্য চিন্তা করতে হয় না। কমিউনিটির কেউ বিপদে পড়লে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তাদের সম্প্রদায়িক ঐক্য এত অটুট যে কারো পক্ষে তা আন্দাজ ও করা সম্ভব নয়।

‌ঐক্য আর সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে সংখ্যায় অত্যন্ত কম হওয়ার পরও ক্ষুরধার বুদ্ধি, কৌশল ও মেধার বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে নিজেদের বসিয়েছে রেখেছে। আর এগিয়ে চলছে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য 'এক বিশ্বব্যবস্থা'র বাস্তবায়নে। এর জন্য যখন যা করা দরকার তারা করে চলছে। বিশ্বে প্রচলিত সকল ষড়যন্ত্র তত্ত্বের নাটের গুরু হিসেবে তাদেরই নাম ভেসে উঠে। বেশির ভাগ গোপন সংঘের সাথে জড়িয়ে যায় তাদের নাম। ইলুমিনাতি, ফ্রি-ম্যাশন, স্কাল এন্ড বোনস, বিল্ডার্সবার্গ গ্রুপ- সবকিছুর সাথেই জড়িয়ে আছে তাদের নাম। 'এঞ্জেলস এন্ড ডেমন্স' এবং 'দ্যা ভিঞ্চি কোড' সিনেমার মাধ্যমে হাল আমলে পুনরায় আলোচনায় আসে এই গুপ্ত সংঘগুলো। তাছাড়া 'দা প্রটোকলস অফ দা এল্ডারলি যায়ন' নামক পৃথিবীর ক্ষমতা দখলের কুখ্যাত দলিল ইহুদিদের নীলনকশার কথা প্রকাশ করে যা মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে পঠিত ও প্রচারিত ।

প্রচুর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মতে, শক্তিমান সিক্রেট সোসাইটি ইলুমিনাতি মূলত এ বিশ্বের সকল প্রধান ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন ফ্রেঞ্চ বিপ্লবের সূচনা, নেপোলিয়নের ওয়াটারলু যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট কেনেডির গুপ্তহত্যা, প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পদত্যাগ করতে বাধ্যকরণ, কারো কারো মতে টুইন টাওয়ার হামলা, সম্প্রতি সিরিয়া যুদ্ধ প্রভৃতিতেও তাদের হাত রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইন্ধন যোগাতে মূল ভূমিকা পালন করে ইহুদি অস্ত্র ও অর্থ লগ্নী ব্যবসায়ীরা।

বলা হয়ে থাকে, হলিউডের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে ইলুমিনাতি আপনার অবচেতন মনে তাদের বিশ্বাসগুলো ঢুকিয়ে দিচ্ছে, কিংবা আপনাকে ব্রেইনওয়াশ করছে, ডিজনি কার্টুনের মাধ্যমে ইলুমিনাতি শিশুমনে ইলুমিনাতির বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন গ্লোবাল অভিজাত ক্লাবের মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের এজেন্সি। তথা কথিত গ্লোবালাইজেশনের নামে সারা বিশ্বে প্রতিষ্টা করেছে তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভাববলয়। এছাড়াও সারা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণকারী বিল্ডার্সবার্গ গ্রুপ এর উপর ইলুমিনাতির নিয়ন্ত্রন প্রশ্নাতীত।

তাদের লক্ষ্য 'নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার' মতান্তরে 'এক বিশ্ব ব্যবস্থা' ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে সারা বিশ্ব থাকবে ইলুমিনাতির হাতের মুঠোয়। যা ১৯৯১ সালে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের কথা প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়র তার ভাষণে উল্লেখ করলে এ তত্ত্ব তুমুল আলোচনা সৃষ্টি করে। খ্রিস্টান ও মুসলিম ষড়যন্ত্র তত্ত্বমতে, ইলুমিনাতির প্রতীক এক চোখ প্রমাণ করে যে ইলুমিনাতি হলো সেই সংঘ যারা একচোখা দাজ্জালের (কিংবা বাইবেল মতে ৬৬৬ বা অ্যান্টিক্রাইস্ট) আগমনের পথ সুগম করছে, যে দাজ্জাল কিনা একহাতে পৃথিবী শাসন করবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us