ইবনে সিনার চোর ও শাম্মাম কাহিনী
শাম্মাম - ছবি : সংগৃহীত
আরব দেশে এসেছে অথচ শাম্মাম দেখেনি এমন মানুষ প্রকৃতই বিরল। এ দেশে ফলটির চাহিদা সব সময়ই তুঙ্গে থাকে। এ ফলের স্বাদ কেমন, তা কোন সাহিত্যিক কখনো লিখে বোঝাতে পারবে না। বাইরের আবরণ যেমনই হোক না কেন, ভিতরের বর্ণ সোনালি হলুদ। আল্লাহ মানুষকে যদি নিজের গায়ের বর্ণ বাছাই করতে বলতেন, বোধহয় বেশিরভাগ মানুষ শাম্মামের বর্ণকেই অগ্রাধিকার দিত! যাই হোক এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা তাই বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়েই থাকুক!
শাম্মামের সাথে পরিচিত হতে গিয়ে প্রাইমারি স্কুল জীবনে তিক্তকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। সেটি না হয় পাঠকদের শুনিয়ে যাই। ১৯৭৬ সালের দিকের ঘটনা। প্রাইমারি স্কুল জীবনের কোনো এক ক্লাসে কিছু দিনের জন্য, এক প্রবীণ শিক্ষকের কাছ থেকে বিদ্যা নেবার সুযোগ হয়েছিল। দ্রুত-পঠন বইয়ের একটি অংশে, এক চোর ইবনে সিনার শাম্মাম চুরির ঘটনার উল্লেখ ছিল। সবকিছু বুঝলেও শাম্মাম জিনিসটা কী বুঝে আসছিল না। তাছাড়া বইয়ে চোরের হাতে মার্বেলের মতো গোলাকার কিছু একটার ছবি আঁকা ছিল। ছবি দেখেই কৌতূহল বেড়ে গেল, তাই স্যারকে প্রশ্ন করলাম,
স্যার! শাম্মাম কী?
তিনি নিরুত্তর!
আবারো প্রশ্ন, স্যার শাম্মাম কী?
তিনি না শোনার ভান করে, নিজের একটি বই পড়ায় মনোনিবেশ করলেন!
যথারীতি স্যার শাম্মাম কী? এবার স্যারের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল! তিনি ধমক দিয়ে বললেন,
'এই তুই কি মুখ বন্ধ করবিরে, না কইষা একখান থাপ্পড় লাগামো? তুই আন্ধানি, দেখছস না আঁই কোন কথা কইয়ের না, বই হরিয়ের!'
ইত্যবসরে কেউ একজন তদস্থলে হাজির হলেন। তিনি স্যারকে বলে দিলেন। ছাত্রকে ওভাবে ধমক না দিয়ে বলে দেন যে পরে উত্তর দিব। তাছাড়া জানা থাকলে উত্তরটা এখনই দিয়ে দেন,
'আঁর মনও জানইতে চায়, আসলে শাম্মাম জিনিসটা আমি কিয়া!'
স্যার বিরক্ত হয়ে শুধু একটি কথাই বললেন,
'কিভাবে কমু! আঁই কি শাম্মাম এই জনমে দেখছি নি!'
স্যারে দেখে নাই, মুরুব্বি দেখেননি, এমন শাম্মামের কাহিনী বইয়ের পাতায়! আর বেহুদা ছাত্র ধমক খায়। এ ধরণের পড়া আসলে রাখা মোটেই উচিত নয়!
যাই হোক, ক্ষুদ্রভাবে হলেও চলুন শাম্মামের সাথে পরিচিত হয়ে উঠি। এটার মূল আদিবাস অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে, আফ্রিকাতেও প্রচুর পরিমাণে জন্মে। ইংরেজিতে বলা হয় Rock Melon, কখনো Sweet Melon হিসেবেও পরিচিতি আছে। শাম্মামের কয়েকটি প্রজাতি আছে। সবগুলোই মিষ্টি ও সুখময় ঘ্রাণ যুক্ত।
শাম্মামের দূর সম্পর্কীয় একটি আত্মীয় আছে বাংলাদেশে। যার নাম বাঙ্গি কিংবা ফুটি। বাঙ্গিকে কেউ লুকিয়ে রাখতে পারে না, তার সুখকর ঘ্রাণের কারণে। তবে, বাঙ্গির ঘ্রাণ অনেক মিষ্টি হলেও খেতে তেমন মিষ্টি নয়। কিন্তু গুণাগুণের বিচারে বাংলাদেশের অন্য সকল মিষ্টি ফলের তুলনায় ফুটির স্থান অনন্য।
ফুটি আর শাম্মাম আত্মীয় হলেও, শাম্মামের ক্ষেত্র কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত। এটা ঘ্রাণেও যেমন, স্বাদেও তেমন। গরমকালে গলা দিয়ে ঢোকার সময় পুরো কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে উঠে। পিপাসা নিবারণ করে। দুর্বলতা দূর করে। বর্তমানে আরবদেশের কিছু অঞ্চলে, ইরান, ইরাক, জর্ডান, লেবাননে প্রচুর হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলসহ অনেক জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কৌতূহলী যুবক এটার চাষ করার চেষ্টা করছে।